সংক্ষিপ্ত


শুক্রগ্রহে (Venus) কি প্রাণের অস্তিত্ব আছে? কী জানা গেল সাম্প্রতিকতম গবেষণায়?

গত বেশ কয়েক বছর ধরেই প্রাণের অনুসন্ধান চলছিল মঙ্গল (Mars) গ্রহে। এলন মাস্ক (Elon Musk) তো বলেই দিয়েছেন, পৃথিবীবাসীকে নিয়ে তিনি মঙ্গলেই পাড়ি দিতে চান। তবে, ২০২১ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের চর্চায় ছিল শুক্রগ্রহে (Venus) প্রাণের অস্তিত্ব নিয়েও। মজার বিষয় হল, মঙ্গলগ্রহে প্রাণ থাকাটা যতটাই সম্ভব, তার থেকে বহুগুণে অসম্ভব শুক্রগ্রহে প্রাণ থাকাটা। তা সত্ত্বেও, বছর শেষের এক গবেষণা যুক্তি-তত্ত্ব দিয়ে দাবি করেছে, শুক্রগ্রহে সম্ভবত প্রাণ রয়েছে, মেঘের আড়ালে লুকিয়ে। 

কেন শুক্র গ্রহে জীবন ধারণ অসম্ভব বলে মনে করা হয়? বস্তুত তার এক নয়, অনেক অনেক কারণ রয়েছে। প্রথমত, শুক্রের অবস্থান গোল্ডি লক জোনে নয়, সূর্যের অনেকটাই কাছাকাছি। তাই শুক্র-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৪৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় সীসার মতো ধাতুও গলে যায়। এছাড়া, শুক্রের বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব অনেক বেশি, তাই শ্বাস নেওয়া অসম্ভব। সেই সঙ্গে এই গ্রহের মেঘমণ্ডল সালফিউরিক অ্যাসিডে পূর্ণ থাকে। এর থেকে যে বৃষ্টি হয়, তার একেকটি ফোঁটা যদি মানুষের গায়ে পড়ে, ত্বক-মাংস পুড়ে গিয়ে শরীরে গর্ত তৈরি হয়ে যাবে। এর বাইরেও প্রাণ থাকতে না পারার অনেক কারণ রয়েছে।

এত কিুছু সত্ত্বেও শুক্রে প্রাণের সন্ধান করা হয়েছে, শুধুমাত্র শুক্রের মেঘে ফসফিন নামক একটি গ্যাসের উপস্থিতির কারণে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, কোনও অজৈব প্রক্রিয়ায় এই গ্যাস তৈরি করা যায়, এমনটা তাঁদের জানা নেই। এর পাল্টা অপর একটি গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, শুক্র গ্রহে জল ছাড়া প্রাণের অস্তিত্ব থাকা আদৌ সম্ভব নয়। এই নিয়ে বিতর্ক চলতে চলতেই সকলের মাথায় আসে ১৯৭০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেনেরা ৮ শুক্র গ্রহ অভিযানের কথা। সেই অভিযানে শুক্রের মেঘে প্রচুর পরিমাণে অ্যামোনিয়া গ্যাসের উপস্থিতির সন্ধান মিলেছিল। 

শিল্পীর কল্পনায় শুক্রগ্রহের পৃষ্ঠ

সম্প্রতি ভেনেরা ৮ এবং অতীতের অন্যান্য শুক্র গ্রহ অভিযানে সংগৃহিত তথ্যাবলী নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, এবং ব্রিটেনের কার্ডিফ এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। তাঁরা শক্র গ্রহের মেঘের মধ্যে একাধিক অস্বাভাবিক রাসায়নিক স্বাক্ষর খুঁজে পেয়েছেন। এই অস্বাভাবিকতাগুলি ছিল কিছু অ-গোলাকার কণা, যার মধ্যে অক্সিজেন, সালফার ডাই অক্সাইড এবং জলীয় বাষ্পের অপ্রত্যাশিত বেশি মাত্রায় উপস্থিত ছিল। এই রাসায়নিক স্বাক্ষর তৈরি হযতে পারে, একমাত্র যদি শুক্রের মেঘে প্রচুর পরিমাণে অ্যামোনিয়া তাকে তাহলেই। কিন্তু শুক্র গ্রহে এত বেশি পরিমাণে অ্যামোনিয়া এল কোথা থেকে? 

বড় বড় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে প্রচুর অ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি হয়। কিন্তু, তাতেও এত অ্যামোনিয়া গিয়ে মেঘে জমা হতে পারে না। এখানেই বিজ্ঞানীরা প্রাণের উপস্থিতির সন্দেহ করছেন। তাঁরা বলছেন, এই রহস্যের অন্য যে ব্যাখ্যা হতে পারে, তা হল শুক্রগ্রহে প্রাণ রয়েছে। আর তারাই ওই বিপুল পরিমাণ অ্যামোনিয়া তৈরি করছে। এই গবেষণাপত্রটি গত ১৮ ডিসেম্বর, ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি ফর সায়েন্সেসে প্রকাশিত হয়েছে।

শুক্রের মেঘে উপস্থিত ফসফিন নামক একটি গ্যাস

তবে, বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, শুক্র গ্রহে যদি সত্যিই প্রাণের অস্তিত্ব থাকে, তাহলে তা আমাদের পরিচিত কোনও জীব বা উদ্ভীদের মতো হবে না, তার থেকে অনেকটাই অন্যরকম হবে। চেহারাতেও, চরিত্রেও। গবেষণাপত্রটির অন্যতম সহ-লেখিকা সারা সিগার জানিয়েছেন, আমরা জানি শুক্রে প্রাণের অস্তিত্ব থাকা অসম্ভব। কিন্তু এই গ্রহে সম্ভবত কিছু অন্য ধরণের প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে। তারাই শুক্রের পরিবেশকে পরিবর্তিত করে তাকে তাদের বাসযোগ্য করে তুলছে। সেই কারণেই শুক্রের মেঘে ওই অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে। 

এ গেল তাত্ত্বিক দিক। শুক্রে প্রাণ আছে কি নেই, তা এবার হাতে কলমে দেখার পালা। রকেট ল্যাব নামে, ক্যালিফোর্নিয়ার একটি বেসরকারী মহাকাশ চর্চা সংস্থা, ২০২৩ সালেই শুক্রগ্রহে একটি মহাকাশয়ান পাঠাতে চলেছে। এই গবেষণার প্রস্তাব সেই অভিযানে খতিয়ে দেখা হবে, সন্ধান চালানো হবে অন্যরকম প্রাণের।