সংক্ষিপ্ত
মার্কিন কর্মকর্তা ডোনাল্ড লু বলেছেন ভারতের সঙ্গে দূরত্ব মেটানোর সবরকম চেষ্টা করা হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে একাধিক আলোচনাও শুরু হয়েছে। সমস্যা সমাধানে সবদিক খতিয়ে দেখা হবে।
ইউক্রেনের রাশিয়ার আগ্রাসনের (Russia-Ukraine war) কারণে ইতিমধ্যেই রাশিয়ার ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক (Indo-Russian Relations) রয়েছে। বেশ কিছু চুক্তিও রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে এই বন্ধুত্বের জন্য কী ভারতকেও ফল ভুগতে হতে পারে? ইতিমধ্যেই তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের ১৩তম দিনে সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন মার্কিন সেনেটর (US Senator)। বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির মুলতুবি মনোনয়নের শুনানির সময় মার্কিন সেনেটর টেড ক্রুজকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এমন খবর রয়েছে যে বাইডেন প্রশাসন বিশ্বের বৃহতত্তম গণতন্ত্র ভারতের বিরুদ্ধে CAATSA নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে। তারই উত্তরে টেড ক্রুজ বলেন এজাতীয় কোনও নিষেধাজ্ঞা যদি ভারতের ওপর আরোপ করা হয় তাহলে তা হবে , 'অসাধারণভাবে বোকামি'।
ইরান, উত্তর কোরিয়া বা রাশিয়ার সঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে যোগাযোগ রয়েছে বা লেনদেন রয়েছে এমন কোনও দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার জন্য মার্কিন প্রশাসনের দেশীয় আইন, কাউন্টারিং আমেরিকাস অ্যাডভারসারিজ থ্রু সাংকশন অ্যাক্ট যা CAATSAএর লাগু করা জরুরি। এটি হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কঠোর আইন, যা ২০১৪ সালে রাশিয়ার ওপর আরোপ করা হয়েছিল। সেই সময় রাশিয়া ক্রিমিয়াকে একপ্রকার জোর করে নিজের দেশের অন্তর্ভুক্ত করেছিল। পরবর্তীকালে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও মস্কো হস্তক্ষেপ করেছিল-এই অভিযোগ তুলে তা নতুন করে আরোপ করা হয়েছিল।
কিন্তু এর মাধ্যমে ভারতের ওপর যে এখনই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে না, তা প্রায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন মার্কিন সেনেটর। কিন্তু তিনি বলেন বাইডেন প্রশাসনের অধীনে গত এক সপ্তাহ ধরে ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। কিন্তু এখনও ভারত আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ মিত্র দেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক আরও উন্নতি করবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। কিন্তু বাইডেনের নেতৃত্বে আগামী দিনে ভারত মার্কিন সম্পর্ক উন্নত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
রাশিয়ার ইউক্রেনে আগ্রাসনের নিন্দা করেও রাষ্ট্র সংঘের সাধারণ পরিষদে ভোট দানে বিরত ছিল ভারত। এদিন সেই প্রসঙ্গেও আলোচনা করেন মার্কিন সেনেটর। তিনি বলেন ভারতই একমাত্র দেশ নয়, আরও অনেক দেশই ভোটদানে বিতর ছিল। কিন্তু ভারত রাষ্ট্র সংঘে রাশিয়ার সমালোচনা করেছে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার কথাও বলেছে বল জানিয়েছেন তিনি। যদিও রাষ্ট্র সংঘে ভারতের এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট- উভয় সাংসদরাই।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা করে ১৪১টি দেশ রুশ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল। রাশিয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছিল ৩৫টি দেশ। আর ভারতসহ ৫টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল। সেই প্রসঙ্গ তুলে মার্কিন সেনেটর আরও বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটদানের সময় অনুপস্থিত ছিল। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরশাহী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বন্ধু।
অপর মার্কিন কর্মকর্তা ডোনাল্ড লু বলেছেন ভারতের সঙ্গে দূরত্ব মেটানোর সবরকম চেষ্টা করা হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে একাধিক আলোচনাও শুরু হয়েছে। সমস্যা সমাধানে সবদিক খতিয়ে দেখা হবে।
ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমস্যা শুরু হয় ২০১৮ সাল থেকে। সেই সময় ভারত রাশিয়ার থেকে পাঁচ ইউনিট S-400 এয়ার ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেম কেনার জন্য ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার চুক্তি করেছিল। রাশিয়ার সঙ্গে এই চুক্তিতে আপত্তি জানিয়েছিল আমেরিকা। কিন্তু আমেরিকার কথা অগ্রাহ্য করেই ভারত-রাশিয়া চুক্তিবদ্ধ হয়। সেই মিসাইল সিস্টেম ইতিমধ্যেই ভারতে সরবরাহ করতে শুরু করেছে রাশিয়া। এই একই মিসাইল সিস্টেম রাশিয়ার থেকে কেনার জন্য তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে আমেরিকা। তাই ভারতের ওপরও আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে বলেও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।