সংক্ষিপ্ত

অস্ত্রোপচারের আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডেভিড বলেছিলেন, "হয় আমি মরে যাব আর নয়তো আপনারা এই প্রতিস্থাপন করুন। আমি বাঁচতে চাই। আমি জানি এটা অন্ধকারের মধ্যে তীর ছোড়ার মতো বিষয়, কিন্তু এটাই আমার শেষ ইচ্ছা।"

চিকিৎসা ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলাই চলে। কারণ মানুষের শরীরে শূকরের (Pig) হৃদযন্ত্র সফলভাবে প্রতিস্থাপন (Heart Transplant) করা সম্ভব কিনা তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছিল। অবশেষে এক রোগীর প্রাণ বাঁচানোর জন্য তাঁর শরীরে শূকরের হৃদযন্ত্র (Pig Heart) প্রতিস্থাপন করলেন আমেরিকার কয়েকজন চিকিৎসক। অস্ত্রোপচারের তিনদিন পর ওই ব্যক্তি ভালো আছেন বলে হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে।  

ডেভিড বেনেট (David Bennett)। বয়স ৫৭ বছর। বেশ কিছু দিন ধরেই তাঁর হৃদযন্ত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সেই সমস্যা দূর করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন মেরিল্যান্ড হাসপাতালের (Maryland hospital) চিকিৎসকরা। একাধিক পরীক্ষাও করা হয়েছিল। কিন্তু, কোনও কিছুতেই লাভ হয়নি। তাই বাঁচার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন ডেভিড। অবশেষে অন্ধকারে তীর ছোড়ার মতো তাঁর শরীরেই শূকরের হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। গোটা বিশ্বে এক আগে মানুষের শরীরে কখনও শূকরের হৃদযন্ত্র লাগানো হয়নি। ফলে অস্ত্রোপচার কতটা সফল হবে তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু, যেখানে তাঁদের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছিল সেখানে এই শেষ চেষ্টা করতে দেখতে চেয়েছিলেন তাঁরা। 

আরও পড়ুন- ডেল্টার থেকে ১০৫ শতাংশ শক্তিশালী ওমিক্রন, নতুন গবেষণা রিপোর্টে উদ্বেগ

সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই ডেভিডের পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি জানানো হয়। আসলে প্রত্যেকেই তাঁর বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। ফলে এই পরীক্ষায় তাঁদের কোনও অমত ছিল না। অবশেষে পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজে ব্যবহার হওয়া শূকরের হৃদযন্ত্র লাগানো হয় ডেভিডের শরীরে। এ প্রসঙ্গে ডেভিডের ছেলে জানিয়েছেন, আসলে তাঁর বাবার বাঁচার আশা একেবারেই ছিল না। প্রতিস্থাপন করা না হলে তাঁর বাবার মৃত্যু হত। তাই শেষ চেষ্টা করতে চেয়েছিলেন চিকিৎসকরা। 

আর অস্ত্রোপচারের আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডেভিড বলেছিলেন, "হয় আমি মরে যাব আর নয়তো আপনারা এই প্রতিস্থাপন করুন। আমি বাঁচতে চাই। আমি জানি এটা অন্ধকারের মধ্যে তীর ছোড়ার মতো বিষয়, কিন্তু এটাই আমার শেষ ইচ্ছা।"

তবে অস্ত্রোপচারের তিন দিন পর এখন বেশ সুস্থই রয়েছেন ডেভিড। তা সত্ত্বেও এই মুহূর্তে তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে গবেষকরা জানিয়েছেন, মানুষ ও শূকরের হৃদযন্ত্রের গঠন (অ্যানাটমি ও ফিজিওলজি) অনেকটাই এক। এই দুই প্রাণীর শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায়ও অনেকটা এক। সেই কারণেই শূকরের দেহাংশ মানুষের শরীরে সচল থাকার সম্ভাবনা প্রবল। এই প্রতিস্থাপনের ফলে চিকিৎসাক্ষেত্রে এক নতুন পথ খুলে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন- আতঙ্ক বাড়িয়ে এবার এল 'Deltacron', উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরা

প্রতিস্থাপনের জন্য দান করা মানব অঙ্গের অনেক ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতির জন্য অনেক সময় হৃদযন্ত্র বা কিডনি প্রতিস্থাপন করাও সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে কীভাবে প্রাণীদের অঙ্গ মানব শরীরে ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে পরীক্ষা চলছিল। আর এই অস্ত্রোপচার যদি সফল হয় তাহলে চিকিৎসা ক্ষেত্রকে এক নতুন দিশা দেখাবে বলে আশাবাদী গবেষকরা।