সংক্ষিপ্ত


চার দফা ভোটগ্রহণ হয়ে গিয়েছে

তারপর কৌশল সামান্য বদলালো বিজেপি

জেলার প্রচার কৌশল শহরে চলবে বলেই মনে করা হচ্ছে

শহুরে ভোারদের মন জয়ে কোন হাতিয়ার ব্যবহার করছে তারা

চার দফা ভোটগ্রহণ হয়ে গিয়েছে। ভোট ঘোষণারও প্রায় মাস ছয়েক আগে থেকে বঙ্গে ভোট প্রচার করা শুরু করে দিয়েছিলেন অমিত শাহ, জেপি নাড্ডারা। ভোটের সময় নিত্যযাত্রী হয়ে উঠেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। এতদিন জেলাতেই ভোট চলছিল। বিজেপি নেতাদের প্রচারে 'পিসি-ভাইপোর দুর্নীতি', 'তুষ্টিকরণ'এর মতো অভিযোগ বেশি ছিল। তবে আস্তে আস্তে ভোট আসছে কলকাতা ও তার আশপাশের অংশে। সেখানে কড়া ডানপন্থী রাজনীতির বিশেষ কদর নেই। তাই কৌশল সামান্য বদলাচ্ছে বিজেপি।

কলকাতা ও তার আশপাশের অংশে মূলত শিক্ষিত ভদ্র বাঙালী মধ্যবিত্ত শ্রেনীর বাস। ৩৪ বছর ধরে তাঁরা বাম শিবিরের সঙ্গে ছিলেন। তারপর ২০১১ সালে সেই ভোটের বেশিরভাগটাই ঘুরে গিয়েছিল মমতার দিকে। সেই সময়ে  আলোচনা শুরু হয়েছিল, মমতাই প্রকৃত বামপন্থী কি না, তাই নিয়ে। ডানপন্থী রাজনীতিকে তাঁরা বিশেষ পছন্দ করেন না বললেই চলে। তাই তুষ্টিকরণ, শীতলকুচি, মিনি পাকিস্তানের মতো প্রচার এই এলাকায় বিশেষ পালে বাতাস পাবে না।

এই বিষয়টা উপলব্ধি করেই, এই এলাকায় প্রচারের জন্য মূলত দুটি বার্তাকে হাতিয়ার করেছে গেরুয়া শিবির। এক, আইনশৃঙ্খলার অবনতির কু-প্রভাব পড়ছে বাঙালি ভদ্র সমাজেও এবং দুই অদূর ভবিষ্যতে কলকাতা ও তার আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদেরও ভুগতে হবে সীমান্ত-অনুপ্রবেশ সমস্যায়। আর এই দুই বার্তা নিয়েই কলকাতা ও তার আশপাশের ৪০টিরও বেশি বিধানসভা এলাকায় পথসভা, বুদ্ধিজীবিদের সঙ্গে সভা আয়োজন করছে বিজেপি। যার সূচনা হয়েছে মঙ্গলবার, বিধাননগরে অমিত শাহ এবং নিউটাউনে জেপি নাড্ডার সভা দিয়ে।

কলকাতার অন্যতম অভিজাত এলাকা হিসাবে পরিচিত সল্টলেক বা বিধাননগর। আর তা গা ঘেসেই তৈরি হয়েছে আরও এক অভিজাত উপনগরী নিউটাউন। দুটি আসনেই শনিবার ভোট গ্রহণ। তার আগে মঙ্গলবার সল্টলেকে অমিত শাহ দাবি করেন, অদূর ভবিষ্যতেই কলকাতাতেও প্রবেশ করবে সীমান্ত-অনুপ্রবেশের সমস্যা। অন্যান্য দলগুলি এই অনুপ্রবেশকারীদের ভোট ব্যাঙ্ক বলে মনে করে। তাই একমাত্র বিজেপিই এর সমাধান করতে পারে। অন্যদিকে, নিউটাউনে, নাড্ডা বললেন, আইনের শাসন না থাকাতেই বাংলায় বৌদ্ধিক সাধনা এবং বৌদ্ধিক আলোচনা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। চিন্তা-চেতনাকে পরাধীন করে রাখা হয়েছে। বাংলায় আইনের শাসন আনতে বিজেপিকে চাই।

শুধু এই দুই বার্তাই নয়, শহুরে ভোটটারদের মন জয়ে, এই সভা-সমিতিতে তুলে ধরা হচ্ছে , রাজ্য ও কলকাতা এবং তার আশপাশের উপনগরীগুলির বিকাশের জন্য বিজেপি কী ভাবনা চিন্তা করছে। কী কী প্রকল্প নেওয়া হতে পারে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য। পাশাপাশি চাকুরিজীবীদের জন্য সপ্তম বেতন কমিশন বাস্তবায়ন, শিক্ষকদের মজুরির জন্য একটি নতুন কমিশন স্থাপনার মতো আশ্বাসও দেওয়া হচ্ছে। আর এইসব সভায় বিদেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপস্থিত থাকছেন, বিদেপির শহুরে বুদ্ধিজীবী মুখ স্বপন দাশগুপ্ত।

২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কলকাতা জেলার ১১ টি আসনের সবকটিতেই জয় পেয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের নিরিখে এই ১১টি আসনের মধ্যে তিনটিতে এগিয়ে গিয়েছিল  বিজেপি। এবার সেই তিনটির সঙ্গে কলকাতার আরও তিনটি আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছে গেরুয়া শিবির। সেইসঙ্গে কলকাতার আশপাশের এলাকাগুলিতেও পদ্ম ফোটাতে মরিয়া গেরুয়া শিবির। আর তাই শেষ কয়েক দফার নির্বাচনের জন্য সামান্য কৌশল বদল করা হল। কতটা কাজ দেয় এই বদল ২ মে তারিখেই স্পষ্ট হবে।