সংক্ষিপ্ত
- নির্বাচনের পরবর্তী হিংসায় বাংলা
- রোজই কোনও না কোনও এলাকা থেকে হিংসার খবর আসছে
- এমনকী হিংসা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করছেন রাজ্যপালও
- এমন এক পরিস্থিতিতে সামনে এল ভয়ানক ঘটনা
অশীষ মণ্ডল, প্রতিনিধি- রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে এবার আছাড় এক দুই বছরের শিশুকন্যাকে। নৃশংস এই ঘটনা বীরভূমের রামপুরহাট থানার হস্তিকাঁদা গ্রামে। নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই রাজনৈতিক হিংসায় তপ্ত বাংলা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার হিংসা প্রতিরোধে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এমনকী, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে শপথগ্রহণের দিনই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু, দুষ্কৃতীরা যে এতে বাগে আসছে না তা পরিস্কার। অভিযোগ, বিজেপি করা এবং নির্বাচনে বিজেপি-র হয়ে প্রচার করার জন্য হস্তিকাঁদা গ্রামে শনিবার বিকেলে জগন্নাথ ঘোষের বাড়িতে হামলা হয়। আর এই হামলাতে দুষ্কৃতিদের নৃশংসতার শিকার হয় জগন্নাথের দুই বছরের ভাইঝি। হাতে-পায়ে প্রবল আঘাত পেলেও এখন সে সুস্থ আছে বলে খবর।
দেখুন ভিডিও- নন্দীগ্রামের মানুষের দুর্দশা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন রাজ্যপাল
জানা গিয়েছে, শনিবার বিকেলে হস্তিকাঁদা গ্রামে জগন্নাথ ঘোষের বাড়ির সদরে প্রথমে হামলা করে দুষ্কৃতীরা। পাথর ছুঁড়ে ছুঁড়ে সদর দরজা ভেঙে দেওয়া হয় বলে জগন্নাথ ঘোষের অভিযোগ। এরপর বাড়িতে ঢুকে এলোপাথাড়িভাবে ভাঙচুর চালায় দুষ্কৃতীরা। অভিযোগ, জগন্নাথকে না পেয়ে মারধর করা হয় পরিবারের লোকেদেরও। এরপর জগন্নাথের উপর বদলার রোষ মেটাতে আঁছাড় মারা হয় জগন্নাথের দুই বছরের ভাইঝিকে। জগন্নাথের ভাইঝি মাটিতে এইভাবেই বেশকিছুক্ষণ পড়েছিল। এত হিংস্রতার মানে কোনওভাবেই বোধগম্য হচ্ছিল না একরত্তির শিশুটির। বীরভূমের প্রতিনিধির পাঠানো সেই ছবি এশিয়ানেট নিউজ বাংলার কাছে থাকলেও তা প্রকাশ করা হচ্ছে না। কারণ, নৃশংসতার এই ভয়াবহতা ওই শিশুর মুখে এতটাই প্রবল যে তা সমাজের মননে এক কষাঘাত তৈরি করবে।
দেখুন ভিডিও- প্রকাশ্যে কণিষ্ক পন্ডাকে তৃণমূল নেতার হুমকি, প্রাণ দিতে প্রস্তুত, জবাব দিলেন কনিষ্ক
অভিযোগ, দুষ্কৃতীদের সংখ্যা ছিল ৩। সকলেই মদ্যপ অবস্থায় ছিল। অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা সমানে জগন্নাথকে পেলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দিচ্ছিল। আরও অভিযোগ যে, দুষ্কৃতীদের দলের যে নেতৃত্ব দিচ্ছিল সে এলাকায় মিঠু ঘোষ নামে পরিচিত। এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেস আশ্রিত এক কুখ্যাত দুষ্কৃতী হিসাবেই তার পরিচিতি বলেও জানিয়েছে জগন্নাথ ঘোষ। প্রাণনাশের ভয়ে ইতিমধ্যেই বাড়ি ছাড়া জগন্নাথ। আত্মগোপনের স্থল থেকেই তিনি অভিযোগ করেছেন, মিঠুর সঙ্গে অষ্টম ঘোষ ও বাপন ঘোষ নামে আরও দুই জন ছিল। এরাও তৃণমূল কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী বলে এলাকায় পরিচিত। জগন্নাথের আরও অভিযোগ, নির্বাচনের নির্ঘণ্ঠ ঘোষণার পর থেকেই তাঁকে প্রাণে মেরে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছিল মিঠুরা। পুলিশকে বিষয়টি জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেছেন জগন্নাথ।
দেখুন ভিডিও- বাংলা বাংলাই থাকবে, নবান্নে বৈঠকে নতমস্তকে নমস্কার জানালেন মমতা
জগন্নাথ জানিয়েছেন, ভাইঝিকে মাটিতে আঁছাড়় মেরে ফেলতেই বাড়ির লোকজন চিৎকার শুরু করে দিয়েছিল। তা শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। এরপরই মিঠু ঘোষের নেতৃত্বে হামলাকারী দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন জগন্নাথ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে রামপুরহাট থানার পুলিশ আসে। পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও এখনও অভিযুক্তদের কাউকেই আটক করা যায়নি। রামপুরহাট বিধানসভায় বিজেপি-র প্রার্থী হয়েছিলেন শুভাশিস চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, হস্তিকাঁদা গ্রামে তাঁদের কর্মী ও সমর্থকদের উপরে নিয়ত হামলা করছে তৃণমূল কংগ্রেস। জগন্নাথকেও একাধিকবার প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই বাড়ি ছাড়া জগন্নাথ। অন্যদিকে, হস্তিকাঁদা গ্রাম যে পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে সেই কাষ্টগড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান মণিমালা ঘোষ দাবি করেছেন, মিঠু-র সঙ্গে তাঁর দলের কোনও সম্পর্ক নেই। সারাক্ষণ মত্ত অবস্থায় এলাকায় গণ্ডগোল করে বেড়ায়। জগন্নাথের বাড়িতে হামলার ঘটনাকে পারিবারিক বলেও দাবি করেন মণিমালা।