সংক্ষিপ্ত
- অষ্টম দফা নির্বাচনে নজর বীরভূমে
- মোতায়ের করা হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী
- নজরবন্দি তৃণমূলের অনুব্রত মণ্ডল
- মূল প্রতিপক্ষ দুধকুমার অন্তরালে
বীরভূমের ভোট মানেই অনুব্রত মণ্ডল। নির্বাচন কমিশনের নজরবন্দি হয়েও তিনি রীতিমত দাপটের সঙ্গেই রয়েছেন জেলার ভোটে। কিন্তু একটা সময় এই জেলায় তাঁরই মূল প্রতিপক্ষ দুধকুমার মণ্ডল মহারণের দিন অনেকটা উদাসীন রইলেন। শুধু আজ, অর্থাৎ অষ্টম দফা ভোটের দিনেই নয়। গোটা বিধানসভা ভোট প্রক্রিয়াতেই তাঁকে নিস্পৃহ দেখা গেল। যদিও লোকসভা নির্বাচনেও তাঁর গুরুত্ব ছিল। তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়ের মোকাবিলা করেছিলেন তিনি। এক লক্ষের কিছু কম ভোটে হেরেছিলেন। কিন্তু তারপর থেকেই গেরুয়া শিবিরে কিছুটা কোনঠাসা দুধকুমার।
স্বামীর মৃত্যুর জন্য দায়ি নির্বাচন কমিশন, খুনের অভিযোগ দায়ের তৃণমূল প্রার্থীর স্ত্রীর ...
চলতি বিধানসভা নির্বাচনে দল একাধিক সাংসদকে টিকিট দিয়েছে। লোকসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থীদেরও ভোট লড়াই করতে নামিয়েছে। কিন্তু শিকে ছেঁড়েনি দুধকুমারের। দলের অন্দরেও তেমন কোনও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নেই তিনি। অথচ এই রাজ্যের দীর্ঘ দিনের গেরুয়া শিবিরের সদস্য তিনি। ১৯৮২ সাল থেকেই সঙ্ঘের সঙ্গে যুক্ত তিনি। ১৯৯১ সালে বিজেপিতে যোগ দেন। দুবার ময়ূরেশ্বর পঞ্চায়েতের প্রধান। পঞ্চায়েত সমিতিরও সদস্য হন তিনি। লোকসভা নির্বাচনে জিততে না পারলেও বিজেপির ভোট বাড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন দুধকুমার মণ্ডল। বীরভূম জেলাতেই বিজেপির সংগঠন শক্ত করার তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। জেলা সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছিলেন দুধকুমার। কিন্তু এখন সেসব অতীত। অভিমানী দুধকুমার দুরে সরে গেছেন বিজেপি থেকে। এখন প্রশ্ন দুধকুমারের এই নীরবতা বিজেপির পক্ষে কতটা সুবিধে হবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ভোটের আগের দিনেই করোনামুক্ত কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী, মুর্শিদাবাদ কী রক্ষা করতে পারবেন ...
মাখরা গ্রাম। বীরভূমের এই গ্রামকে কেন্দ্র করেই ২০১৪ সালে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল রাজ্যরাজনীতি। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন বিজেপি নেতা দুধকুমার মণ্ডল। আর রাতারাতি সংবাদ শিরোনামে চলে এসেছিলেন মাখরা। এই গ্রামের প্রথম বিজেপি কর্মী বলে পরিচিত তৌসিফ শেখের মৃত্যু হয়। তারপর এই গ্রামেই আসে বিজেপির প্রতিনিধি দল। কিন্তু সেই সময় রাজ্যে বিজেপির সংগঠন তেমন শক্তিশালী ছিল না। কিন্তু পরিচিতি বা জনপ্রিয়তার দিকদিয়ে বিজেপির থেকে এদিয়ে ছিলেন দুধকুমার। এলাকা দখল ঘিরে অনুব্রত-দুধকুমারের লড়াই ছিল প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। মাখরা গ্রামের গণ্ডি ছাড়িয়ে পাড়ুই, লাভপুর নানুরসহ বিস্তীর্ণ এলাকায়। সেই সময় অনুব্রত মণ্ডলকে জোর টক্কর দিয়েছিলেন দুধকুমার মণ্ডল।
দেশীয় টিকার পক্ষে সওয়াল করে রাহুলকে তুলোধনা, টিকা কর্মসূচিতে কংগ্রেস অসফল বলে তোপ বিজেপি নেতার ...
দুধকুমার ঘনিষ্টদের মতে তাঁর এই উত্থান মেনে নিতে পারেনি রাজ্য নেতৃত্ব। তৎকালীন বিজেপি সভাপতি রাহুল সিনহার সঙ্গে তাঁর বিবাদ ছিল প্রকাশ্য। সংঘ ঘনিষ্ট দিলীপ ঘোষ বিজেপির রাজ্যসভাপতি হওয়ার পর দুধকুমারের ঘনিষ্টরা আশা করেছিলেন রাজ্যরাজনীতিতে গুরুত্ব বাড়বে তাঁদের প্রিয় নেতার। কিন্তু তেমনটা হয়নি। তাই গুরুত্বপূর্ণ ২০২১ সালের নির্বাচনে কিছুটা হলেও অন্তরালেই থেকে গেলেন একটা সময় বিজেপির দাপুটে নেতা দুধকুমার মণ্ডল।
অন্যদিকে সম্পূর্ণ উল্টো ছবি দুধকুমারের প্রধান প্রতিপক্ষ অনুব্রত মণ্ডলের ক্ষেত্রে। সিবিআই আয়কর দফতরের নোটিশ পাওয়ার পরেই তাঁর পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচন কমিশন নজরবন্দি করার আগেই অনুব্রতকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। আর দলনেত্রীর হাত মাথায় থাকায় দাপটের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন অনুব্রত। বর্তমানে বীরভূমের রাজনৈতিতে তাঁর তেমন কোনও শক্তিশালী প্রতিপক্ষ নেই বললেও চলে।
অষ্টম দফা নির্বাচনে রাজ্যের মানুষ যেমন চোখ রেখেছে বীরভূমের দিকে তেমনই নির্বাচন কমিশনও বিশেষ নজর দিয়েছে এই কেন্দ্রে। অষ্টম দফা নির্বাচনে রাজ্যে মোতায়েন করা হয়েছে ৭৫৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। যার মধ্যে শুধুমাত্র বীরভূমে মোতায়েন করা হয়েছে, ২২৪ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। নজরবন্দি করা হয়েছে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে। কিন্তু তারপরেই সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ভোট হয়নি এই জেলায়। সকাল থেকেই বিক্ষিপ্ত অশান্তির সাক্ষী থেকেছে বীরভূম।