সংক্ষিপ্ত

  • তৃণমূলর স্বাস্থ্য স্বাথীর বিরুদ্ধে সরব বিজেপি 
  • রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ স্বাস্থ্য় স্বাথী নিয়ে 
  • স্বাস্থ্যতে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ 
  • পাল্টা আয়ুষ্মান প্রকল্প নিয়ে প্রচার 

শমিকা মাইতি, প্রতিনিধি, ভোটের প্রচারে তৃণমূলের অস্ত্র স্বাস্থ্য সাথীকে ব্যুমেরাং করতে চাইছে বিজেপি। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড ঝুলিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মানুষের ভোট কিনছেন বলে অভিযোগ তাদের। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসা জননেতা শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের জন্য যে টাকা দরকার, তা নেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের কাছে। ভোটের বাজারে সাধারণ মানুষকে বোকা বানাতে ভাঁওতাবাজি করছেন মমতা। এদিকে, স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ তুলে ক্যাগকে দিয়ে অডিট করানোর দাবিতে সম্প্রতি একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে হাইকোর্টে। বিজেপির ট্যুইটার হ্যান্ডেলে এটির উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের নামে ১৮৯ কোটির দুর্নীতিতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এই প্রকল্পে বাংলার মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে পিসি। কিন্তু বাংলার মানুষ আর প্রতারিত হবেন না, পিসির পরাজয় নিশ্চিত।’ 

টালিগঞ্জ থেকে সিঙ্গুর, 'সেয়ানে সেয়ানে' লড়াই হবে যেসব বিধানসভা কেন্দ্রে ...


স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পটি ২০১৬ সালে চালু হয়। এই প্রকল্পে একটি পরিবার প্রতি বছর ৫ লক্ষ টাকা অবধি বিনামূল্যে ক্যাশলেশ চিকিৎসা পেতে পারে। প্রতি তিন বছর অন্তর কার্ড পুনর্নবীকরণ করা যাবে। আগে দারিদ্রসীমার নীচে থাকা লোকজন ও সরকারি অসংগঠিত ক্ষেত্রে চাকুরেদের জন্য এই সুবিধা উপলব্ধ ছিল। ২০২১ বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে মমতা ঘোষণা করেন, সমস্ত রাজ্যবাসীকে সরকারি এই স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা হবে। ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পে নাম নথিভুক্তের কাজ শুরু হয়।  রাজ্যের দাবি, এখনও পর্যন্ত ২ কোটির বেশি পরিবার স্বাস্থ্য সাথীর আওতায়  এসেছে। গত ডিসেম্বর থেকে ৭৬ লক্ষ নতুন পরিবার প্রকল্পের আওতায় এসেছে। দৈনিক প্রায় ৩৭০০ মানুষ পরিষেবা নিচ্ছেন। প্রতিদিন সরকারের খরচ হচ্ছে ৭ কোটি টাকা। এখনও পর্যন্ত ৬৭ লক্ষ উপভোক্তাকে স্বাস্থ্য সাথীর কার্ড দেওয়া হয়েছে। এই রাজ্যে স্বাস্থ্য সাথীর আওতায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২ হাজার ৪৭টি হাসপাতাল রয়েছে। মোট শয্যা রয়েছে ১ লক্ষ ২২ হাজারের মতো।

ভোট সন্ত্রাসে উত্তপ্ত বীরভূম, বোমা বাঁধতে গিয়ে উড়ে গেল হাত ...

 
কিন্তু খাতায়-কলমে এই তথ্য শুনতে যতটা ভাল, বাস্তবে ততটা নয়। স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পে শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছেন বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বক্তব্য,  সরকার যে দাম বেঁধে দিয়েছে, তাতে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়।  কোনও কোনও হাসপাতাল সরাসরি এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হতে আপত্তি জানায়। কেউ আবার প্রকল্পের মধ্যে ঢুকলেও রোগীদের ক্যাশলেশ চিকিৎসা পরিষেবা দিতে অস্বীকার করে। অনেক সময়  ক্যাশলেশের আশায় রোগীরা ভর্তি হওয়ার পর জানতে পেরেছে এই প্রকল্পের সুবিধা তারা পাবে না। তখন গয়না-জমি বন্ধক রেখে রোগী ছাড়ানোর উদাহরণও রয়েছে। এমনকী, কোভিড পরিস্থিতিতে মমতার সরকার স্বাস্থ্য সাথীতে ক্যাশলেস চিকিৎসার কথা বললেও বহু হাসপাতাল এতে আপত্তি জানায়। শুধু দামে নয়, স্বাস্থ্য সাথীর অধীনে যে একগাদা রোগকে ঢোকানো হয়েছে, তাতেও আপত্তি রয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর অসহযোগিতার খবর শুনতে শুনতে একটা সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষিপ্ত হয়ে ঘোষণা করেন, রোগী ফিরিয়ে দিলে লাইসেন্স বাতিল করা হবে। নার্সিংহোমগুলি তখন ঘুরিয়ে অন্য অজুহাতে রোগী ফেরানো শুরু করে। রোগীর স্বাস্থ্য সাথী কার্ড আছে শুনলেই তাদের বাঁধা বুলি, ‘আমাদের এখানে এই চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই।’ এই বছরের গোড়াতে রানিগঞ্জের রানিসায়ের বাইপাস অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ ছিল, অশোক বাউরি নামে লরির ধাক্কায় এক আহতকে দুর্গাপুর ও বাঁকুড়ার তিনটি বেসরকারি হাসপাতাল ফিরিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের নাম শুনে। 


পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে সম্প্রতি দরতালিকা পরিমার্জন করার কাজ শুরু করে রাজ্য। ফেব্রুয়ারি মাসে নতুন যে দরতালিকা প্রকাশ করেছে রাজ্য, তাতে সাধারণ চিকিৎসার সরকারি দর ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আইসিইউ পরিষেবার গ্রেড এ এবং গ্রেড বি-র ক্ষেত্রে দর ৩০০০ থেকে বেড়ে ৩৩০০ ও ১৫০০ থেকে বেড়ে ১৮০০ টাকা করা হয়েছে। হৃদরোগের সিটিভিএস-এ সরকারি দর ছিল ৮০,০০০-১,৮০,০০০। এখন তা হয়েছে ১,০০,০০০-২,১০,০০০ টাকা। জেনারেল সার্জারির বিভিন্ন বিভাগে সরকারি দর বেড়ে হয়েছে ১৫,৫০০-৩৫,০০০ টাকা। নবান্ন সূত্রে খবর, এই দর পরিমার্জনের পরে সার্বিক ভাবে ৭-১০ শতাংশ বা ২০০ কোটি টাকা খরচ বাড়বে সরকারের। সরকার দর বাড়ানোয় প্রাথমিক ভাবে খুশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে, এখনও আইসিইউ-আইসিসিইউ-আইটিইউ চার্জ নিয়ে আপত্তি রয়েছে তাদের। নার্সিংহোম মালিকদের বক্তব্য সেটি ৩ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩,৩০০ টাকা করা হয়েছে। অথচ, এক-এক দিন এই বিভাগে খরচ হয় ২০ হাজার টাকারও বেশি। 

৪র্থ দফায় ৪৪টি আসনে লড়াই, বিজেপির উত্তরবঙ্গে উত্থানের প্রভাব কি পড়বে দক্ষিণবঙ্গে ...
এদিকে, স্বাস্থ্য সাথীর সুবিধা নিয়ে তৃণমূলের লোকেরা যা ইচ্ছা তাই করছেন বলে অভিযোগ। যেমন, মালদার ইংলিশবাজারের কাজিগ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সত্যজিৎ চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ তুলে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন গ্রামবাসী। সেই অভিযোগ না তুললে স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পে নাম তোলা হবে না বলে প্রধান এখন হুমকি দিচ্ছেন। 

YouTube video player


বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে মমতা যাতে স্বাস্থ্য সাথীকে তুরুপের তাস করতে না পারে, তার জন্য পাল্টা প্রচার করছে বিজেপিও। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথায়, মমতা নিজের রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য রাজ্যের মানুষকে বলির কাঠগড়ায় চড়াচ্ছেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনের অভিযোগ, ‘স্রেফ রাজনীতি করতে গিয়ে রাজ্যে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প চালু করতে দেননি মমতা। ওই প্রকল্পে দেশের যে কোনও জায়গায় চিকিৎসা পাওয়া যায়। রাজ্যের ৬৬টি হাসপাতাল ওই প্রকল্পের অধীনে রয়েছে। সেখানে ভিন্‌ রাজ্যের বাসিন্দারা এসে চিকিৎসা পেলেও রাজ্যের বাসিন্দারা পাচ্ছেন না।’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই রাজ্যে ভোটপ্রচারে এসে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ক্ষমতায় এলেই বিজেপি সবার আগে আয়ুষ্মান ভারত এই রাজ্যে চালু করবে।