সংক্ষিপ্ত

বামেদের ‘পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি’ চিরকালই পছন্দ মমতা ব্যানার্জ্জীর। ক্ষমতায় আসার পর ক্লাবে অনুদান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে 'পাইয়ে দেওয়া’র এই ধারা বজায় রেখেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনী ইস্তাহার যেন আগের সমস্ত পাইয়ে দেওয়াকে ছাড়িয়ে গেল। 

বামেদের ‘পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি’ চিরকালই পছন্দ মমতা ব্যানার্জ্জীর। ক্ষমতায় আসার পর ক্লাবে অনুদান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে 'পাইয়ে দেওয়া’র এই ধারা বজায় রেখেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনী ইস্তাহার যেন আগের সমস্ত পাইয়ে দেওয়াকে ছাড়িয়ে গেল। 
সদ্য প্রকাশিত তৃণমূলের ইস্তাহারে রাজ্যবাসীর ন্যূনতম মাসিক আয় সুনিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এই প্রকল্পে জেনারেল ক্যাটেগরির পিছিয়ে থাকা দরিদ্র পরিবারগুলিকে মাসিক ৫০০ টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এর ফলে জেনারেল ক্যাটেগরিতে প্রায় ১.৬ কোটি পরিবার উপকৃত হবে বলে জানিয়েছেন মমতা। তফশিলি জাতি-উপজাতিদের ক্ষেত্রে ১০০০ টাকা করে মাসিক অনুদান দেওয়া হবে। ইস্তাহার প্রকাশের সময় মমতা বলেন, ‘অনুদানের টাকা সরাসরি পরিবারের কর্ত্রীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’ বিরোধীদল বিজেপি এই প্রকল্পকে ‘আকাশকুসুম গল্প’ বলে মনে করছে। অন্যদিকে, বামেদের মতে, এই প্রকল্প ‘ভিক্ষা দেওয়া’র নামান্তর। যদিও রাজনীতির কারবারিদের মতে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে মমতা আবার মনে করিয়ে দিতে চাইছেন, তিনি দরিদ্র রাজ্যবাসীর পাশে রয়েছেন। বিশেষ করে, বাড়ির মেয়েদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর কথা বলে সুকৌশলে মহিলা ভোটারদের মন জিততে চেয়েছেন মমতা।  
তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তাহারে চাষিদের আর্থিক সাহায্যের অনুদান বার্ষিক ৬০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় সরকারের পিএম কিসান যোজনা প্রকল্পে চাষিদের বছরে ৬০০০ টাকা আর্থিক সাহায্য করা হয়। পশ্চিমবঙ্গে এই প্রকল্প এখনও চালু করেনি মমতার সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাই নির্বাচনী প্রচারে এসে বলছেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে সবার আগে এই প্রকল্প চালু করবে। এই প্রেক্ষিতে অনুদানের টাকা আরও বাড়িয়ে মমতা আসলে বিজেপি-র দিকেই পাল্টা বাজি ছুড়ে দিলেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ইস্তাহারে রয়েছে আরও নানা সুবিধাজনক প্রকল্প। রাজ্যবাসীর জন্য বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার কথা আগেই ঘোষণা করেছিল মমতার সরকার। এবারের ইস্তাহারে তৃণমূল বাড়িতে বাড়িতে রেশন পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেছে। 
ছাত্রদের জন্য বিশেষ ক্রেডিট কার্ড আনার কথাও তৃণমূলের ইস্তাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, উচ্চশিক্ষায় যোগ্য ছাত্রছাত্রীদের জন্য ক্রেডিট কার্ডের ব্যবস্থা করবে তাঁর সরকার। ১০ লক্ষ টাকা ক্রেডিট লিমিটের এই কার্ডে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে লোন নেওয়া যাবে। লোন চোকানোর জন্য সহজ ব্যবস্থা থাকবে যাতে পড়াশোনার খরচ যোগাতে ছাত্রছাত্রীদের আর বাবা-মায়ের উপরে নির্ভর না করতে হয়। মূলত যুব ভোটারদের টানতেই মমতার এই প্রকল্প বলে মনে করছে রাজনীতির কারবারিরা। 
এছাড়াও ইস্তাহারে বাংলা আবাস যোজনা, বার্ধক্য ভাতা, তাজপুর বন্দর, অশোকনগরে তেল উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে। বিজেপি রাজ্য নেতাদের দাবি, এ সবই কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প। কেন্দ্রের সাহায্য ছাড়া এই প্রকল্পগুলিকে বাস্তবায়িত করা সম্ভব নয়। রাজ্য আর কেন্দ্রে একই দল (ডাবল ইঞ্জিন সরকার) ক্ষমতায় থাকলে তবেই এই কাজগুলি সুষ্ঠু ভাবে করা যাবে বলে দাবি বিজেপির।