সংক্ষিপ্ত

নদী ভাঙন সমস্যার স্থায়ী সমাধানে পাড় বাঁধানোর কাজ সম্পন্ন হলে সীমান্তবর্তী ভগবানগোলা, রানিতলা, ভাগীরথীর পাড়ের গ্রামগুলির বাসিন্দাদের ফি বছর বর্ষায় আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাতে হবে না। 

ভাঙ্গনরোধে (erosion of Ganges) নতুন বছরে 'ভাগীরথীর পাড় বাঁধাও' কর্মসূচিতে ১২ কোটি টাকার (12 crore project) মেগা প্রকল্পের ঘোষণা! ভোটের আগে রাজনৈতিক 'স্টান্ট'-এ জমে উঠেছে মুর্শিদাবাদ (Murshidabad)। ভোট বড় দায়! আর সেই আসন্ন দায় থেকে মুক্তি পেতেই মুর্শিদাবাদ জেলায় আগামী পুরসভা ও লোকসভা নির্বাচনকে 'পাখির চোখ' করে এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে গুটি সাজাতে মাঠে নেমে পড়েছে শাসক দল তৃণমূল। আর সেই লক্ষ্যে বিরোধীদের চমক দিতে, ভাগীরথী পাড় ভাঙ্গনকে ইস্যু করে নবান্নের সবুজ সংকেত মিলেছে।

জেলার ভগবানগোলা ও সংলগ্ন এলাকায় স্থায়ী নদী ভাঙন রোধে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে 'ভাগীরথীর পাড় বাঁধাও' কর্মসূচি গ্রহণ করল সেচদপ্তর। বিশেষ সূত্র মারফত জানা যায়, জেলা সেচ দপ্তরে পক্ষ থেকে  নতুন বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ভাঙন ঐ মেগা প্রকল্পে  ভাঙ্গন রোধে কাজ শুরু হবে। জেলা সেচদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, নদী ভাঙন সমস্যার স্থায়ী সমাধানে পাড় বাঁধানোর কাজ সম্পন্ন হলে সীমান্তবর্তী ভগবানগোলা, রানিতলা, ভাগীরথীর পাড়ের গ্রামগুলির বাসিন্দাদের ফি বছর বর্ষায় আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাতে হবে না। 

পাড় বাঁধানোর কাজ শুরু হওয়ার খবরে স্বস্তির হাওয়া সীমান্তের দুই এলাকায়। লালবাগ মহকুমার ভগবানগোলার বিস্তীর্ণ প্রায় ১৮ কিলোমিটার ভাগীরথী পাড়ের গ্রামগুলির বাসিন্দাদের প্রধান সমস্যা  নদী ভাঙন দূর করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে সেই দপ্তর। গত দুই বছর ধরে বাড়িঘর, চাষের জমি নদী পাড় ভাঙন অব্যাহত। প্রতিবছর বর্ষায় পাড় ভেঙ্গে নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে। সেচদপ্তর বাঁশের খাঁচা ও বালির বস্তা দিয়ে অস্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ করলেও নদী পাড়ের বাসিন্দাদের আতঙ্ক রয়েই গিয়েছে। 

বর্ষায় ভাঙন শুরু হওয়ার পরে বালির বস্তা দিয়ে সাময়িকভাবে নয়, স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধের দাবিতে স্থানীয়রা একাধিকবার সরব হয়েছিলেন। সেচদপ্তরের স্থায়ীভাবে পাড় বাঁধানোর সিদ্ধান্তে তাঁদের দাবি পূরণ হতে চলেছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভগবানগোলা,  হনুমন্তনগর, চরবাবুপুর, চরবিনপাড়া এলাকায় প্রায় ১২০০ মিটার ও পার্শ্ববর্তী নশিপুর থেকে বাসুমাটি পর্যন্ত প্রায় ২৪০০ মিটার ভাগীরথীর স্থায়ী ভাঙন রোধে কাজ হবে। ভগবানগোলা ভাঙন রোধের কাজে ব্যয় হবে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা লালগোলায় খরচ হবে ৮ কোটি টাকা। 

এই দুটি এলাকায় ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান হলে নশিপুর, বাসুমাটি, চরলবণগোলা, চরবাবুপুর, চরবিনপাড়া, চরনতুনপাড়া সহ ৮-১০টি গ্রামের বাসিন্দারা উপকৃত হবেন। জেলা সেচদপ্তরের এক ইঞ্জিনিয়ার এদিন বলেন, বছরের চার-পাঁচ মাস ধরে ভাগীরথীর পাড় ভাঙন চলে। প্রতি বছর পাড় ভাঙনের ফলে ভাগীরথী একটু একটু করে জনবসতির দিকে এগিয়ে আসছে। এই দুই ব্লকে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে রাজ্য সেচদপ্তর ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা করেছে।

এদিকে এই ঘটনাকে কেবলমাত্র সাধারণ মানুষের উন্নতির জন্যই বলে দাবি করছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। বিধায়ক ইদ্রিস আলী সংবাদমাধ্যমকে বলেন," আমরা সারা বছর ধরে মানুষের পাশে থাকতে চাই সেই কারণেই তাদের সুখ দুঃখে অংশীদার হতে এই বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অতীতে বাম-কংগ্রেস কেউ ভাগীরথীর পার ভাঙ্গে সেই ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করেনি"। এদিকে এই ঘটনাকে কেবলমাত্র ভোট বৈতরণী পার হওয়ার চূড়ান্ত সুকৌশল বলেই মনে করছে বিরোধীরা এবং রাজনৈতিক মহলের একাংশ। 

দক্ষিণ মুর্শিদাবাদ জেলা বিজেপির সভাপতি গৌরীশঙ্কর ঘোষ বলেন," আসলে তৃণমূলের কাছে ভোট কে সামনে রেখে মানুষের জন্য আন্তরিকভাবে কিছু করার চেয়ে প্রকল্প ঘোষণা করাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেই জন্য এরকম প্রকল্পে কোটি কোটি টাকার ঘোষণা করে সেখান থেকে আদতে নতুন করে কাটমানি খাওয়ার সুযোগ খুলে রাখতে চাইছে তারা, এইসবই স্টান্ট"।