সংক্ষিপ্ত
শুক্রবার রাতে জলপাইগুড়ির গজলডোবা থেকে উদ্ধার করা হল ৩টি ক্যাঙ্গারু শাবকসুদূর অস্ট্রেলিয়ার থেকে এই প্রাণী উত্তরবঙ্গে এল কোথা থেকে?
ক্যাঙ্গারু একান্তই অস্ট্রেলিয়ার প্রাণী। সারা বিশ্বে শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়াতেই দেখা যায় এই অদ্ভূত দর্শন স্তন্যপায়ী প্রাণীকে। অথচ, সেই প্রাণীরই কিনা দেখা মিলল শিলিগুড়ির কাছে গজলডোবার ক্যানাল রোডে! শুক্রবার রাতে ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে, আচমকা ১টি ক্যাঙ্গারু শাবক দেখে বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে, সেটিকে উদ্ধার করে তারা বন দফতরের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। পরে ডাবগ্রাম রেঞ্জের নেপালি বস্তি থেকে বনকর্মীরা আরও দুটি ক্যাঙ্গারু শাবক উদ্ধার করেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ক্যাঙ্গারুর ভিডিও ভাইরালও হয়েছে। কিন্তু, সকলেরই মনে প্রশ্ন, সুদূর অস্ট্রেলিয়ার থেকে এই প্রাণী উত্তরবঙ্গে এল কোথা থেকে?
এর জবাব রয়েছে বনদফতরের কাছে। গজলডোবার বৈকুন্ঠপুর বনবিভাগের রেঞ্জার, সঞ্জয় দত্ত জানান, ওই প্রাণীটিকে চোরাচালান করা হচ্ছিল। তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে গোপন সূত্রে খবর ছিল শুক্রবার রাতে জলপাইগুড়ি জেলার গজলডোবা এলাকার ক্যানাল রোড দিয়ে একটি গাড়িতে করে কিছু বন্যপ্রাণী চোরাচালান করা হতে পারে। সেই খবর পেয়ে আগে থেকেই ওই রাস্তায় টহল দিচ্ছিলেন বনকর্মীরা।
হঠাৎ খবর আসে, রাস্তার মধ্যেই একটি ক্যাঙ্গারু শাবক ঘোরাফেরা করছে। সেখান থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বেই ছিলেন বনকর্মীরা। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ঘটনাস্থলে যান। এরপর নেপালি বস্তি এলাকা থেকেও আরও দুটি ক্যাঙ্গারু উদ্ধারের খবর আসে। বেলাকোবা রেঞ্জের কর্মীরা ক্যাঙ্গারু শাবক দুটিকে উদ্ধার করে বেলাকোবা রেঞ্জে নিয়ে আসেন। বেলাকোবার বনদফতরের কার্যালয়ে শাবকগুলিকে বেশ খোশ মেজাজেই দেখা গিয়েছে। বনকর্মীরা, তাদের পাতা ইত্যাদি খেতেও দেন। তবে, শাবকগুলির শরীরে সামান্য আঘাত রয়েছে। চিকিৎসার জন্য আপাতত তাদের শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ক্যাঙ্গারুগুলি কোথা থেকে নিয়ে এসে কোথায় পাচার করা হচ্ছিল, সেই বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে, বনকর্মীদের অনুমান, সম্ভবত উত্তরবঙ্গ দিয়ে নেপাল হয়ে চিনে পাচার করা হত ক্যাঙ্গারুগুলিকে। এই পথে এর আগেও বিরল প্রজাতির সাপ, কচ্ছপ, গন্ডারের শৃঙ্গ, হাতির দাঁত, বাঘের ছাল ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী বা তাদের দেহাংশ পাচার করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, চিনের একটা বড় অংশে ক্যাঙ্গারুর মাংস খাওয়া হয়। তা চালান করা হয় অস্ট্রেলিয়া থেকেই। সেই সঙ্গে ক্যাঙ্গারুর অন্ডকোষ থেকে রস বের করে, সেই রস দিয়ে ভায়াগ্রার মতো লিঙ্গ শৈথিল্যের ওষুধও তৈরি করেও থাকে চিনারা। তাই ক্যাঙ্গারুর অন্ডকোষেরও দারুণ চাহিদা রয়েছে চিনে।
গত মাসেই, অসম-বাংলা সীমান্তবর্তী এলাকা থেকেও একটি পূর্ণবয়স্ক ক্যাঙ্গারু উদ্ধার করেছিল কুমারগ্রাম থানার অন্তর্গত বারবিশা ফাঁড়ির পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছিল আদতে হায়দরাবাদের বাসিন্দা দুই ব্যক্তিকে। পাখরিগুড়ি এলাকায় পুলিশের নাকা চেকিং-এর সময় হাতে নাতে ধরা পড়েছিল চোরাচালাকারীরা।