সংক্ষিপ্ত
এই গ্রামগুলির বাসিন্দারা সবাই ভারতীয় এবং তাঁরা ভারতীয় ভূখণ্ডেই বসবাস করেন। তাঁদের ভোটার কার্ড থেকে আধারকার্ড সবই রয়েছে। কিন্তু, আর পাঁচজনের থেকে এদের জীবযাত্রা সম্পূর্ণ আলাদা। তার কারণ হল তাঁরা বাস করেন কাঁটার ওপারে।
স্বাধীনতার ৭৫ বছর কেটে গিয়েছে। তবে স্বাধীন ভারতে থেকেও ওঁরা পরাধীন। স্বাধীনতার স্বাদ ঠিক কেমন তা তাঁদের কাছে এখনও অজানা। কারণ ছোট থেকেই তারা নিয়মের বেড়াজালে বড় হয়েছেন, ফলে স্বাধীনতা ঠিক কি তা তাঁরা জানেন না। এই গল্প দু-একজনের নয়, প্রায় ১০ হাজার মানুষের গল্প এটি। যারা স্বাধীন দেশে থেকেও পরাধীনের মত বসবাস করছেন। এঁদের সকলের বাড়ি ভারতীয় ভূখণ্ড হলেও তাঁরা বসবাস করেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি থানার তারকাঁটা তারের ওপারে। হিলি থানার অন্তর্গত ঠিক এমনই ১৪ টি গ্রাম রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হাড়িপুকুর, উচ্চা গোবিন্দপুর, উজ্জাল, শ্রীকৃষ্ণপুর।
এই গ্রামগুলির বাসিন্দারা সবাই ভারতীয় এবং তাঁরা ভারতীয় ভূখণ্ডেই বসবাস করেন। তাঁদের ভোটার কার্ড থেকে আধারকার্ড সবই রয়েছে। কিন্তু, আর পাঁচজনের থেকে এদের জীবযাত্রা সম্পূর্ণ আলাদা। তার কারণ হল তাঁরা বাস করেন কাঁটার ওপারে। সেখানে পাহারা দেয় বিএসএফ। ফলে সেখানে যেতে গেলে ভারতীয়দের অনুমতি নিতে হয়। দেখাতে হয় পরিচয়পত্র। এছাড়া যেকোনও জিনিস আনতে বা নিয়ে যেতেও নানারকম হয়রানির মুখে পড়তে হয় তাঁদের। এমনকী, জমির ফসল বিক্রি করতে গেলেও আগে থেকে বিএসএফের অনুমতি নিতে হয়। অনুমতি না পেলে ফসল বিক্রি করা অসম্ভব ব্যাপার হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন- ভারতের স্বাধীনতা দিবস উৎসবে সামিল বাংলাদেশও, সীমান্তে দেখা গেল অপূর্ব বন্ধুত্বের ছবি
আরও পড়ুন- ' ত্রিপুরায় বিজেপি গুন্ডা-রাজ চালাচ্ছে', দোলা সেনরা আক্রান্ত হওয়ার পরে অভিযোগ তৃণমূলের
প্রত্যেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজন হয় অনুমতির। সাধারণ মানুষকে হয়রানির মুখে পড়তে হয়। এমনকী, তাঁদের বাড়িতে আত্মীয়রাও ঠিক করে যাতায়াত করতে পারেন না। এর ফলে ওই গ্রামগুলির বাসিন্দাদের সঙ্গে অনেক আত্মীয়ই যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। এদিকে দেশ ১৯৪৭ সালে ১৫ আগস্ট স্বাধীন হয়েছে। এবার স্বাধীনতার ৭৫ বছর। কিন্তু, তাঁরা আজও পরাধীনভাবে রয়ে গিয়েছেন।
আরও পড়ুন- মোদীর ভাষণে মাতঙ্গিনী হাজরা অসমের বাসিন্দা, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়ার দাবি তৃণমূলের
প্রত্যেক দিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত তারকাঁটার গেট খোলা থাকে। সেই সময় মধ্যে কেউ আসতে বা যেতে পারে। যাঁরা পড়াশোনা করেন এই পরিস্থিতিতে তাঁরা সবথেকে বেশি সমস্যায় পড়েন। আবার রাতে বেলা কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে আগে বিএসএফকে জানাতে হয়। তারপর বিএসএফের তরফে অ্যাম্বুলেন্স বা গাড়ি দিয়ে গ্রামবাসীকে সাহায্য করা হয়। তবু অনুমতি ছাড়া এখানে যেন কোনও পাতাও নড়তে পারে না। তাই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে সেখানকার স্থানীয়দের দাবি তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক যার ফলে তাঁরা স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারেন।