সংক্ষিপ্ত

  • রামপুরহাট হাসপাতালের ঘটনা
  • তরুণীর পেট থেকে উদ্ধার  হল গয়না, কয়েন
  • সবমিলিয়ে উদ্ধার প্রায় দু' কেজি ধাতব সামগ্রী
  • মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন ওই তরুণী

ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের 'কুম্ভীর বিভ্রাট' গল্পে কুমীরের পেট কেটে সাঁওতাল বৃদ্ধাকে গয়না পরে বেগুন বিক্রি করতে দেখে চমকে উঠেছিল গল্পের নায়ক ডমরুধর। অনেকটা একই রকম অবস্থা হয়েছিল রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের। রোগীর পাকস্থলীর মধ্যে থেকে তাঁরা বের করলেন একের পর এক গয়না, কয়েন, আস্ত হাত ঘড়ি, পুঁথি, পাথর থেকে শুরু করে লকেটও। সবমিলিয়ে যার ওজন কেজি দু'য়েক!

রামপুরহাট হাসপাতালের সার্জন সিদ্ধার্থ বিশ্বাসের নেতৃত্বে চিকিৎসকদের একটি দল এ দিন এই অস্ত্রোপচার করেন। মানসিক ভারসাম্যহীন এক তরুণীর পেট থেকে ওই সমস্ত গয়না বের করা হয়। আপাতত ওই রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল। 

দিন সাতেক আগে পেটে ব্যথা এবং বমি ভাব নিয়ে সিদ্ধার্থবাবুর কাছে এসেছিলেন বীরভূমের মাড়গ্রামের বাসিন্দা মানসিক ভারসাম্যহীন এক তরুণী। তরুণীর পেটের এক্স রে এবং সিটি স্ক্যান রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন যে তাঁর পাকস্থলীতে ধাতব কিছু জমে আছে। ওই চিকিৎসক জানান, তরুণীর পাকস্থলীতে থাকা ধাতব জিনিসের ওজন এতটাই বেশি ছিল যে তার ভারে যৌনাঙ্গ পর্যন্ত পেট ঝুলে পড়েছিল।

তরুণীর অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিলেও তাঁর শারীরিক অবস্থা তার উপযোগী ছিল না। হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ তলানিতে ঠেকায় অস্ত্রোপচারের আগে তাঁকে পাঁচ বোতল রক্ত দিতে হয়। 

শেষ পর্যন্ত বুধবার ওই তরুণীর অস্ত্রোপচার করা হয়। দেখা যায়, তরুণীর পাকস্থলীর মধ্যে অসংখ্য গয়না রয়েছে। তার মধ্যে তামার হার, কানের দুল, আংটি, বালা সবই রয়েছে। মোট নব্বইটি দশ টাকার কয়েন পাওয়া যায় তাঁর পেটে। এ ছাড়াও বেশ কিছু দু' টাকা এবং পাঁচ টাকার কয়েনও ছিল। ষাটটি রুপোর কয়েনও পাওয়া যায় তরুণীর পেটে। এছাড়াও পুঁথি, পাথর, লকেট, ঘড়ির বেল্ট এবং আস্ত একটি হাতঘড়িও উদ্ধার হয়েছে তরুণীর পেট থেকে। প্রায় এক ঘণ্টা পনেরো মিনিট ধরে ওই তরুণীর অস্ত্রোপচার করা হয়। সবমিলিয়ে তরুণীর পেটের ভিতর থেকে এক কেজি ছশো আশি গ্রাম ধাতব সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। যে গয়নাগুলি উদ্ধার করা হয়েছে, তার মধ্যে অধিকাংশই তামা বা ইমিটেশনের। তবে কিছু সোনার গয়নাও রয়েছে।

অস্ত্রপচারের আগে ওই তরুণী চিকিৎসকদের জানিয়েছিলেন, তাঁর ভাইয়ের দোকান থেকে ওই কয়েনগুলি নিয়ে খেতেন তিনি। চিকিৎসকদের ধারণা, মাটির দলার মধ্যে ওই কয়েন ঢুকিয়ে গিলে খেতেন ওই তরুণী। কিন্তু বাকি সামগ্রী তিনি কীভাবে খেতেন, বা কোথায় পেতেন, তা স্পষ্টভাবে বলতে পারছেন না তরুণীর বাড়ির লোকরাও। বছর দু' য়েক আগে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও এক রোগীর পেট থেকে প্রায় দু' কেজি পেরেক বের করেছিলেন চিকিৎসক সুদীপ্ত বিশ্বাস।