সংক্ষিপ্ত
পুরুলিয়ার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় যেভাবে সরকারি অফিসে দুর্নীতিতে সরব হয়েছেন তাতে নেটদুনিয়ায় ঝড় উঠেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বলেছেন, ভালো করে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের ভিডিও দেখিয়ে দিলাম আর আসলে গ্রাউন্ড রিয়্যালিটি অন্য কথা বলছে, এমন কাজ কেন হচ্ছে, সেই সঙ্গে তিনি বলেছেন 'যে পলিটিক্যাল লোকেরাই চোর ভাবতাম, কিন্তু এ তো অন্য কথা বলছে।'
এক্কেবারে যাকে বলে বিস্ফোরণ। স্টেজের উপরে মুখ্যমন্ত্রী যে রীতিমতো বারুদ হাতে করে উঠেছেন তা ঘূণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি জেলাশাসক রাহুল মজুমদার থেকে শুরু করে পুলিশ সুপার সেলভামুরুগানও। এদিকে রাহুল মজুমদার সমানে মুখ্যমন্ত্রীর ধমক হজম করে গেলেন একের পর এক প্রশাসনিক গাফিলতি ও দুর্নীতি রোধে প্রশাসনের ভূমিকায়। আর একদিকে পুলিশ সুপার ধমক খেলেন জেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার প্রশ্নে। কারণ ঝাড়খণ্ড থেকে লরিতে করে বহু জিনিস রাজ্যে পাচার হচ্ছে বলে বেশকিছুদিন ধরে অভিযোগ উঠেছে। আর প্রেক্ষিতে এখন পুরুলিয়া জেলার ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সীমানা বরাবর নাকা চেকিং কঠোর করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্যের শীর্ষ পুলিশ দফতর থেকে। কিন্তু, এই নাকা চেকিং-এর বাইরেও এমন কিছু এলাকা রয়েছে যেখানে চট করে পৌছানো যায় না। এবার এক নজরে চোখ রাখা যাক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের করা তথ্য়ের বিস্ফোরণে--
নবান্নের পাঠানো তথ্যে উত্তর দিতে দেরি কেন, ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী
জেলা প্রশাসনের উপরে আস্থা পায় না বলে অনেক সময় মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে অভিযোগ জানায়। আর এই সব অভিযোগের ক্রস ভেরিফিকেশনের জন্য পুরুলিয়া জেলা শাসকের দফতর থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট জেলা সরকারি দফতরগুলোকে তা পাঠানো হয়। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন দেখা গিয়েছে কার্যক্ষেত্রে প্রতিটি উত্তর নবান্নে পৌঁছতে ২০ দিনের বেশি লেগে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় তালিকা ধরে ধরে জেলা শাসকের দফতর থেকে পুলিশ সুপারেরর দফতর এবং অন্যান্য দফতর কে কবে ক্রস ভেরিফিকেশনের জবাব দিয়েছে তা তুলে ধরেন। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া এই তথ্যে দেখা গিয়েছে যে জেলাশাসকের দফতর নবান্ন থেকে পাঠানো এমন সব অভিযোগের ক্রস ভেরিফায়েড অ্যানসার দিতে গড়ে ২১ দিন করে সময় নিয়েছে। পুলিশ সুপার পুরুলিয়ার দফতর সময় নিয়েছে ৪ দিন। হোম অ্যান্ড হিল অ্যাফেয়ার্স থেকে শুরু করে মাইনরিটি অ্যাফেয়ার্স, পিএইচই, বন দফতর, পিডবলুডি সকলেই গড়ে ৩৮ দিন করে সময় নিয়েছে। একে এতটা সময়, তারপরও এই সব অভিযোগে ক্রস ভেরিফিকেশনেও যে গন্ডগোল রয়েছে, ঠিকমত সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো তা খতিয়ে দেখছে না, তাও এই প্রশাসনিক বৈঠকে বুঝিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়।
পুরুলিয়া প্রশাসনের সবচে বড় গাট এখন 'আন্ডার প্রসেস' শব্দ, মানছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়েয়র মতে পুরুলিয়া জেলার সবচেয়ে এখন বিষয় হল আন্ডার প্রসেস। সরকারি যে কোনও প্রকল্প নিয়ে কথা বলতে গেলেই সমানে আন্ডার প্রসেস বলে একটা শব্দ জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। সকলেই ভাবছে বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী হয়তো খতিয়ে দেখবেন না। কিন্তু, পুরুলিয়ায় সরকারি বকেয়া প্রকল্পের হাল হকিকত সন্ধান করতে গিয়ে প্রায় মাথায় হাত পড়ার জোগার নাকি হয়েছে। দেখা যাচ্ছে ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে একাধিক সরকারি প্রকল্প বকেয়া। অথচ এর স্টেটাস রিপোর্টে বলা হচ্ছে আন্ডার প্রসেস। কোনও নির্দিষ্ট তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। যার ফলে প্রশাসনের বকেয়া প্রকল্প নিয়ে কোনও স্পষ্ট ধারণা পাচ্ছে না প্রশাসনের শীর্ষ কর্তা ব্যক্তিরা। এই নিয়েও রীতিমতো পুরুলিয়া জেলাশাসককে ধমক দেন মুখ্যমন্ত্রী।
কোন প্রকল্পের কোন অবস্থা, মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের খতিয়ান
পিএইচই দফতরের পানীয় জল সরবরাহের একটি প্রকল্পের স্টেটাসে লিখে দেওয়া হয়েছে ডিলেড। আর সেই সঙ্গে লেখা হয়েছে আন্ডার প্রসেস। অথচ এই প্রকল্পটি ৬ বছর ধরে এই অবস্থায় পড়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। কেন এই হাল তা নিয়ে জেলাশাসককে প্রশ্নও করেন তিনি। পানারাড্ডায় একটি জল প্রকল্পও যা পিএইচই দফতরের আওতায়, সেই প্রকল্পও ৬ বছর ধরে বকেয়া। এখানেও ডিলেড এবং আন্ডারপ্রসেস শব্দ লেখা রয়েছে জেলা প্রশাসনের তরফে। আরষা-তে একটি স্টেডিয়াম প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়েছিল। যার তত্বাবধানে রয়েছে রাজ্য যুব দফতর। সেই প্রকল্পেরও স্টেটাস রিপোর্টে ডিলেড এবং আন্ডার প্রসেস লেখা। আর দেখা যাচ্ছে এই প্রকল্প ৫ বছর ধরে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেভাবে কোনও অগ্রগতি হয়নি। কাশিপুরের স্টেডিয়াম প্রকল্পেও ৫ বছরের বিলম্ব। আর এখানে ও স্টেটাস রিপোর্টে ডিলেড এবং ওয়ার্ক আন্ডার প্রসেস শব্দগুলি লেখা রয়েছে বলে জানান ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। পুরুসলিয়া স্টেডিয়াম-এর প্রকল্পেও ডিলেড এবং ওয়ার্ক আন্ডার প্রসেস লেখা রয়েছে। আর এই প্রকল্প ঝুলছে ৫ বছর ধরে। এমনটাই জানান মুখ্যমন্ত্রী। বাঘমুন্ডিতেও একটি স্টেডিয়াম গড়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন সেখানেও দেখা গিয়েছে প্রকল্পের স্টেটাস রিপোর্টে ডিলেড এবং আন্ডার প্রসেস শব্দগুলো বসানো। খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে ৫ বছর ধরে এই প্রকল্পও ধুকছে। রঘুনাথপুরেও একটি স্টেডিয়াম তৈরির কথা ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। সেই প্রকল্পের কাজও থমকে রয়েছে ৫ বছর ধরে। এখানে স্টেটাস রিপোর্টে ডিলেড এবং আন্ডার প্রসেস লেখা। মানবাজারেও একটি স্টেডিয়াম হওয়ার কথা। সেখানেও প্রকল্প রূপায়ণের সরকারি রিপোর্টে ডিলেড এবং আন্ডার প্রসেস লেখা রয়েছে। এই প্রকল্পও ৫ বছর ধরে বাকি বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। পুরুলিয়ায় একটি নতুন আইটিআই গড়়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। সেই কাজও ৪ বছর ধরে আটকে রয়েছে। আরষা-তে একটি জল প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। সেই প্রকল্প ৪ বছর ধরে একই জায়গায় পড়ে রয়েছে। পুরুলিয়ার মুরগামুরু ড্যামে একটি ওয়াচ টাওয়ার বানানোর কথা ছিল। সেই প্রকল্প ৪ বছর ধরে যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরে পড়ে রয়েছে। পিএইচই-র একটি পাইপ প্রকল্পেও ৩ বছর ধরে আটকে রয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আরও একটি প্রকল্পের উন্নতির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রকল্পও ৩ বছর ধরে বেহাল।
পুরুলিয়া দূরের জেলা বলে অবহেলা করলে চলবে না- মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়
দক্ষিণবঙ্গের একদম শেষসীমায় বাংলার যে জেলাগুলি রয়েছে, পুরুলিয়া তারমধ্যে অন্যতম। কলকাতা থেকে পুরুলিয়ার দূরত্ব অনেকটা। এখানে যে সব প্রত্যন্ত এলাকা রয়েছে তা বেশ দুর্গম এবং সেখানে কলকাতা থেকে পৌঁছতে সময় লাগে। কিন্তু তার মানেই এই নয় যে পুরুলিয়াকে অবহেলা করা যাবে। এমন বার্তাই দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। জঙ্গলমহলের একটা বড় অংশ পুরুলিয়ার মধ্যে আসে। সুতরাং, জঙ্গলমহলে যে মাওবাদী উপদ্রব ছিল তা সরকারে আসার পর তাঁরা নিয়ন্ত্রণে এনেছেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। সুতরাং, এখানে আর্থ সামাজিক ব্যবস্থায় সরকারি প্রকল্প প্রযোজ্যে কোনও অবেহলা বরদাস্ত করা হবে না বলেই বার্তা দিয়েছেন মমতা। এই জঙ্গলমহলে আদিবাসীদের বসবাস। এদের বেশিরভাগই খুব নিরীহ এবং পড়াশোনা জানেন না। তাঁদেরকে ঠকিয়ে কেউ যদি কোনও ফায়দা তুলতে যায় তাহলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিএলআরও দফতরের কাজ কেন দুই দোকানে, জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে কড়া ধমক মমতার
বলরামপুর ভূমি রাজস্ব দফতরের কাজ কেন সামনের দুই দোকানে হচ্ছে, কড়া ভাষায় জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। এই দুই দোকানের একটির মালিকের নাম করালিকিঙ্কর মাহাতো, আর অন্য দোকানটির নাম প্রিয়ঙ্কা ভ্যারাইটিজ। ভরা প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর এমন অকাঠ্য তথ্য এবং তার প্রমাণে রীতিমতো ঘাবড়ে যান সকলে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান তিনি সব তথ্য সঙ্গে করেই নিয়ে এসেছেন। বিএলআরও-দের কাছে জানতে চান, কেন এমন হচ্ছে। বলরামপুর ভূমি রাজস্ব দফতরের দায়িত্ব নিয়ে সদ্য মাস দেড়েক হল জয়েন করেছেন একজন। তাঁকে দাঁড় করিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান কেন এসব হচ্ছে। যদিও, বিএলআরও জানান তিনি মাত্র কিছুদিন জয়েন করেছেন, তিনি সর্বতভাবে চেষ্টা করছেন যাতে এসব বন্ধ করা যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় জানান, এই দুই দোকান থেকে মিউটেশনের যাবতীয় কাজ হচ্চে এবং তার জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ ধার্য করা হচ্ছে! ভূমি রাজস্ব দফতর থাকতে কী করে এই কাজ দুটো দোকান থেকে হচ্ছে! কড়া ভাষায় মুখ্যমন্ত্রী ভর্ৎসনাও করেন জেলাশাসক রাহুল মজুমদারকে। জানান, রাহুল আগেও এই জেলায় কাজ করেছিল। কিন্তু এসব কি হচ্ছে, ধারনা বদলে গেল বলেও মন্তব্য করেন মুখ্য়মন্ত্রী।
মিউটেশন দুর্নীতির শিকারদের মঞ্চে আনেন মমতা
পুরো কেস স্টাডির মতো করে এক এক করে দুর্নীতির শিকারদের পরিচয় এবং তাঁদের অভিজ্ঞতা সকলের সামনে আনেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজেন হেমব্রম নামে একজনকে মঞ্চে পেশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। জানান, হুড়া বিএলআরও-র অধীনে বলরামপুরে ব্লকের বড়োউন্মা গ্রাম পঞ্চায়েতের নামশোলা আগুইবেরা গ্রামের বাসিন্দা রাজেন হেমব্রম ২০১১ সাল থেকে প্রয়াত বাবার নামে থাকা জমি নিজের নামে মিউটেশন করতে চাইছিল। কিন্তু, এত বছরেও তা করে উঠতে পারেনি। শেষমেশ দালাল-কে দশহাজার টাকা দিতে হয়। আরও পাঁচ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে তাঁর কাছ থেকে। এমনকী, রাজেন যে দলিল করিয়েছিলেন তার প্রতি পাতায় ১০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। গরিব আদিবাসীদের জমি মিউটেশন ফ্রি-তে হওয়ার কথা, সেখানে কীভাবে দিনের পর দিন এইভাবে রাজেশকে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে, তার জবাবও চান মুখ্যমন্ত্রী। এরপর মুখ্যমন্ত্রী সামনে নিয়ে আসেন মাদক মাহাতো এবং যাদব মাহাতোর কাহিনি। এই দুই ভাই-এর বাড়িও বড়উন্মা গ্রাম পঞ্চায়েতের নামশোল বাঁশজি-তে। মুখ্যমন্ত্রী জানান এঁদের পিতা বিপিন মাহাতো যে জমি কিনেছিলেন তা পরবর্তীকালে দুই ভাই-এর মধ্যে ভাগ হয়। এবার জমির মিউটেশন করাতে গেলে হুড়া বিএলআরও দফতর থেকে ১৫ হাজার টাকা দাবি করা হয়। কীভাবে এই অর্থ চাওয়া হল তা সর্বসমক্ষেল জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও হুড়া বিএলআরও-র অধীনেই আরও এক দুর্নীতির উদাহারণ প্রমাণ-সহ তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। এটা হল দলদলি গ্রাম পঞ্চায়েতের কামারডি গ্রামে। কার্তিক টুডু, রবি টুডু ও অশ্বিনী টুডু তাঁদের পিতা সনাতন টুডু মারা যাওয়ার পর জমির ভাগ পান। সেই জমির মিউটেশন করাতে গেলে বিএলআরও দফতর থেকে ৩০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। বিএলআরও-দের কাছে এই নিয়ে প্রশ্ন করেন মুখ্যমন্ত্রী। জানতে চান কীভাবে মিউটেশনের জন্য অর্থ চাওয়া হচ্ছে। আর জেলাশাসক কেন এসব জানেন না তা নিয়েও সর্বসমক্ষে জবাবদিহি চান মুখ্যমন্ত্রী।
দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি অফিসারদের বদলির নির্দেশ মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়
পুরুলিয়া জেলার ভূমি ও রাজস্ব দফতরের কর্মী এবং অফিসারদের কাজে যে তিনি এক্কেবারেই খুশি নন তা বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। অবিলম্বে এক-দুজন বিএলআরও যারা মাস খানেকের মধ্যে নতুন জায়গায়া ট্রান্সফার হয়ে এসেছেন, তাঁদের ছাড়া সকলকেই এদিক-ওদিক বদলি করার নির্দেশ দিয়েছেন। পুরুলিয়ার বুকে আদিবাসীদের বসবাস বেশি। আর আদিবাসীদের জমি কেউ কেড়ে নিতে পারবে না বলেও জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। মিউটেশন দুর্নীতির মাধ্যমে কেউ যদি ভেবে থাকে আদিবাসীদের জমি কেড়ে নেওয়া যাবে বা দখল করা যাবে তাহলে সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়।
ধমকালে-চমকালে সোজা জেলে ঢুকিয়ে দেব- মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়
যারা সরকারি অফিসারদের দুর্নীতিকে সকলের নজরে নিয়ে এসেছে, তাঁদের ধমকানো-চমকানো যাবে না। এমন খবর পেলে সোজা গ্রেফতার করিয়ে জেলে পুরে দেওয়া হবে। এমনই ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। এমনকী, স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকেও যদি এই নিয়ে কোনওভাবে অভিযোগকারীদের ভয় দেখানো হয় তাহলেও ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মমতা। দলীয় নেতা-কর্মীদের কেউ এই ধরনের দুর্নীতিতে যুক্ত থাকলেও রেয়াত করা হবে না বলেও দৃঢ়ভাবে জানিয়েছেন তিনি।
পঞ্চায়েতের কাছে নালিশ যায় না- প্রশ্ন মমতার
মিউটেশন নিয়ে দুর্নীতি থেকে ভূমি ও রাজস্ব দফতরের একাধিক বেনিয়মের অভিযোগ পঞ্চায়েতের কাছে জমা পড়ছে কি না তা নিয়েও খোঁজ খবর নেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানতে চান যে এই নিয়ে কোনও নালিশ পঞ্চায়েতের কাছে হয়েছে কি না।
পলিটিক্যাল লোকেদের এতদিন চোর ভাবতাম- মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়
প্রশাসনিক স্তরে যেভাবে দুর্নীতির একের এক রিপোর্ট মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের কাছে পৌঁছেছে তাতে যে তিনি প্রবল ক্ষুব্ধ তা এদিন বুঝিয়ে দেন। প্রশাসনিক বৈঠকের মাঝেই তিনি জেলাশাসক রাহুল মজুমদারকে প্রশ্ন করেন যে এত বেনিয়ম ঘটছে সরকারি অফিসে তা তার গোচরে আসেনি কেন? জেলাশাসক উত্তর দেওয়ার আগেই মুখ্যয়মন্ত্রী বলেন, 'পলিটিক্যাল লোকেরাই চোর ভাবতাম। এমনিতেই পলিটিক্যাল লোকেদের নামে বেশি রটে।'
অযোধ্যা পাহাড়ে কেন উন্নয়ন হয়নি- মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়
অযোধ্যা পাহাড়কে ঘিরে ৬টি রাস্তা হয়েছে। কিন্তু তারপরও সেখানে যথেষ্ট উন্নয়ন হয়নি। পর্যটন শিল্পকে ঘিরে যে পরিমাণ উন্নতি সেখানে হতে পারত তা করা যায়নি বলে জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। এর জন্য তিনি মূলত জেলা প্রশাসনের দিকেই আঙুল তুলেছেন। তাঁর মতে যথেষ্ট সদিচ্ছা না থাকায় এমন হয়েছে। পুরুলিয়া জেলা জুড়ে পর্যটন শিল্পে হোম স্টে-র সংখ্যা বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অযোধ্যা পাহাড়ে পানীয় জল থেকে শিক্ষাখাতে সেভাবে উন্নয়ন না হওয়ায় ক্ষিপ্ত তিনি। তাই জেলাশাসক এবং বিএলআরও দফতরের আধিকারিকদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন। এর জন্য ৩ মাসের সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছেন তিনি। মিউটেশনকে সহজ করার জন্য দুয়ারে দুয়ারে মোবাইল ভ্যান নিয়ে যেতেও বলেছেন তিনি। এই সমস্ত এলাকার সমস্ত বিডিও-কে রোজকার কাজের হিসাব এবং বকেয়া কাজ ডায়েরিতে নথিভুক্ত করতেও নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সারপ্রাইজ ভিজিট কেন হয় না- পুলিশ সুপারকে ধমক মুখ্যমন্ত্রীর
পুরুলিয়ার সীমানা ঘেঁষে রয়েছে ঝাড়খণ্ড রাজ্য। এই সীমানা জুড়ে রাজ্য পুলিশকে তৎপর রাখাটা বিশাল দায়িত্বের। তার সঙ্গে রয়েছে অযোধ্যা পাহাড়ের মতো দুর্গম এলাকা। যেখান দিয়ে খুব সহজেই ঝাড়খণ্ডে ঢুকে পড়া যায়। এই পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সুপার বা আইসিরা কি সারপ্রাইজ ভিজিট দেন! এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। সমস্ত আইসি-র হয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ধমকও খান পুলিশ সুপার। মমতা পরিস্কার নির্দেশ দেন যে আইসি-দের নিজের এলাকা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। আর পুরুলিয়া থেকে অন্য রাজ্যে যাওয়ার রাস্তায় নাকা চেকিং বাড়ানোর নির্দেশ দেন তিনি।
আরও পড়ুন- পুরুলিয়ার জনসভা থেকেই তৃণমূল নেতা কর্মীদের ঘুরে দাঁড়াতে নির্দেশ, মমতার লক্ষ্য পঞ্চায়েত ভোট
আরও পড়ুন- এত বড় ভুঁড়ি কেন আপনার? পুরপ্রধানকে সটান প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতার
আরও পড়ুন- 'আমার পার্টির লোক হলে আমি থাপ্পড় মারতাম', পুরুলিয়ার জেলা শাসককে বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়