সংক্ষিপ্ত

  • সাইক্লোন ইয়স আর শিলাবৃষ্টির প্রভাব
  • দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত মালদার আমের ফলন
  • প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা ক্ষতির আশঙ্কা চাষীদের
  • সাহায্যের আশ্বাস প্রশাসনের

সারা রাজ্য শুধু নয় রাজ্যের বাইরেও সরবরাহ করা হয় মালদার বিখ্যাত আম। তবে এবার সেই সরবরাহে ঘাটতি দেখা গিয়েছে। একদিকে সাইক্লোন ইয়স, অন্যদিকে শিলাবৃষ্টি। সব মিলিয়ে দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত মালদার আমের ফলন। সারা ভারতবর্ষে মালদা জেলার আম বিখ্যাত।আর মালদা জেলার হরিশচন্দ্রপুরের বিখ্যাত আম কুমারখা আম। এই আমের কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। এই আম শুধুমাত্র হরিশ্চন্দ্রপুরেই পাওয়া যায়। যা হরিশ্চন্দ্রপুর থেকে দেশের বিভিন্ন অংশ এমনকি বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। 

এই আমের সঙ্গে জড়িত রয়েছে ইতিহাস। ব্রিটিশ আমলে হরিশ্চন্দ্রপুরের জমিদাররা এই আম তৈরি করেছিল। উত্তরপ্রদেশের বিশেষ আমের সঙ্গে স্থানীয় আমের মিক্স ব্রিড করে এই আম উৎপাদন করা হয়। আর এই আমের গাছ এমন ভাবে রোপন করা হয়ছিল যাতে হরিশ্চন্দ্রপুরের বাইরে এই আম না পাওয়া যায়। তাই এই কুমারখা আম শুধু হরিশ্চন্দ্রপুরের আম হিসেবেই খ্যাত। 

কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে বিখ্যাত এই আমের ফলন এবার কমে গেছে। ফলে মাথায় হাত পড়েছে এই আমের চাষীদের। কিছুদিন আগেই হয়েছিল শিলাবৃষ্টি। তারপর ইয়স পরবর্তী দুর্যোগ। বিভিন্ন আমের সাথে ক্ষতি হয়েছে কুমারখা আমের ফলনেও। প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা ক্ষতির আশঙ্কা চাষীদের। যেখানে প্রত্যেক বছর ৫০ থেকে ১০০ টন আম শুধু বাইরেই রপ্তানি করা হয়। সেখানে এবার এলাকার লোকেরা এই আম ঠিক করে পাবে কিনা তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সন্দেহ। যেখানে প্রত্যেক বছর ৪০০ থেকে সাড়ে ৪৫০ টন আম চাষ হয়। সেখানে এ বছর ১০০ টন আম হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে চাষীরা। তবে আম চাষীদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক তজমুল হোসেন।

 হরিশ্চন্দ্রপুর মিশ্র জমিদার বাড়ির ছেলে চিরঞ্জিত মিশ্র এই আমের ইতিহাস নিয়ে বলেন," এই আমের বিশেষ ইতিহাস রয়েছে। হরিশ্চন্দ্রপুর ছাড়া এই আম কোথাও পাওয়া যায় না। সেই সময়ের জমিদাররা এইভাবেই রোপণ করেছিলেন। উত্তর প্রদেশ এবং স্থানীয় আমের সংমিশ্রণ এই আম। পূর্বসূরীদের থেকে জানতে পারি ব্রিটিশ গভর্নরদের খুশি করতে এই আম দেওয়া হতো। কুমারখা আমের এক বিশেষ কদর রয়েছে। আমাদের পরিবারের বহু সদস্য দেশ এবং বিদেশে থাকে। তাদের প্রত্যেক বছর এই আম পাঠানো হয়। এছাড়া যারা চাষ করে তারাও বাইরে রপ্তানি করে।"

কুমারখা আম চাষী অরবিন্দ দাস বলেন," দশ পনেরো বছর ধরে এই আম চাষ করছি। এই আম হরিশ্চন্দ্রপুর ছাড়া কোথাও পাওয়া যায় না। অন্য বারের থেকে ফলন খুব কম। বাইরে রপ্তানি তো দূরের কথা, এলাকার মানুষ ঠিকভাবে পাবে কিনা সন্দেহ। প্রায় দুই, তিন লক্ষ টাকা ক্ষতি হবে।"

হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক তজমুল হোসেন বলেন," প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে যাদেরই ক্ষতি হয়েছে। তাদের পাশে আছি। দুয়ারে ত্রাণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম সাহায্য করা হবে। প্রত্যেক চাষী সাহায্য পাবে।"এই কুমারখা আম বিখ্যাত আম। যার বিশেষ ইতিহাসও রয়েছে। সরকার এবং প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত যাতে এই আমের ফলন ঠিকভাবে হয়। ক্ষতিগ্রস্ত আম চাষীদের পাশেও দাঁড়ানো উচিত।