সংক্ষিপ্ত
বুধবার সকালে প্রকাশ হয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষা ২০২০-র ফল
প্রথম স্থান অধিকার করেছেন বর্ধমানের অরিত্র পাল
ফল জানার পর কীরকম অনুভূতি হয়েছিল
কী নিয়ে পড়তে চায় সে
পত্রলেখা চন্দ্র, বর্ধমান: টেলিভিশনের পর্দায় প্রথম হিসাবে তাঁর নামটা ঘোষণা করা হয়েছে, তা প্রথমে শুনতেই পাননি অরিত্র পাল। কারণ তাঁর বাবা-মা ছেলের সাফল্যে আনন্দে নাচতে শুরু করে দিয়েছিলেন। যে বাবাকে কোনওদিন কাঁদতে দেখেননি, সেই বাবাও কেঁদে ফেলেছিলেন। তারপর টেলিভিশনের পর্দায় দেখে বর্ধমানের মেমারির অরিত্র পালের বিশ্বাস হয়েছিল, তিনিই মাধ্যমিক পরীক্ষা ২০২০-তে প্রথম হয়েছেন। মোট ৭০০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছেন ৬৯৪ নম্বর। আর তারপরই করোনা মহামারির মধ্যে দীর্ঘদিন পর তাঁর বাড়িতে নেমে এসেছে খুশির মহল।
পূর্ব বর্ধমানের মেমারির শ্রীদুর্গাপল্লী এলাকায় বাড়ি অরিত্রদের। বাবা গনেশচন্দ্র পাল প্রতিরক্ষা বিভাগে কাজ করেন। পানাগড়ে পোস্টিং। মা চন্দনা পাল, নুদিপুর স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষিকা । বর্ধমানের মেমারি বিদ্যাসাগর মেমোরিয়াল স্কিলের ছাত্র অরিত্র জানিয়েছেন, তিনি আশা করেছিলেন প্রথম দসের মধ্যে থাকবেন, কিন্তু, একেবারে প্রথম হবেন তা ভাবেননি। প্রথম হওয়ায় কিছুটা হলেও হতবম্ভ হয়ে গিয়েছেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন, নিয়ম করে প্রতিদিন স্কুলে যেতেন। তবে স্কুলের পাশাপাশি সাহায্য করে পাথফাইন্ডারের মক টেস্ট-ও। স্কুলের শিক্ষকরা যথাসম্ভব সাহায্য করেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি সাহায্য পেয়েছেন মায়ের কাছ থেকে। অরিত্র জানিয়েছেন, তাঁর মা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা হলেও, এখনও মা একবার বোঝালেই তিনি বিষয়টি বুঝে যান।
পড়াশোনার বাইরে ছবি আঁকতে ভালোবাসেন অরিত্র পাল। পছন্দ করেন শিবরাম চক্রবর্তীর গল্পের বই পড়তে। আর স্কুলে টিফিন টাইমে খেলতেন কবাডি। কারণ শুধু পড়াশোনা করে গেলে মোটা হয়ে যাওয়ার ভয় রয়েছে। স্কুলে মাঠ না থাকলেও সিমেন্ট বাধানো চাতালেই কবাডি খেলা চলত। হাত-পাও ছড়ে যেত।
মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় ৬৬৮ নম্বর পেয়েছিলেন তিনি। অঙ্কে নম্বরটা একটু কমে গিয়েছিল। তাই তারপর থেকে তিনমাস সারাদিন পড়েছেন। সারাদিনে ১৫-১৬ ঘন্টা পড়তেন। তবে পরীক্ষার ঠিক আগের দিনগুলো সেভাবে বই নিয়ে বসতেন না অরিত্র পাল। তাতেই এইবার অঙ্ক, ইতিহাস আর ভুগোলে ১০০-তে ১০০ পেয়েছেন তিনি। মার্কশিট এখনও হাতে পাননি, তবে ইন্টারনেটে দেখেছেন বাকি বিষয়গুলিতে ৯৮-৯৯ করেই নম্বর পেয়েছেন।
এরপর তিনি ফিজিক্স বা ম্যাথস নিয়ে গবেষণা করতে চান, অথবা চিকিৎসক হতে চান। বাবা প্রতিরক্ষা কর্মী। অরিত্রও ইচ্ছে রয়েছে সেইদিকে যাওয়ার। কিন্তু, বাধা হল, তাঁর চশমা রয়েছে। তাই সেনার চিকিৎসক হয়ে সেই ইচ্ছে পুরণ করতে চান তিনি। ইতিমধ্যেই উচ্চমাধ্যমিকের ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে। করোনা মহামারির মধ্যে অনলাইনেই ক্লাস চলছে। অরিত্র পাল মনে করছেন, এই বছর তো বটেই, আগামী বছরেও কয়েক মাস অনলাইনেই ক্লাস নেওয়া প্রয়োজন। ফ্রান্সের মতো স্কুল খুলে দিলে হিতে বিপরীত হতে পারে।