সংক্ষিপ্ত

পেনশনের অর্ধেক টাকা মানব কল্যানে খরচ করা এই মানুষটি এবছর বাড়িতে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর রাইজিং ডেতে পাত পেড়ে খাইয়েছেন ভাতা প্রাপকদের। সকালে খাস্তা কচুরির সঙ্গে আলু মটরশুঁটির দম ,দুপুরের মেনুতে ছিল সরু চালের ভাতের সঙ্গে মাছের কালিয়া, শেষ পাতে ছিল মিষ্টি দই।

সমাজের বুকে অনন্য নজির! একদিকে দেশের সুরক্ষায় পঁচিশ বছর (25 Years) সীমান্তের (Border) অতন্দ্র প্রহরী (Ex-servicemen) হিসেবে কাজ করেছেন। আর অবসরে নিজের জন্মদিনে প্রতিবেশী বিধবাদের জন্য মাসে মাসে ভাতা প্রদান (old age allowance) চালু করলেন মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) থানার ইচ্ছাগঞ্জের বাসিন্দা পবিত্র কুমার দাস। ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বর মাসে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর “রাইজিং ডে” অর্থাৎ জন্মদিন।

ঘটনা চক্রে একই দিনে জন্ম গ্রহন করেন সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ৭৬ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের সাব ইনস্পেক্টর পবিত্র কুমার দাস। দুই কন্যার শৈশব না পেরোনোর আগেই মৃত্যু হয় স্ত্রী ঝর্না দাসের। তাই বাধ্য হয়েই স্বেচ্ছাবসর গ্রহন করেন মুর্শিদাবাদ পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ওই বাসিন্দা। বাড়িতে ফিরেই কন্যাদের বড় করে তোলার পাশাপাশি সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর জন্মদিনকে স্মরণ করে ওই দিন একাধিক কর্মসূচি নিতেন অবসরপ্রাপ্ত ওই জওয়ান।

কোনও বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কচিকাঁচাদের হাতে উপহার হিসেবে তুলে দিতেন বই খাতা, পেন পেনসিল। আবার কোনও বছর কচিকাঁচাদের নিয়ে পিকনিকে বেরিয়ে পড়তেন। তবে শীত পড়লে স্থানীয় দুঃস্থদের গরম পোশাক দেওয়া রেওয়াজ করে তুলেছিলেন পবিত্র বাবু। আর পুজোর দিনে পাড়ার বাসিন্দাদের নতুন জামা কাপড় বিলি করে মেতে উঠতেন উৎসবের আনন্দে। ইতিমধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়ে এখন একাই বাড়িতে থাকেন তিনি। এদিকে ২০১৭ সালে পে স্কেল বাড়তেই আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া বিধবা এবং বার্ধক্যদের মাসিক ২০০ টাকা ভাতা দেওয়া শুরু করেন পবিত্র বাবু । প্রতি মাসের ২ তারিখে মোট ৩২ জন নাগরিক তার বাড়িতে উপস্থিত হয়ে ওই  ভাতা গ্রহন করেন বলে জানা গিয়েছে।

পেনশনের অর্ধেক টাকা মানব কল্যানে খরচ করা এই মানুষটি এবছর বাড়িতে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর রাইজিং ডেতে পাত পেড়ে খাইয়েছেন ভাতা প্রাপকদের। সকালে খাস্তা কচুরির সঙ্গে আলু মটরশুঁটির দম ,দুপুরের মেনুতে ছিল সরু চালের ভাতের সঙ্গে মাছের কালিয়া, শেষ পাতে ছিল মিষ্টি দই। তবে ভাতা গ্রহীতা আনোয়ারা বেওয়া, সন্ধ্যা ঘোষ, রাজলক্ষ্মী দাস,লাল বিবিরাও ভুল করেননি। তাঁদের আনা কেক কেটে পালন হল জন্মদিন। 

তারা বলেন, “মাসে মাসে টাকা পাই, জামা কাপড়ও পাই। জন্মদিনে আমরা আশীর্বাদ করি উনি সুস্থ থাকুন, দীর্ঘজীবী হন।” প্রতিবেশী সুচিত্রা হালদারের দাবি, “ওনার বাবাও এক জন সেনা কর্মী ছিলেন। দেশ সেবার পাশাপাশি এখন সমাজ সেবায় ব্রতী হয়েছেন পবিত্র বাবু। তিনি এখন আমাদের গর্ব।” আর মানবিক মানুষটি বলেন, “সীমান্তে কাজ করার সময় দেখেছি পেটের জ্বালায় কিছু মানুষ সম্মান খুইয়ে, ইজ্জৎ হারিয়ে পাচারের সঙ্গে যুক্ত হন। দরিদ্রতার কোন সীমারেখা হয় না। গরীব সব জায়গাতেই একই রকম, সেই উপলদ্ধি আমার সামান্য কাজের প্রেরণা ।”

"