সংক্ষিপ্ত
আড়াই বছরের কন্যা সন্তানের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে বাড়ি আসছিলেন মেয়ের বাবা। বিকানের এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা প্রাণ কেড়ে নিল পেশায় শ্রমিক রঞ্জিতের।
আড়াই বছরের কন্যা সন্তানের মৃত্যুর পর পেশায় শ্রমিক রঞ্জিত ফোনের ওপার থেকেই স্ত্রীকে স্বান্ত্বনা দিচ্ছেলেন। বলছিলেন, তিনি আসছেন। নিজের বুকের ভিতর একরাশ কান্না চেপেই স্ত্রীকে আশ্বস্ত করছিলেন তিনি। নিজের আড়াই বছরের ছোট্ট মেয়ের (Daughter Dead) সেই নিথর দেহের পাশে যে তাঁর বাবার দেহটাকেও সাজাতে হবে সে কথা কি কখনও ভেবেছিলেন তাঁর স্ত্রী! মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক এই ঘটনার সাক্ষী রইল কোচবিহারের মাথাভাঙ্গা ২ নম্বর ব্লকের লতাপাতা গ্রাম। আর এই অভাবনীয় দুর্ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে সেই লাইনচ্যুত হওয়া বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস। প্রসঙ্গত, মেয়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়েই তড়িঘড়ি বাড়ি ফিরছিলেন লতাপাতা গ্রামের বাসিন্দা রঞ্জিত। পকেট প্রায় শূণ্য থাকলেও মেয়েকে শেষবারের মত দেখতে রাজস্থান থেকে কোচবিহারের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন তিনি। টিকিট কেটেছিলেন বিকানের এক্সপ্রেসের(Bikaner Express)। আর পরিণতি হল মৃত্যু! মৃত মেয়েকে শেষবারের মত কোলে নেওয়া তো হলই না, বরং মেয়ের সঙ্গেই এক যাত্রায় সামিল হলেন বাবাও (Daughter's Father)।
বিগত কুড়ি বছর ধরে রাজস্থানের জয়পুরে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। আয় বলতে খুব সামান্য কটা টাকাই। কন্যা সন্তানের জন্মের পর থেকেই বেশ অসুস্থ ছিল সে। তাই আড়াই বছরের কন্যা সন্তান এবং স্ত্রীকে রেখে এসেছিলেন শ্বশুরবাড়িতে। আড়াই বছরের ছোট্ট মেয়েটি জটিল হার্টের সমস্যায় ভুগছিল। সম্প্রতি আবার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় আড়াই বছরের কন্যা সন্তান। হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সেই ছোট্ট প্রাণ। এই খবর পেয়েই তড়িঘড়ি বাড়ি আসার জন্য প্রস্তুতি নেন রঞ্জিত। আচমকা মেয়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে একপ্রকার স্তম্ভিত হয়েই বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। পকেটে বিশেষ টাকা না থাকলেও কোনও রকমে বিকানের এক্সপ্রেসের টিকিট কেটে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন। একদিকে স্বামী হারানোর শোক আর অন্যদিকে কোল ফাঁকা হয়ে যাওয়ার সেই আর্তনাদে যেন ফেটে পড়ছে মাথাভাঙ্গা ২ নম্বর ব্লকের লতাপাতা গ্রাম।
আরও পড়ুন-ময়নাগুড়ি ট্রেন দুর্ঘটনায় উদ্ধারকাজ সমাপ্ত, ঘটনাস্থলে রেলমন্ত্রী, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯
আরও পড়ুন-Maynaguri Train Accident: মধ্যরাতেই রিলিফ ট্রেন, দুর্ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণে রেলমন্ত্রী
মেয়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে অনর্গল কথা বলেই চলেছিলেন। ফোনের ওপার থেকেই সাহস জুগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু ট্রেন নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌঁছলে শেষ কথা হয় স্ত্রীর সঙ্গে। কয়েক ঘন্টার মধ্যে বাড়ি ফেরার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু কে জানত, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সব কিছু শেষ হয়ে যাবে! বাড়ি পৌঁছানোর কয়েকটি স্টেশন আগেই বিকানের এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান রঞ্জিত। দুর্ঘটনার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছেন রঞ্জিতের দাদা। সেখানে গিয়ে ভাইয়ের পরে থাকা নিথর দেহটি চিহ্নিত করেন। একদিকে ছোট্ট মেয়ের অকাল প্রয়াণ আর অন্যদিকে রেল দুর্ঘটনায় ফিরছে বাবার মৃতদেহ। মাথাভাঙার লতাপাতা গ্রামের এই শোকস্তব্ধ পরিবারের কান্নার রোল শোনা যাচ্ছে গোটা গ্রাম জুড়ে।