সংক্ষিপ্ত

  • হুগলির ভূগোল শিক্ষক সুমন্ত বিশ্বাস
  • প্রত্যন্ত এলাকায় ন্যাপকিনের ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা ছড়ান
  • মহিলাদের মধ্যে ঋতুস্রাব নিয়ে কুসংস্কার দূর করেন
  • শিক্ষককে সাহায্য করেন তাঁর ছাত্রীরাই

উত্তম দত্ত, হুগলি: বাস্তব গল্পের ভিত্তিতেই তৈরি হয়েছিল অক্ষয় কুমার অভিনীত ছবি 'প্যাডম্যান'। এবার বাস্তবের আররও এক প্যাডম্যান- এর খোঁজ মিলল হুগলির চন্দননগরে। মহিলাদের ঋতুস্রাব যে একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া, প্রত্যন্ত এলাকায় ঘুরে সেই বার্তাটাই বুঝিয়ে চলেছেন এক ভূগোল শিক্ষক। একই সঙ্গে ছাত্রী এবং মহিলাদের বোঝাচ্ছেন স্যানিটারি ন্যাপকিন- এর গুরুত্ব। 

চন্দননগরের সুভাষ পল্লির বাসিন্দা চন্দনবাবু এক সময় কলেজে পড়াতেন। বর্তমানে বাড়িতেই শিক্ষকতা করেন তিনি। একই সঙ্গে চলে মহিলাদের মধ্য ন্যাপকিন ব্যবহার করার গুরুত্ব বোঝানোর ক্লাস। তার জন্য অবশ্য বাংলার এক জেলা থেকে আর এক জেলা ছুটে বেড়ান তিনি। একই সঙ্গে ঋতুস্রাব নিয়ে যে কুংসস্কার এবং ছুতমার্গ রয়েছে, তাও কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন সুমন্তবাবু। আর এই কাজে তাঁকে সাহায্য করে চলেছে তাঁর অগনিত ছাত্রী। 

সুন্দরবন থেকে পুরুলিয়া, বাংলার বিভিন্ন জেলার গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করেন সুমন্তবাবু ও তাঁর ছাত্রীরা। ভূ- সংকল্প নামে একটি সংস্থাও খুলেছেন তাঁরা। মহিলাদের তাঁরা বোঝান, কাপড় নয়, স্যানিটারি ন্যাপকিনই ব্যবহার করতে হবে আর পরে তা মাটির নীচে পুঁতে দিতে হবে। শিক্ষকতা করে যা উপার্জন করেন, তার একটা অংশ দিয়েই এই সচেতনতা গড়ার কাজ করে চলেছেন সুমন্তবাবু। 

সুমন্তবাবুর বক্তব্য, 'একজন শিক্ষক হিসেবে সমাজের প্রতি আমার কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমার মনে হয়েছে এখনও অনেক জায়গায় মেয়েদের এই বিষয়টি নিয়ে একাধিক ছুঁতমার্গ রয়েছে। পরিবারের মধ্যেও রয়েছে বিভিন্ন রকম কুসংস্কার। নভেম্বর মাসে আমার কন্যাসন্তান হওয়ার পর থেকে আমি আরও উৎসাহ নিয়ে এই ছুতমার্গ আর কুসংস্কার দূর করার চেষ্টা করছি।'

নিজের অভিজ্ঞতার কথা এবার বই আকারেও তুলে ধরতে চলেছেন সুমন্তবাবু। এবারের কলকাতা বইমেলায় তাঁর লেখা 'পিরিয়ড' নামে একটি বই প্রকাশিত হচ্ছে। হুগলি জেলাতেই পাণ্ডুয়া থেকে সিঙ্গুর পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় শিবির করেছেন তাঁরা। স্যরের সঙ্গে সমান তালে কাজ করে যাচ্ছে হৈমন্তি , মৌমিতা, অঙ্কনা, তিয়াসারা। প্রতিমাসে সিঙ্গুরের একটি মাদ্রাসায় তাঁরা গিয়ে ছাত্রীদের মধ্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করেন। ২০২০ সালে একটাই লক্ষ্য, ঋতুস্রাব নিয়ে মহিলাদের মধ্যে থেকে কুসংস্কার দূর করা এবং শারীরিক এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত যাবতীয় কুসংস্কার মানুষের মন থেকে দূর করা।