সংক্ষিপ্ত
জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) ময়নাগুড়ির (Mainaguri) দোহমনিতে লাইনচ্যুত হয়েছিল, বিকানের গুয়াহাটি এক্সপ্রেস (Bikaner Guahati Express)। সেই দুর্ঘটনাস্থলকে ঘিরে ওই এলাকায় এখন তীব্র ভুতের আতঙ্ক (Ghost Panic)!
গত ১৩ জানুয়ারি জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) জেলায় ময়নাগুড়ির (Mainaguri) দোহমনি এলাকায় লাইনচ্যুত হয়েছিল, আপ বিকানের গুয়াহাটি এক্সপ্রেস (Bikaner Guahati Express)। ঘটনার পর অনেকগুলো দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু, এখনও ওই এলাকাতেই পড়ে রয়েছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের গোমড়ানো মোচড়ানো বগিগুলি। আর, সেই বগিগুলিকে কেন্দ্র করেই দোহমনি আলাকা জুড়ে ছড়িয়েছে আতঙ্ক, ভুতের আতঙ্ক! রাত নামলেই অভিশপ্ত বগিগুলির কামড়া থেকে কখনও বিকট চিৎকার, আবার কখনও গুমরানো কান্নার শব্দ ভেসে আসছে বলে, দাবি করেছেন গ্রামবাসীরা। এমনকী, বিডিও এসেও গ্রামবাসীদের আতঙ্ক দূর করতে পারেননি।
ময়নাগুড়ির ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৯ জন। আহত হয়েছিলেন ৪৩ জনেরও বেশি। বহু মানুষের আশা-আকাঙ্খা- স্বপ্ন ছাড়খাড় করে দিয়েছে এই দুর্ঘটনা। যেমন মাথাভাঙ্গার লতাপাতা গ্রামের রঞ্জিত। ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিলেন। আড়াই বছরের কন্যা সন্তানের মৃত্যুর খবর পেয়ে স্ত্রীর পাশে দাঁড়াতে আসছিলেন। বিকানের এক্সপ্রেস তাঁকে মৃত মেয়ের কাছেই পৌঁছে দিয়েছে। কিংবা নিশিগঞ্জের দেওয়ানবস এলাকার যুবক সুভাষ রায়। জয়পুরে গিয়েছিলেন বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতে। দুই মাসের কন্যা সন্তানকে দেখতে গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন। দেখা আর হয়নি। এরকম বহু অতৃপ্তির সাক্ষী এই দুর্ঘটনা।
সেই সময় হতাহতদের উদ্ধারে প্রশাসনেরও আগে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দোহমনির গ্রামবাসীরাই। কিন্তু, এখন ওই ট্রেন দুর্ঘটনাই তাদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই গ্রামবাসীদের একাংশ অভিযোগ করছেন, সন্ধ্যা নামলেই গ্রামে অতিলৌকিক সব ঘটনা ঘটছে। গোটা গ্রামে গা ছমছমে পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। দুর্ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা বগিগুলি থেকে নানারকম ভৌতিক আওয়াজ ভেসে আসছে। এমনকী, গ্রামের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে অশরীরীরা, এরকমও শোনা যাচ্ছে।
এই 'অতৃপ্ত আত্মা'দের দূর করতে ইতিমধ্য়েই গ্রামে বিভিন্ন পুজা-আচ্চার আয়োজন করা হয়েছে, কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। তারপরও গ্রামে ভুতের আতঙ্ক দূর হয়নি। এই অবস্থায়, শনিবার দোহমনিবাসীদের আতঙ্ক দূর করতে ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং সহ-সভাপতিকে সঙ্গে নিয়ে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন ময়নাগুড়ির বিডিও শুভ্র নন্দী। আতঙ্কিত, গ্রামবাসীদেরও সব কথা শোনেন তিনি। গ্রামবাসীদের আতঙ্ক দূর করারও চেষ্টা করেন। তবে তাতে কতদূর কাজ হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
বিডিও-র দাবি, তিনি ওই এলাকাতে রাতেও থেকেও দেখেছেন। কিন্তু গ্রামবাসীদের দাবি মতো অস্বাভাবিক অতিলৌকিক কিছু দেখেননি বা শোনেননি। তাঁর মতে, সম্ভবত দুর্ঘটনার পরের বীভৎস্য দৃশ্যের ট্রমা থেকে বের হতে পারেননি গ্রামবাসীরা। সেই ট্রমা থেকেই তাঁদের মনে এই ধরণের ধারণা তৈরি হয়েছে। তিনি স্পষ্ট দাবি করেছেন, ভৌতিক বা অতিলৌকিক কিছু ঘটছে না দোহমনিতে। গ্রামবাসীদের মনের এই আতঙ্ক দূর করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাসম্ভব সহায়তারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।