সংক্ষিপ্ত

২৯ বছর পর মুর্শিদাবাদে বাজতে চলেছে  লন্ডনের এলিজাবেথ টাওয়ারের আদলে 'মুর্শিদাবাদের বিগ বেন'।  অস্তিত্ব সংকট কাটাতে 'মুর্শিদাবাদ হেরিটেজ অ্যান্ড কালচারাল ডেভলপমেন্ট সোসাইটি'।  

২৯ বছর পর মুর্শিদাবাদে বাজতে চলেছে  লন্ডনের এলিজাবেথ টাওয়ারের আদলে 'মুর্শিদাবাদের বিগ বেন' (Big Ben) ।  অস্তিত্ব সংকট কাটাতে 'মুর্শিদাবাদ হেরিটেজ অ্যান্ড কালচারাল ডেভলপমেন্ট সোসাইটি'  (Murshidabad Heritage devolopment society)। সে যেন ছিল এক 'মাহেন্দ্রক্ষণ'। শেষ তার আওয়াজ শোনা গিয়েছিল প্রায় তিন দশক আগে। বাকিটা স্মৃতি। ১৭২৫ সালে মুর্শিদাবাদে তৈরি লন্ডনের 'এলিজাবেথ টাওয়ার' এর আদলে তৈরি 'মুর্শিদাবাদের বিগ বেন' স্থানীয়রা যাকে ডাকেন 'ঐতিহাসিক ঘন্টা ঘড়ি' বলে। এহেন এক আজব সৃষ্টি কয়েক দশক ধরে অকেজো হয়ে পড়ে থাকায়় ভেঙে পড়ার সম্মুখীন। বর্তমানে রাজ্য সরকারের বিচার বিভাগের মুর্শিদাবাদ স্টেটের  অধীনে থাকা এমন এক দুর্লভ সৃষ্টিকে সংস্কার করতে এগিয়ে এলো 'মুর্শিদাবাদ হেরিটেজ অ্যান্ড কালচারাল ডেভলপমেন্ট সোসাইটি'।

 

নবাব হাজারদুয়ারি প্যালেসের এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন  'মুর্শিদাবাদের বিগ বেন' 

আর এমন ঘটনাই সর্বত্র সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে গবেষক, পড়ুয়া, রাজনীতিবিদ সব মহলে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে। অনুমান নির্ভরতা বন্ধ করে সঠিক সময়ের নির্ঘণ্ট দিতে নবাব সুজাউদ্দিন মহম্মদ খান হাজারদুয়ারি প্যালেসের দক্ষিন দরজা এলাকায় সেই সময় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আধুনিক মানের  এই 'মুর্শিদাবাদের বিগ বেন'। যা পরবর্তীতে ঐতিহাসিক 'ঘন্টা ঘড়ি ' নামে বহুল পরিচিতি লাভ করে সর্বত্র। কিন্তুু কালের  নিয়মে ওই ঘড়ি নষ্ট হয়ে ভেঙে পড়েছে একরকম। আর সেই দুর্লভ সৃষ্টিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাঁচিয়ে রাখতে  জেলা প্রশাসনের অনুমোদন সাপক্ষে ওই ঘড়ির সংস্কার করে ফের চালু করতে উদ্যোগ গ্রহন করে এগিয়ে এলো 'মুর্শিদাবাদ হেরিটেজ অ্যান্ড কালচারাল ডেভলপমেন্ট সোসাইটি'। যদিও সেই কাজ করতে গেলে নবাব পরিবারের এক অংশ বাঁধা দেন ।এই ব্যাপারে মুর্শিদাবাদ স্টেট ম্যানেজার জয়ন্ত মন্ডল বলেন , “ ঘণ্টা ঘড়ি মুর্শিদাবাদ স্টেটের অধিনে ,ফলে ওই নিদর্শনের সংস্কারে কেউ বাঁধা দিতে পারে না ।তবুও নিজামত পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কোনও সংস্কার কাজে তারা বাঁধা দেবেন না"।

বিশাল আকার ওই ঘড়ি নিয়ে আসা হয় খোদ 'লন্ডন' থেকে

নবাবীদস্তাবেজ ঘেটে জানা যায় , ১৭৫২ সালে বঙ্গদেশে প্রথম যান্ত্রিক ঘড়ি উপহার পান নবাব সিরাজদ্দৌলা এবং ১৭৫৮ সালে প্রথম ঘড়ি কেনেন মীরজাফর ।তার অনেক আগে নবাব মুর্শিদ কুলি খার জামাই নবাব সুজাউদ্দিন খান তার সাম্রাজ্যের মানুষ কে সময় সচেতন করে তুলতে ১৭২৫ সাল নাগাদ ঘণ্টা ঘড়ির প্রতিষ্ঠা করেন ।হাজারদুয়ারি প্রাসদের প্রবেশ পথ দক্ষিন দরজাতে ওই ঘণ্টা ঘড়ি আজও বর্তমান । সম্পূর্ণ কাঁসা ও পেতলের ধাতব পাত দিয়ে তৈরি বিশাল আকার ওই ঘড়ি নিয়ে আসা হয় খোদ 'লন্ডন' থেকে ।প্রত্যেক এক ঘন্টা অন্তর দিনে- রাতে ২৪ ঘণ্টা  ওই ঘন্টা ঘড়ি বাজান হত । তবে সন্ধ্যা৬ টায় সুসজ্জিত নবাবী সেনা দক্ষিন দরজায় উপস্থিত হয়ে ঘণ্টার সঙ্গে বিউগল বাজিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সান্ধ্য কালীন বার্তা দিতেন ।এই ঘণ্টা বাজানোর জন্য  তিনটি বিভাগে তিন জন কর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল । নবাবী সাম্রাজ্যের পতনের পরেও বহুকাল ওই ঘণ্টার আওয়াজ শুনেই এলাকার মানুষ কাজ কর্মে হাজির হতেন । শেষ ১৯৯২ সালেও ওই ঘণ্টার ধ্বনি শুনেছেন নবাব নগরীর বাসিন্দারা ।অথচ সেই শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ঘণ্টা ঘড়ির সংস্কার করতে গেলে সোসাইটিকে বাঁধা দেওয়া হয় । তার পরিপ্রেক্ষিতে সৈয়দ মহম্মদ হুসেন মির্জার নেতৃত্বে নিজামত পরিবার , সোসাইটির সদস্য এবং বাসিন্দাদের নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ওয়াসেফ মঞ্জিলে । সেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয় নবাবী স্থাপত্য এবং নিদর্শন সংস্কারে কোনও রকম বাঁধা দেওয়া যাবে না ।

'মুর্শিদাবাদের বিগ বেন' তার পুরাতন ঐতিহ্য ফিরে পাবে

এই ব্যাপারে সৈয়দ মহম্মদ হুসেন মির্জা বলেন , “ সোসাইটি প্রশাসনের অনুমতি ক্রমে ওই সংস্কার করছে ।ওই সংস্থা একেরপর এক সংস্কার করে বহু ঐতিহাসিক সম্পদকে রক্ষা করেছে । তাই তাদের কাজে বাঁধা দেওয়া মানে নবাবী ঐতিহ্যকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হবে ।”বর্তমানে ওই এলাকা ও ঘণ্টা ঘড়ির দায়িত্ব প্রাপ্ত রাজ্য সরকারের বিচার  বিভাগের মুর্শিদাবাদ স্টেটের অধীনে রয়েছে । ওই সংস্কার সাবেকি নিয়মে সুড়কি , চুন ,খয়ের ,মেথি , চিটা গুড় ,গাব দিয়ে করা হবে এবং দেখ ভাল করবেন অরকিউলজিক্যাল অ্যাসিস্টেন্ড সুপারিইন্টেন্ডেন্টের ইঞ্জিনিয়ার ।এই তথ্য দিয়ে মুর্শিদাবাদ হেরিটেজ অ্যন্ড ক্যালচারাল ডেভলপমেন্ট সোসাইটির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন , “ ঘণ্টা গড়ির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম ।একে রক্ষা করা জরুরী । জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সোসাইটি ওই কাজ করবে"। সকলেই এখন যে রয়েছেন কবে 'মুর্শিদাবাদের বিগ বেন' তার পুরাতন ঐতিহ্য ফিরে পাবে।