সংক্ষিপ্ত

পুজোর কটা দিন ঘোষাল বাড়ির দেবী দুর্গার চারিধারে হরেক রকম প্রজাপতির আগমন ঘটে। দশমীতে দেবীর বির্সজনের পর প্রজাপতিদের দেখা মেলে না।

পুজোয় জীবন্ত হন দেবী,তাই শতাব্দী প্রাচীন প্রথা মেনে পুজোর মুহূর্তে শৃঙ্খলিত করে রাখা হয় দুর্গাকে। মুর্শিদাবাদের পরতে পরতে লুকিয়ে অভিনবত্বের ছোঁয়া। বাকি নেই দুর্গা পূজাও। মুর্শিদাবাদের সীমান্তবর্তী জঙ্গিপুরের ঘোষাল বাড়ির শতাব্দী প্রাচীন এই দুর্গা পুজোর মুহূর্তে জীবন্ত হন দেবী। আর তাই তাকে শৃঙ্খলিত করে রাখার রীতিও চলে আসছে এখানে। 

৫০০ বছরের বেশি সময় পুরানো এই সাবেকি পুজোয়। এই ঐতিহাসিক পুজোর প্রচলন করেছিলেন গয়ামুনি বৈষ্ণমী। গয়ামুনি দেবী নিঃসন্তান ছিলেন। সত্যব্রতী দেব্যাকে পোষ্য পুত্রী হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন তিনি। জঙ্গিপুরের গয়ামুনি বৈষ্ণমীর দুর্গা সেই পুজো এখন বর্তমানে গোঁসাই বাড়ির পুজো বলে খ্যাত। আর এই ঘোষাল বাড়ির পুজোর অভিনবত্বই হল পুজোর মুহূর্তে দেবী দুর্গাকে বেদীতে তুলে দেবীকে পিছনে বড় লোহার কড়া সহ শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। কারণ ঘোষাল পরিবারের বিশ্বাস সন্ধি পুজোর সময় দেবী দুর্গা জীবন্ত হয়ে ওঠেন। আস্তে আস্তে দেবী সামনের দিকে এগিয়ে আসতে থাকেন। 

মা দুর্গা যাতে ঘোষাল বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে না পারেন তার জন্য প্রতিমার কাঠামোকে শেকল বেঁধে রাখা হয়। সেই বিশ্বাসকে আঁকড়ে রেখে আদিকাল থেকে সেই রীতি মেনে পুজো হয়ে চলেছে। প্রথা মেনে রথের দিন পুজো পাঠের পর দেবীর কাঠামোতে প্রলেপ দিয়ে মূর্তি গড়ার কাজ শুরু হয়েছে। রথ যাত্রার দিন থেকে দুর্গা পুজোর উৎসব শুরু হয় ঘোষাল বাড়িতে। মহালয়ার দিন মন্দিরে দেবীর বোধনের ঘট স্থাপন করা  হয়। সপ্তমীর দিন ঢাক, ঢোল, উলু সহ নব পত্রিকাকে পাল্কি করে আনা হয় ভাগীরথি নদীতে। 

বৈদিক মতে স্নান করিয়ে আনা হয় মন্দিরে। সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত প্রতিদিন ফলমূল, লুচি, মিষ্টি সহ ভোগ নিবেদন করা হয়। সন্ধি পুজোতে তিন রকমের খিঁচুড়ি, পোলাও, পনির ও বক ফুলের বড়া ভোগ হিসাবে দেবীকে দেওয়া হয়। পুজোর কটা দিন ঘোষাল বাড়ির দেবী দুর্গার চারিধারে হরেক রকম প্রজাপতির আগমন ঘটে। 

দশমীতে দেবীর বির্সজনের পর প্রজাপতিদের দেখা মেলে না। ঘোষাল বাড়ির দেবী দুর্গা এক চালাতে বিরাজমান। দেবীর হাতে পিতলের অস্ত্র। বনকাপসি ঢাকের সাজ। বৈদিক রীতি মেনে নিষ্ঠার সঙ্গে ঘোষাল বাড়িতে পূজিত হন দেবী দুর্গা।