সংক্ষিপ্ত

দেবজ্যোতি ঘোষের চাকরি হয় সুন্দিয়া পাড়া প্রাথমিক হাই স্কুলে। ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের ক্ষমতায় এলে সেই চাকরী ধাপে ধাপে পাকা করে ফেলেন। রাজনৈতিক প্রভাবশালী হওয়াতে স্থানীয় মানুষ রীতিমতো ভয়ে ঘোষ পরিবারের বিরুদ্ধে কোনো মুখ খুলতো না।

ভাটপাড়া পৌরসভার উপ পৌর প্রধান দেবজ্যোতি ঘোষ অষ্টম শ্রেণী পাস। তারপরেও শিক্ষকতা করছেন প্রাথমিক স্কুলে। কলকাতা হাইকোর্টে সেই মামলা নিয়ে চলছে রীতিমত জলঘোলা। উল্লেখ্য, দেবজ্যোতি ঘোষের বাবা ছিলেন সুন্দিয়া পাড়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বর্গীয় গোপাল ঘোষ। তিনি তৎকালীন জাতীয় কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন এবং ডব্লু বি পি টি এর সাংগঠনিক নেতা ছিলেন। বাম শাসনের অবসানের সন্ধিক্ষণে সেই প্রভাব খাটিয়ে ২০১০ সালে ছেলে দেবজ্যোতি ঘোষের চাকরি হয় সুন্দিয়া পাড়া প্রাথমিক হাই স্কুলে। ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের ক্ষমতায় এলে সেই চাকরী ধাপে ধাপে পাকা করে ফেলেন। রাজনৈতিক প্রভাবশালী হওয়াতে স্থানীয় মানুষ রীতিমতো ভয়ে ঘোষ পরিবারের বিরুদ্ধে কোনো মুখ খুলতো না।

এবার গোটা ঘটনায় হস্তক্ষেপ করল কলকাতা হাইকোর্ট। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাই কোর্ট তলব করল দেবজ্যোতি ঘোষকে। শুক্রবার এই তৃণমূল নেতাকে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক নিয়োগ মামলায় ভাটপাড়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান দেবজ্যোতি ঘোষকে তলব করে কলকাতা হাই কোর্ট।

তবে গোটা ঘটনায় কোনও বিতর্কই দেখছেন না দেবজ্যোতি নিজে। তার চাকরি নাকি বাম আমলে হয়েছে। এই দাবি করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করে যান তিনি। দেবজ্যোতি বলেন, তাঁর চাকরি হয়েছে ২০১০ সালে। তাই এই প্রাথমিক শিক্ষক পদে দুর্নীতির সঙ্গে নাকি তাঁর কোনও সম্পর্কই নেই। এদিকে দেবজ্যোতির পাসপোর্টে যোগ্যতা হিসেবে লেখা আছে অষ্টম শ্রেণি পাশ। তা নিয়েই সংশয় প্রকাশ করেছেন বিচারপতি। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দেবজ্যোতি ঘোষ। তিনি জানান, কোনও জায়গায় অষ্টম শ্রেণি পাশের কথা লেখা নেই। দেবজ্যোতির দাবি, বেতন আর সাম্মানিকের মধ্যে তফাৎ রয়েছে। পুরসভা থেকে সাম্মানিক পান তিনি, আর বেতন পান স্কুল থেকে। স্কুল থেকে অনুমতি নিয়েই ভোটে দাঁড়িয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। এছাড়া তাঁর নিয়োগে দুর্নীতি হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেও দাবি করেছেন তিনি।

বুধবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ মামলার শুনানি চলে। সেই সময় দেবজ্যোতির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠে আসে। আইনজীবী দিব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের সওয়াল, দেবজ্যোতির সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের যোগাযোগ ছিল। শুধুমাত্র শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন নয়, কী ভাবে তিনি একইসঙ্গে দুটি সরকারি পদে বহাল থাকতে পারেন এবং দুই জায়গা থেকেই বেতন সংগ্রহ করতে পারেন, সেটা আদালতে এসে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।