সংক্ষিপ্ত

কলকাতা, দ্য সিটি অফ জয় সাক্ষী এক অন্যরকম ইতিহাসের। 

দ্রোহের আগুনে সরে গেল ব্যারিকেড। মঙ্গলের দ্রোহের কার্নিভালকে রুখতে রেড রোডের মতো করেই ধর্মতলার মোড় থেকে শুরু করে রানি রাসমণি রোড পর্যন্ত একাধিক জায়গায় মোতায়েন পুলিশ। রেড রোড এবং রাণী রাসমণি রোডের একটি করে লেন ঘিরে ফেলা হয়েছিল ব্যারিকেড দিয়ে। এক মানুষ সমান উঁচু ব্যারিকডগুলিকে গার্ডরেলের সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধেছিল পুলিশ। কোথাও কোথাও আবার বাঁশের কাঠামো বেঁধেও তৈরি করা হয় ব্যারিকেড।

কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশে সেই ব্যারিকেড খুলতে বাধ্য হয় প্রশাসন। কারণ, দ্রোহের কার্নিভালের অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট। ১৬৩ ধারা জারির নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ করে মঙ্গলবারই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল ‘জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টর্স’। দ্রুত শুনানির আর্জি জানিয়ে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।আর তারপর সেই আর্জি মঞ্জুর করেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। শুনানি শেষে রাজ্যের বিপক্ষেই রায় দেন বিচারপতি। তাঁর কথায়, “সকলেরই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার অধিকার রয়েছে। আদালত বারবার এই নির্দেশ দিয়েছে।”

হাইকোর্টের নির্দেশের পর ব্যারিকেডগুলি খুলে দেওয়া হয়। আর ব্যারিকেড সরতেই জনতার উচ্ছ্বাস। ধর্মতলায় জনস্রোত। ঢাক বাজছে এবং সেই ঢাকের তালে তালে নাচছে জনতা।

দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন। স্লোগানে, গানে এবং নাচে মুখর রাজপথ। মানুষের গলায় শিকল ভাঙার গান। প্রতিবাদের এই মিছিলে শামিল হয়েছেন প্রচুর মানুষ। এক আন্দোলনকারী বললেন, “এর চেয়ে বড় কার্নিভাল আর কিছু হয় না। মুখ্যমন্ত্রীর উচিৎ ছিল আমাদের কার্নিভালে আসা।”

কলকাতা হাইকোর্ট থেকে সয়া চলে এসেছেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি বললেন, “বাকি ব্যারিকেডগুলি খোলা হলেও রেড রোডের দিকের ব্যারিকেডটি রাখার প্রস্তাব আমিই দিয়েছি ওনাদের। যাতে বাইরে থেকে কেউ এসে ঝামেলা না করতে পারেন।”

স্লোগান উঠছে, ‘শাসক থাকবে কতক্ষণ, শাসক যাবে বিসর্জন’। ওদিকে মহানগরীর রাস্তায় কেউ জ্বালিয়েছেন মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট। তো কেউ আবার ওড়াচ্ছেন কালো বেলুন। হাতে হাত রেখে ‘জনগণের ব্যারিকেড’ গড়ল জনতা। দ্রোহের কার্নিভালে যোগ দিলেন অভিনেত্রী অপর্ণা সেন, চৈতি ঘোষাল এবং উষসী চক্রবর্তী সহ আরও অনেকে।

ধর্মতলার মানববন্ধনে যোগ দিয়েছেন আট থেকে আশি সকলে। প্রায় সকলেরই হাতে রয়েছে প্ল্যাকার্ড এবং মুখে একটাই স্লোগান, ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’। সন্ধ্যা যত বাড়ছে, ততই দলে দলে আরও মানুষ যোগ দিচ্ছেন মানববন্ধনে। ডিসি সেন্ট্রাল সহ পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। তাদের দাবি, মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিঘ্ন ঘটাতেই ইচ্ছা করে গাড়ি ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তারা।

কলকাতা পুলিশের ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়কে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখান আন্দোলনকারীরা। তাঁকে ঘিরে ‘গো-ব্যাক’ স্লোগান ওঠে প্রতিবাদী জনতার মধ্যে থেকে। দেখা যায়, বিক্ষুব্ধ জনতার তীব্র ক্ষোভের মাঝে তিনি আর দাঁড়াননি। পিছিয়ে আসেন এবং সেখানেও তাঁকে ঘিরে লাগাতার স্লোগান চলতে থাকে।

প্রতিবাদী জনতার গলায় ছিল বিচারের দাবি এবং জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি। কিন্তু পুলিশের আচরণে তারা রীতিমতো ক্ষুব্ধ। তাই ইন্দিরা মুখার্জিকে ঘিরে ওঠে স্লোগান। প্রতিবাদী জনতা তাঁকে ঘিরে কার্যত, ‘গো-ব্যাক স্লোগান দিতে থাকেন।

ওদিকে আবার রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসুর গাড়ি মানববন্ধনের কাছে চলে আসতেই ক্ষোভ উগড়ে দেন প্রতিবাদী জনতা। একসঙ্গে প্রায় কয়েকশো লোক ধেয়ে যান মন্ত্রীর গাড়ির দিকে।

সুজিতের অভিযোগ, তাঁর গাড়িতে লক্ষ্য করে বোতলও ছোঁড়া হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় ধর্মতলা মোড়ে। তবে সুজিতের গাড়ি থামেনি। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ধরে গাড়ি নিয়ে সোজা এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি। চলন্ত গাড়িরই পিছনের অংশে চড় থাপ্পড় মারেন কেউ কেউ।

আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।