সংক্ষিপ্ত

তার ঠিক পাঁচ বছর পর, ১৮৮৮ সালে বিডন স্ট্রিটে ‘স্টার’-এর ঠিকানা বদল হয়। 

ঐতিহ্যমণ্ডিত স্টার থিয়েটারের নাম বদল শুধুই সময়ের অপেক্ষা। বড় সিদ্ধান্ত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

স্টার থিয়েটার নিজের নামে না হওয়ায় তিনি যে কতটা আঘাত পেয়েছিলেন, তা নিজেই আত্মজীবনীতে লিখে গেছিলেন নটী বিনোদিনী। এরপর মাঝে কেটে গেছে ১৪১টা বছর। তবে এত দিনে সেই প্রতারিত বিনোদিনীর নাম জুড়ে যেতে চলেছে স্টার থিয়েটারের সঙ্গে। সৌজন্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সোমবার, সন্দেশখালির সভা থেকে তিনি এই কথা জানান। মমতা ঘোষণা করেন যে, নটী বিনোদিনীর নামে এই প্রেক্ষাগৃহের নামকরণ করা হবে। অনেকের মতে, এতদিন বঞ্চনা করা হয়েছিল বিনোদিনীকে। শেষপর্যন্ত, তিনি তাঁর যোগ্য স্বীকৃতি পেলেন ২০২৪ সালে।

আজ থেকে সেই ১৪১ বছর আগে, ১৮৮৩ সালে উত্তর কলকাতারই বিডন স্ট্রিটে প্রথম তৈরি হয়েছিল স্টার থিয়েটার। সেই সময় নাট্যব্যক্তিত্ব গিরিশচন্দ্র ঘোষ বিনোদিনীকে স্টার থিয়েটার তৈরি করার জন্য টাকা জোগাড় করার অনুরোধ করেছিলেন।বলা হয়েছিল যে, তাঁর নামেই নাম রাখা হবে সেই থিয়েটারের। নটী বিনোদিনীর লেখা থেকে জানা যায়, “এই যে থিয়েটার হাউস্ হইবে, ইহা তোমার নামের সহিত যোগ থাকিবে। তাহা হইলে তোমার মৃত্যুর পরও তোমার নামটটি বজায় থাকিবে।”

প্রথমে ঠিক হয়েছিল, প্রেক্ষাগৃহের নাম রাখা হবে ‘বি’থিয়েটার। তাতে অবশ্য উৎসাহ পান বিনোদিনী। কিন্যু গিরিশের অনুরোধ ফেলতে পারেননি তিনি। বিনোদিনী তাঁর ভক্ত গুর্মুখ রায়ের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছিলেন স্টার থিয়েটার তৈরির জন্য। তারপর সেই টাকাতেই শুরু হয় থিয়েটার তৈরির কাজ। তবে থিয়েটার উদ্বোধনের কয়েক সপ্তাহ আগে বিনোদিনী জানতে পারেন যে, ‘নাম’পাল্টে গেছে।

নতুন থিয়েটারের রেজিস্ট্রি হয়েছে ‘স্টার’নামে। বিনোদিনীর নামে ‘নাম’ রাখলে তৎকালীন সমাজ আপত্তি তুলতে পারে সেই যুক্তিতেই শেষ লগ্নে হাতিবাগানের প্রেক্ষাগৃহের নাম রাখা হয় স্টার থিয়েটার। কিন্তু কারা এই সুশীল সমাজ?

এই কথা জানতে পেরে অনেক কিছু বলতে চেয়েছিলেন নটী বিনোদিনী। কিন্তু পারেননি। পরে অবশ্য তিনি বোঝেন যে, তাঁর সঙ্গে রীতিমতো ছলনা করা হয়েছে। বিনোদিনী নিজের আত্মজীবনীতে লেখেন, “আমি স্বপ্নেও ভাবি নাই যে, উঁহারা ছলনা দ্বারা আমার সহিত এমনভাবে অসৎ ব্যবহার করিবেন।”

তার ঠিক পাঁচ বছর পর, ১৮৮৮ সালে বিডন স্ট্রিটে ‘স্টার’-এর ঠিকানা বদল হয়। উত্তর কলকাতার হাতিবাগানের কর্নওয়ালিস স্ট্রিট, যা বর্তমানে বিধান সরণি নামে পরিচিতি, সেখানে দ্বিতীয় স্টার থিয়েটার তৈরি হয়। হাতিবাগানের এই স্টার থিয়েটার তৈরিতে সরাসরি অবশ্য কোনও টাকা দেননি বিনোদিনী। এমনকি, হাতিবাগানের স্টার থিয়েটারে কোনওদিন নিজে অভিনয়ও করেননি তিনি। কিন্তু নতুন স্টার থিয়েটার গড়ার জন্য সেই সময় নাট্য ব্যক্তিত্ব অমৃতলাল বসু এবং ধর্মদাস সুরেরা স্টারের সঙ্গে বিনোদিনীর জনপ্রিয়তাকে বেশ ভালোমতোই কাজে লাগিয়েছিলেন।

জানা যায়, বিডন স্ট্রিটের প্রথম ‘স্টার থিয়েটার’এরপর নানা হাত বদল হয়ে নাম হয় ‘মনমোহন থিয়েটার’। ওদিকে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ তৈরির সময়, গত ১৯২৮ সালে সেই ‘স্টার’আবার ভেঙে দেয় ব্রিটিশরা। কিন্তু বিনোদিনী এবং স্টারের সম্মিলিত নাম ও মাহাত্ম্য এমনই যে, পরবর্তী সময়তেও হাতিবাগানের স্টার থিয়েটারের সঙ্গে মানুষ নটী বিনোদিনীর স্মৃতিকে আগলে রেখেছেন।

আর এটা ২০২৪, যুগ বদলে গেছে। সুশীল সমাজের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতাকে কার্যত উড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে চলেছে মহিলারা। জমানা বদলে গেছে এবং এবার সেই স্টারের সঙ্গে এতদিনে জুড়ে গেল নটী বিনোদিনীর নাম। ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। এদিকে এই নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অভিনেত্রী রুক্মিনী মৈত্র।

নারীদের সম্মান জানানোর পাশাপাশি ১৪১ বছরের লড়াই জিততে সাহায্য করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। আসন্ন ‘বিনোদিনী’ ছবিটিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করছেন রুক্মিনী। তৃণমূল সাংসদ এবং অভিনেতা দেবের প্রযোজনায় এই ছবিটি তৈরি হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী তথা নাট্যব্যক্তিত্ব ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, “নটী বিনোদিনীকে যোগ্য সম্মান দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেইসঙ্গে, গত ১৫০ বছরের ইতিহাসকে সম্মান জানালেন তিনি।”

আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।