সংক্ষিপ্ত
- মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার ঘটনা
- দই দিয়ে ক্যান্সার সারানোর দাবি এক ওঝার
- বুজরুকির কারবার বন্ধ করতে গিয়ে আক্রান্ত পুলিশ
- পুলিশি অভিযানে ক্ষুব্ধ রোগীরা
মন্ত্রঃপুত দই পোড়া দিয়ে নাকি সারানো যায় মারণ ক্যান্সার। এমনই দাবি করে দিব্যি জমিয়ে চলছিল বুজরুকির কারবার। ব্যয়বহুল চিকিৎসার বদলে সস্তার বুজরুকিতেই আশ্বাস রেখেছিলেন অসংখ্য মানুষও। সেই বিশ্বাস এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে পুলিশ এবং বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যদের উপরেই হামলা চালালো রোগী এবং তাঁদের পরিবার।
বৃহস্পতিবার এমন ঘটনাতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার খলিফাবাদ গ্রাম। অভিযোগ, সেই গ্রামেই আমজাদ শেখ নামে এক ব্যক্তি ক্যান্সার সারানোর নাম করে এই বুজরুকির কারবার চালাত। কয়েকমাসেই সেই কারবার ফুলে, ফেঁপে উঠেছিল। দূরদূরান্ত থেকে সেখানে ভিড় জমাতেন ক্যান্সার রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়রা। এই বুজরুকি কারবারের খবর পেয়ে এলাকায় পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসন এবং বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা। এর পরেই এলাকা ছেড়ে পালায় অভিযুক্ত আমজাদ শেখ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আচমকাই আমজাদ শেখের খোঁজে গ্রামে হানা দেয় পুলিশ। তখনই পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। আমজাদ শেখের ডেরায় ভিড় জমানো রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়রাই উল্টে পুলিশ এবং বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যদের উপরে হামলা চালায়।
ইট,পাথর আর লাঠি দিয়ে পুলিশ ও তাদের গাড়ি লক্ষ্য করে আক্রমণ শুরু হয়। মুড়ি- মুড়কির মতো পুলিশকে লক্ষ্য করে পড়তে থাকে বড় বড় ইটের টুকরো। ইটের আঘাতে গুরুতর জখম হয় হারিহর পাড়া থানার ওসি আব্দুস সালাম- সহ প্রায় ১২জন পুলিশকর্মী। এ ছাড়াও ওই উত্তেজিত জনতার ছোড়া ইটের আঘাতে আহত হয় স্থানীয় মানুষজনও। গুরুতর জখম অবস্থায় থনার ওসিকে কোনরকমে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। পরে তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ দিকে আমজাদের খোঁজে চলছে চিরুনি তল্লাশিও। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি হরিহরপাড়ার খলিলাবাদ গ্রামে পেশায় দর্জি আমজাদ শেখ রাতারাতি মন্ত্রপুত দই দিয়ে শরীরের যে কোনও স্থানে ক্যান্সার সরিয়ে দিচ্ছেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই আশপাশের ভগীরথপুর,রেজিনগর,বেলডাঙ্গা ছাড়াও জেলার ডোমকল,জঙ্গিপুর,কান্দি,লালবাগ থেকে হাজারে হাজারে মানুষ কাকভোরে আমজাদ শেখের কাছে দইয়ের হাঁড়ি নিয়ে এসে হাজির হচ্ছেন। ভিড় এতই বাড়তে থাকে যে,তা গ্রাম ছাড়িয়ে বড় রাস্তা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। কার্যত আমজাদের এই পসার ঘিরে এলাকায় কার্যত মেলা বসে যায় এলাকায়। সব মিলিয়ে অন্ধ বিশ্বাসের কারবার রমরমিয়ে চলছিল।
যদিও, এ ক্ষেত্রে টাকা পয়সার লেনদেনের কোনও অভিযোগ এখনও পর্যন্ত মেলেনি। আমজাদের কাছে চিকিৎসা করাতে আসা রোগীর এবং তাঁদের পরিবারের দাবি, ‘আমজাদ গরিব মানুষের ভাল করছিলেন। কোনও পয়সা না নিয়েই চিকিৎসা হচ্ছিল। হাসপাতাল, নার্সিংহোমে গেলে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়। আমাদের মতো গরিব মানুষদের সেই সামর্থ্য নেই। পুলিশ জোর করে ওনাকে এলাকা ছাড়া করেছে।'
ঘটনায় জেলা বিজ্ঞান মঞ্চের সম্পাদক সজল বিশ্বাস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,'বুজরুকিতে ভরসা রেখে আজ মানুষ আমাদের উপরে হামলা চালালো। আগামী দিনে মানুষকে আরও বেশি করে বিজ্ঞানমনষ্ক করা ছাড়া এই ধরনের অন্ধ বিশ্বাস বন্ধ করা অসম্ভব।'