সংক্ষিপ্ত
১ টাকা মূল্যে চপ বেচে চলেছেন হিমাংশু সেন। রীতিমত দিশা দেখাচ্ছেন বাংলার বেকারদের।
মুখ্যমন্ত্রীর চপ শিল্পের কটাক্ষকে হার মানিয়ে ১ টাকা মূল্যে চপ বেচে চলেছেন হিমাংশু সেন। এই গল্প খুব সাধারণ ঘরের এক ব্যবসায়ীর। কিন্তু তার মধ্যেই অসাধারণ হয়ে উঠেছেন তিনি। রীতিমত দিশা দেখাচ্ছেন বাংলার বেকারদের। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার পাঁচড়ার চপ-তেলেভাজা বিক্রেতা হিমাংশু সেন। তিনি মনে করেন এই কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও ষোল আনা অর্থাৎ ১ টাকা পিস দরে ‘চপ’ ও অন্য তেলে ভাজা বিক্রি করেও বিত্তশালী হওয়া যায়। শুধু মনে করাই নয়,বাস্তবে সেটা তিনি করেও দেখিয়ে চলেছেন।
চপ বিক্রেতা হিমাংশুবাবুর এমন ব্যবসায়ীক কর্মকাণ্ডাই এলাকার বেকারদের আত্মনির্ভর হতে সাহায্য করছে। যা চাক্ষুষ করে অনেকে এখন বলতে শুরু করেছেন,মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চপ শিল্প নিয়ে হক কথাই বলেছিলেন। জামালপুরের পাঁচড়া গ্রামের দক্ষিনপাড়ায় বাড়ি হিমাংশু সেনের। বাড়ির কাছেই রয়েছে তাঁর প্রসিদ্ধ চপ-তেলে ভাজার দোকান। প্রতিদিন দুপুর ৩ টায় খুলে যায় তাঁর চপের দোকান। তারপর থেকেই পরিবারের সবাই মিলে দোকান চালান। দোকানের এক ধারে বসে গ্যাসের উনুনে গরম তেলের কড়াইয়ে ফুলুড়ি, সিঙ্গারা, ভেজিটেবিল চপ,আলুর চপ এই সবকিছুই ভাজেন হিমাংশু বাবু ।
এছাড়াও দোকানে থাকে ঘুগনি এবং অল্পস্বল্প করে রসগোল্লা,পান্তুয়া, ল্যাংচা ও মাখা সন্দেশ। তবে চপ বিক্রিই তাঁর মূল ব্যবসা । দোকান খোলার কিছু সময় পর থেকেই ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে শুরু করে হিমাংশু বাবুর দোকানে। ক্রেতাদের সামলান হিমাংশু বাবুর স্ত্রী বন্দনাদেবী, ছেলে কাশিনাথ ও পুত্রবধূ শম্পা। চপ ভাজা থেকে শুরু করে চপ, ঘুগনি বিক্রি-এই দুই কাজে রাত ৯ টা পর্যন্ত সেন পরিবারের কেউ একমুহুর্ত ফুরসত পান না।
প্রায় ৩০ বছর ধরে ১ টাকা মূল্যে চপ-তেলেভাজা বিক্রি করেই হিমাংশুবাবু ও তাঁর পরিবার এখন এলাকার বিত্তশালীদের মধ্যে একজন হয়ে উঠেছেন। দুর্মূল্যের বাজারেও ১টাকা পিস দরে চপ-তেলে ভাজা বিক্রী করে লাভের মুখ দেখার ব্যবসায়িক রহস্যটা কি? এই প্রশ্নের উত্তরে হিমাংশু সেন বলেন,তাঁদের পরিবার এক সময়ে আর্থিক ভাবে অত্যন্ত দুর্বল ছিল। রোজগারের বিকল্প আর কোনও পথ সেভাবে খুঁজে না পেয়ে তাঁর বাবা বিশ্বনাথ সেন অনেক বছর আছে বাড়ি লাগোয়া জায়গায় চপের দোকান খুলে বসেন।
তাঁর বাবা এলাকার মানুষের আর্থিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে তখন ৮০ পয়সা পিস দরে চপ-তেলে ভাজা বিক্রী করা শুরু করেছিলেন। এর পর বেশ কয়েক বছর হল তিনি মাত্র ২০ পয়সা দাম বাড়িয়ে ১ টাকা পিস দরেই চপ-তেলেভাজা বিক্রী করে চলেছেন। শুধু এক প্লেট ঘুগনির দাম ২ টাকা নেন বলে হিমাংশু বাবু বলেন। হিমাংশুবাবু দাবি করেন, এলাকার গরিব, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরাই তাঁর দোকানের ১ টাকা মূল্যের চপ-তেলেভাজা ও ২ টাকা প্লেটের ঘুগনির সবথেকে বড় ক্রেতা। এছাড়াও দূর-দূরান্তের ক্রেতা তো রয়েইছে।
প্রতিদিন ১০ কেজি বেসনের চপ- তেলেভাজা’ বিক্রী হয় হিমাংশুবাবুর দোকানে। শুধু ১০ কেজি বেসনই নয়। এর সঙ্গে প্রতিদিন লাগে ১ বস্তা আলু, ৫ কেজি মটর, হাজার টাকার সরষের তেল সহ অন্যান্য সামগ্রী। হিমাংশু বাবু জানান,এইসব সামগ্রী কিনে দোকান চালানোর জন্যে প্রতিদিন তার প্রায় ৩৫০০ টাকার মতো খরচ হয়। ১ টাকা পিস দরে চপ- তেলেভাজা আর ২ টা প্লেট দরে ঘুগনি বিক্রী করেও গড়ে প্রতিদিন ৫০০- ৭০০ টাকা লাভ থাকে বলে হিমাংশু বাবু জানান।
সেই লাভের পয়সাতেই তিনি সংসার চালানোর পাশাপাশি মেয়ে কেয়াকে উচ্চশিক্ষিত করেছেন। এম এ ও বিএড পাশ করা পাস করা মেয়ের বিয়েও তিন বছর আগে ধুমধাম করে দিয়েছেন। ছেলের ছেলে অর্থাৎ নাতি কুশল ও নাতনি কৃত্তিকাকেও উচ্চ শিক্ষিত করার স্বপ্ন নিয়ে গ্রামের প্রথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করেছেন হিমাংশুবাবু। এছাড়াও চপ বিক্রীর লাভের পয়সা দিয়েই তিনি পরিবারের সাবেকি বাড়িটিকে ঝাঁ চকচকে বানিয়েছেন। একই সঙ্গে চপের দোকানের লাগোয়া জায়গায় সম্প্রতি নতুন একটি দোতলা বাড়িও তৈরি করেছেন।
নূন্যতম মূল্যে অধিক বিক্রী-ই তাঁর ব্যবসায়িক সাফল্যের চাবিকাঠি বলে হিমাংশু সেন জানিয়েছেন। পাঁচড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান লালু হেমব্রম জানান, চপ-তেলেভাজার দোকান করে জীবনে বড় হওয়া যায় বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন। তারজন্য বিরোধীরা ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করতে ছাড়েননি। কিন্তু বাস্তবেই পাঁচড়ার হিমাংশু সেন প্রমাণ করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ভুল কিছু বলেননি।