সংক্ষিপ্ত
করোনা লকডাউনের মধ্যেই নারদকাণ্ড নিয়ে রাজ্যজুড়ে শোরগোল
সোমবার সকালেই গ্রেফতার ২ মন্ত্রী, ১ বিধায়ক-সহ ৪ নেতা
এই গ্রেফতারি আসলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে দাবি করা হচ্ছে
এই নেতাদের প্রত্যেককেই ভিডিওয় উরকোচ নিতে দেখা গিয়েছিল
ক্যামেরার সামনেই টাকা নিতে গিয়েছিল তাঁদের। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই প্রকাশ্যে এসেছিল নারদ স্টিং অপারেশনের ভিডিও। রাজ্যের তৎকালীন ৪ জন মন্ত্রী, শাসক দলের বেশ কয়েকজন সাংসদ এবং নেতাদের, সেই ভিডিও ফুটেজগুলিতে উৎকোচ নিতে দেখা গিয়েছিল। সেই ফুটেজগুলি যে সত্যিকারের, কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি থেকে তাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপরেও বারবার এই গ্রেফতারির পিছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ উঠছে। কিন্তু, কেন? সত্য়িই কি এর পিছনে কোনও রাজনীতি আছে?
আপাত দৃষ্টিতে ৪ অভিযুক্ত হেভিওয়েট নেতার গ্রেফতারি, স্বাভাবিক তদন্ত প্রক্রিয়ার অংশ হলেও, কয়েকটি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
প্রথমত, ২০১৭ সালে এই মামলার তদন্তের ভার হাতে নিয়েছিল সিবিআই। তারপর ৫ বছর কেটে গিয়েছে। তার উপর বাংলায় এখন করোনা পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল হয়ে উঠেছে। লকডডাউন জারি করা হয়েছে। আদালত গ্রেফতারির ক্ষেত্রে অনেক বিচার-বিবেচনা করার সুপারিশ করেছে। এই অবস্থায় কেন হঠাৎ এখনই এই ৪জনকে গ্রেফতার করা হল?
দ্বিতীয়ত, চার্জশিট পেশের জন্য অনুমতি নেওয়ার যে সময় বেছে নিয়েছে সিবিআই, তাই নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ঠিক যে সময় বিধানসভা ভেঙে দেওয়া হয়েছে, স্পিকারের পদ খালি, সেই সময়ই অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। স্পিকারের পদ খালি থাকার সুযোগ নিয়ে রাজ্যপালের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়।
তৃতীয়ত, যে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁরা কেউই ফেরার আসামী নন। দুজন রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী এবং একজন বিধায়ক। আরেকজনও হেভিওয়েট রাজনৈতিক নেতা। কাজেই বিনা নোটিশ-এ তাঁদের বাড়িতে হানা দিয়ে নিজাম প্যালেসে তুলে এনে যেভাবে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
চতুর্থত, ৩ তৃণমূল বিধায়ক ও ১ তৃণমূল-বিজেপি ত্যাগী নেতাকে গ্রেফতার করা হলেও, এই মামলার এফআইআর-এ নাম থাকা শুভেন্দু অধিকারী, সৌগত রায়, অপরূপা পোদ্দার, কাকলী ঘোষ দস্তিদার-দের মতো বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়নি। সিবিআই-এর দাবি, লোকসভার স্পিকার এই বিষযে অনুমতি দেননি। বস্তুত, সুমিত্রা মহাজন স্পিকার থাকার সময় থেকে তারা ৮টি চিঠি দিয়েছে, কিন্তু, এখনও সেই অনুমতি পাওয়া যায়নি। কেন এতদিনেও সেই অনুমতি দেওয়া হয়নি, সেই প্রশ্নও উঠছে।
পঞ্চমত, গ্রেফতার করা হয়নি মুকুল রায়, শঙ্কুদেব পণ্ডাকেও। সিবিআই-এর যুক্তি, এঁদের সরাসরি টাকা নিতে দেখা যায়নি, মামলা দায়ের করার মতো যথেষ্ট প্রমাণাদি নেই। অথচ, স্টিং অপারেশনের ভিডিওতে আইপিএস অফিসার এসএমএস মির্জাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, তিনি মুকুল রায়ের হয়ে টাকা তোলেন। আর শঙ্কুদেবও ভিডিওর সামনেই উৎকোচ চেয়েছিলেন। এগুিলো কী যথেষ্ট প্রমাণ নয়?