সংক্ষিপ্ত
মুর্শিদাবাদের নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের নিয়ে বিশেষ কর্মসূচি। চালু হল জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান ‘স্কুল ডাকছে’।
কথায় বলে মানুষ নাকি 'অভ্যাসের দাস' । আর সেই 'অভ্যাস' ই এখন রীতিমতো ছাড়াতে গিয়ে নাকানি-চোবানি খেতে হচ্ছে প্রশাসনিক কর্তা থেকে শুরু করে শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকদের। টানা দীর্ঘ সময় ধরে স্কুল (School) বন্ধ থাকার পর তা চালু হলেও এরপর এক নিত্যনতুন সমস্যা (Problems) দানা বাঁধতে শুরু করেছে। আর সে ক্ষেত্রে সবথেকে বড় সমস্যা হচ্ছে যাদের জন্য এই স্কুল চালু করা সেই 'পড়ুয়ারা'(Students) রীতিমতো দীর্ঘদিনের স্কুল না যাওয়ার 'অভ্যাস'কেই কার্যত নিজেদের 'কুঅভ্যাস' বানিয়ে ফেলেছে।
যে কারণে মুর্শিদাবাদে নতুনভাবে 'শিক্ষার্থী ক্রাইসিস' এর মধ্যে পড়ে গিয়েছে জেলার উচ্চ বিদ্যালয়গুলি। এমন সংকটময় অবস্থায় এই সামাজিক ব্যাধি দ্রুত দূর করে পড়ুয়াদের মধ্যে বিদ্যালয়মুখী হওয়ার প্রবণতা জাগাতে এবার মাঠে নামলো মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে 'সমগ্র শিক্ষা মিশন' ও লিভার ফাউন্ডেশন এর মতন প্রতিষ্ঠান।
মুর্শিদাবাদের নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের নিয়ে জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান ‘স্কুল ডাকছে’ কর্মসূচি চালু করাা হলো মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদীর মাধ্যমে। পড়ুয়াদের স্কুল প্রাঙ্গনে ফিরিয়ে আনতে সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষের ভূমিকা নিয়ে সচেতনতা বার্তা দিতেই এই অভিনব ভাবনা বলে জানা গিয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের মধ্যে মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে ’স্কুল ডাকছে’ কর্মসূচির সূচনা। আগামী দিনে অন্যান্য জেলাতেও এই কর্মসূচি চালু হবে বলে জানা গিয়েছে।
জেলাশাসক ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনেরা তাদের সুচিন্তিত মতামত দিচ্ছেন এই ভাবনাকে আগাামী দিনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
সম্প্রতি শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশ মেনে রাজ্যজুড়ে স্কুলে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পঠনপাঠন শুরু হয়েছে। স্কুল খোলার দুই সপ্তাহ পরেও স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে কম। স্কুলছুটদের শিক্ষাঙ্গনে ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যেই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ময়দানে নেমেছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের বুঝিয়ে পড়ুয়াদের স্কুলে ফিরিয়ে আনছেন।
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এই ভূমিকায় স্কুলের উপস্থিতির হার কিছুটা হলেও বেড়েছে। এবার পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া স্কুলছুটদের স্কুলের গন্ডিতে ফিরিয়ে আনতে মুর্শিদাবাদে 'সমগ্র শিক্ষা মিশন ও লিভার ফাউন্ডেশন ‘স্কুল ডাকছে’ ব্যানারে যৌথভাবে উদ্যোগ নিয়ে ময়দানে নেমেছে। শিক্ষাঙ্গন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া পড়ুয়াদের ফিরিয়ে আনতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাশাপাশি শিক্ষাবন্ধু, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য সহ সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষকে আহ্বান জানানো হচ্ছে।
জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী বলেন, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার পরে স্কুল খুলেছে। এই দীর্ঘ সময়ে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের অনেক পড়ুয়া স্কুলছুট হয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে, অনেক পড়ুয়া ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করছে। অনেকে আবার সংসারের হাল ধরতে চাষবাস বা দিনমজুরের কাজ করছে। এখনও পর্যন্ত স্কুলে গড় উপস্থিতির হার ৫৫-৬০ শতাংশ। কোনও পড়ুয়াকে স্কুলের বাইরে রাখা চলবে না। তাদের স্কুলে ফিরিয়ে আনতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে একজোটে কাজ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, মুর্শিদাবাদ জেলার শহরাঞ্চলের স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার খানিকটা যথাযথ হলেও, ডোমকল, জলঙ্গি ইসলামপুর, হরিহরপাড়া প্রভৃতি সীমান্ত এলাকার স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার তথৈবচ। এখন দেখার এই 'স্কুল ডাকছে'এমন অভিনব কর্মসূচি মুর্শিদাবাদের গণ্ডি পেরিয়ে আগামী দিনে রাজ্যের অন্যান্য জেলায় বিদ্যালয়গুলিতে 'পড়ুয়া ক্রাইসিস' এর সমস্যা কাটাতে কতখানি উপযোগী হয়ে ওঠে।