সংক্ষিপ্ত
এই উদ্যোগের লক্ষ্য একটাই। এখনও যারা বিদ্যালয়ের চৌকাঠে পা রাখেনি তাদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া।
আজও যেন সমাজের বুকে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন থেকে শুরু করে তাদের পরিবারের সন্তানদের শিক্ষার আঙ্গিনায় আনতে অনেক ক্ষেত্রেই অবহেলা লক্ষ্য করা যায়। আর সেই অবহেলা অবমাননাকে দূরে সরিয়ে সকল রকম ভেদাভেদ ভুলে নয়া নজির সৃষ্টি করতে এগিয়ে এল মুর্শিদাবাদ শহরের একদল সংবেদনশীল মানুষ। এমন নজিরবিহীন ঘটনাকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন সকলে।
তাই পৌষের শুরুতেই আদিবাসী কচিকাঁচাদের বিদ্যালয়মুখী থেকে শুরু করে নাচে গানে বনভোজনের আয়োজন করল 'সময়িতা'। উদ্দেশ্য আদিবাসী (Adivasi) শিশু কিশোরদের (Children) স্কুলমুখী (School) করে তোলা। আর তাতেই মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) ডাহাপাড়া এলাকায় আদিবাসী পাড়ার ছাত্ররা গ্রামে অন্যন্যদের সঙ্গে মঙ্গলবার(Tuesday) মেতে উঠলেন। এমনকি তাদের সঙ্গে গা ভাসালেন মুর্শিদাবাদ চক্রের এস আই হাফিজুর রহমান, ভগবানগোলার এ আই অফ স্কুল তাজরুল ইসলাম প্রমুখ।
পরে তাজরুল ইসলাম বলেন, এই পিকনিক উপলক্ষে এলাকার অভিভাবকদের সঙ্গে ভাব বিনিময় করা গেল। সেই সঙ্গে কচিকাঁচারা যাতে বিদ্যালয় মুখী হয় সেই বিষয়ে তাদের সচেতন করা হল"। যাদবপুর বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়াকালীন ২০১৫ সালে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় লালবাগের বাসিন্দা কেমেস্ট্রির ছাত্রী সময়িতা হালদার। তাকে স্মরণ করে স্থানীয় কিছু উদ্যোগী মানুষের চেষ্টায় গড়ে ওঠে একটি ট্রাস্ট। ওই ট্রাস্ট প্রতি বছর শিক্ষা,পরিবেশ, সমাজ সচেতনতামূলক পিকনিকের আয়োজন করে।
এবছর প্রায় ১৫০ জন কচিকাঁচা ও তাদের অভিভাবক মিলিয়ে মোট ২৮০ জনকে নিয়ে ওই বনভোজনের ব্যবস্থা করা হয় । ওই আয়োজনে সকালের কফি থেকে ফুলকো লুচি ,আলুর দম। দুপুরের মেনুতে ছিল সরু চালের ভাত, কষা মাংস, নলেন গুড়ের রসগোল্লা এবং শেষ পাতে ছিল চাটনি । শুধু ভুরিভোজ নয়, ওই কচিকাঁচাদের নিয়ে আনন্দে মেতে উঠতে নাচ গানের আয়োজন করা হয়।
এই উদ্যোগের লক্ষ্য একটাই। এখনও যারা বিদ্যালয়ের চৌকাঠে পা রাখেনি তাদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া। এই ব্যাপারে সংস্থার সম্পাদক তথা সময়িতার বাবা অনিল হালদার বলেন, “আমরা লক ডাউনের সময় ওই এলাকার আদিবাসী গ্রামের সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছিলাম। তখন মনে হয়েছিল পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের নিয়ে বনভোজনের আয়োজন করব, সেই সূত্র ধরেই আজকের এই অনুষ্ঠান।”
এদিকে ট্রাস্টের সভাপতি শিক্ষক শুভাশিস পাল রাজু বলেন, “শৈশবের শিক্ষা সব চেয়ে বড় শিক্ষা। এই সময়ে একটি শিশু যে শিক্ষা অর্জন করে সেটি তার চিরকাল মনে থাকে। তাই বনভোজনের মাধ্যমে তাদের মধ্যে যে উৎসাহ দেওয়া গিয়েছে, আমার মনে হয় এর মাধ্যমে তাদের স্কুল মুখী করা সহজ হবে। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই আমাদের এই আয়োজন।”