সংক্ষিপ্ত
- মমতার প্রশাসনিক বৈঠকে হাজির সব্যসাচী দত্ত
- প্রশ্নও করলেন রাজারহাট- নিউটাউনের বিধায়ক
- জলাজমি ভরাট নিয়ে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীকে
- মমতার অস্বস্তি বাড়াতেই কি অভিযোগ, উঠছে প্রশ্ন
সব্যসাচী দত্তকে নিয়ে তৃণমূলের অস্বস্তি যেন কাটার নয়। দিন কয়েক আগে মেয়র পদে ইস্তফা দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের অনশন মঞ্চে গিয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেছিলেন। যখন সবাই ধরে নিয়েছিলেন যে সব্যসাচীর সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্কে ইতি পড়েছে, তখনই মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে গিয়ে চমকে দিলেন সব্যসাচী দত্ত। শুধু বৈঠকে হাজির হওয়াই নয়, প্রশাসনিক বৈঠকেও অস্বস্তিকর প্রশ্ন করে দল এবং মুখ্যমন্ত্রীর বিড়ম্বনা বাড়ালেন তিনি।
এ দিন মধ্যমগ্রামে উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকেই জলাজমি এবং পুকুর ভরাট নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন রাজারহাট নিউটাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। প্রসঙ্গত মেয়র হিসেবে পদত্যাগ করার আগে এই জলাজমি ভরাট নিয়েই সরব হন সব্যসাচী। তখন তিনি অভিযোগ করেছিলেন, বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরেও অভিযোগ জানিয়ে কাজ হয়নি।
আরও পড়ুন- মুখ্যমন্ত্রী হয়েই বদলে গিয়েছেন মমতা, ইস্তফা দিয়েই বিস্ফোরক সব্যসাচী
এ দিন প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে উঠে সব্যসাচী বলেন, 'দিদি, আমার চাওয়ার কিছু নেই। শুধু দুটো জিনিস বলার। একটা সমস্যা হচ্ছে, বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয় থাকে না। আর আমাদের জেলায় পুকুর এবং জলাশয় ভরাট করাটা মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমার বিধানসভার পাশাপাশি রাজারহাটেও এই সমস্যা আছে। এর আগে যিনি জেলাশাসক, ছিলেন তাঁকেও চিঠি দিয়ে আমরা বিষয়টা জানিয়েছিলাম। মৎস্য দফতর যে জমিকে জলাজমি বলছে, সেটাকেই ভূমি দফতর বাস্তু জমি বলছে।'
সব্যসাচীর মুখে এই অভিযোগ শুনেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'এগুলো রেকর্ড দেখে চটপট সিদ্ধান্ত নিতে হয়। জলাজমি একদম যেন ভরাট না হয়। বিশেষত পুকুরগুলো যেন ভরাট না হয়।'
এর পরেও অবশ্য অভিযোগ করতে থাকেন সব্যসাচী। তিনি অভিযোগ করেন, বারাসতের একটি পঞ্চায়েত এলাকাতেও জলাজমি বুজিয়ে বাড়ি তৈরি হচ্ছে। সব্যসাচীর এই অভিযোগ শুনে কিছুটা রুষ্ট হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'তুইও পুরসভায় ছিলি। সবাই যখন থাকিস, চোখের সামনে দেখিস না। বিধানসভা অনুযায়ী প্রশ্ন করতে বলছি। তোর বিধানসভায় কিছু আছে নাকি বল।' তাতেও অবশ্য সব্যসাচী দমেননি। তিনি বলেন, জমির চরিত্র বদলের সময় যাতে সব দফতরকে জানানো হয়।
এর পরেই ভূমি দফতরের সচিবকে দফতরের ওয়েবসাইট এবং অ্যাপস নিয়ে সব্যসাচীকে জানাতে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। জমি সংক্রান্ত তথ্য জানার জন্য সব্যসাচীকে 'তথ্য অ্যাপস' ডাউনলোড করার পরামর্শও দেন তিনি।
তার পরেও রাজারহাট- নিউটাউনের বিধায়ক বলেন, 'রাজারহাট- তেইশটা ভেড়ি, বিয়াল্লিশটা ঝিল। প্রচুর মাছ ছাড়া হচ্ছে। জমি কার রেকর্ড নেই। মাছ ছাড়তে গিয়ে সমস্যা হয়।'
সব্যসাচীর উপস্থিতি এবং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্বই প্রশাসনিক বৈঠকের সবথেকে আকর্ষণীয় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। বিধায়ক হিসেবে তিনি প্রশাসনিক বৈঠকে প্রশ্ন করতেই পারেন, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই রাজারহাট- নিউটাউনের বিধায়ক জলাজমি ভরাট নিয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর অস্বস্তি বাড়ানোর চেষ্টা করলেন কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে। প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচনের পরে এটাই ছিল মুথ্যমন্ত্রীর প্রথম প্রশাসনিক বৈঠক।