সংক্ষিপ্ত
- মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ সব্যসাচী দত্তের
- ইস্তফা দেওয়ার পরেই বিস্ফোরক বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়র
- কৃষক শ্রমিকদের পাশে এখন দেখা যায় না মুখ্যমন্ত্রীকে
- শিক্ষকদের সমাবেশে গিয়ে আফশোস সব্যসাচীর
বিরোধী নেত্রী থাকার সময় মুখ্যমন্ত্রীকে শ্রমিক, কৃষকদের পাশে দেখা যেত। কিন্তু এখন আর তা দেখা যায় না। এ ভাবেই প্রকাশ্যে সরাসরি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করলেন বিধাননগরের সদ্য প্রাক্তন মেয়র সব্যসাচী দত্ত। বৃহস্পতিবার মেয়র পদে ইস্তফা দিয়েই তিনি বিকাশভবনের কাছে অনশনরত শিক্ষকদের সমাবেশে যান সব্যসাচী দত্ত। সেখানে গিয়েই বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই মন্তব্য করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার মেয়র পদে ইস্তফা দিয়েই সব্যসাচী অভিযোগ করেছিলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাতেই রোষে পড়তে হয়েছে তাঁকে। এমন কী, বেআইনি নির্মাণ রুখতে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে চিঠি দিয়েও কাজের কাজ হয়নি বলে অভিযোগ তাঁর। এর কিছুক্ষণের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষকদের বিক্ষোভে হাজির হয়ে দল এবং সরকারের বিরুদ্ধে আরও জোরালো আক্রমণ শানান সব্যসাচী দত্ত।
আরও পড়ুন- সব্যসাচীর অভিযোগ হাস্যকর, চূড়ান্ত পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়ে জবাব পার্থর
প্রথমে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে সব্যসাচী বলেন, 'সাতদিন ধরে আন্দোলন চালানোর পরে দফতরের মন্ত্রী বা উচ্চ নেতৃত্ব কর্ণপাত করতে পারছেন না। মনে হয় মন্ত্রীর এসি ঘরে ধুলো পড়ে গিয়েছে, মন্ত্রী অনেকদিন আসেননি।' শিক্ষকদের বিক্ষোভ সমাবেশে বিধাননগর পুরসভার পক্ষ থেকে পানীয় জল বা অস্থায়ী শৌচালয়েরও ব্যবস্থা করা হয়নি বলে অভিযোগ। সব্যসাচীর অবশ্য দাবি, এ সবই হয়েছে উপরমহলের নির্দেশে। কটাক্ষের সুরে তিনি বলেন, 'জল দেবে কেন, কারণ জল না দিয়ে আপনারা যদি মারা যান, তাহলে আপনাদের থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে।'
এর পরেই সরাসরি দলনেত্রীকেই নিশানা করে সব্যসাচী বলেন, 'যিনি আজকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, তিনি কিন্তু বিরোধী নেত্রী থাকার সময় শ্রমিকদের পাশে, কৃষকদের পাশে সবসময় ছুটে যেতেন। আজকে কী পরিহাস, আজ কিন্তু তা দেখা যাচ্ছে না। এই দলের জন্য অনেক রক্ত, ঘাম দিয়েছি এটা ভেবেই এখন কষ্ট হয়। এত বদলে যাব, আমরা ভাবতে পারিনি।'
গত ৫ জুলাই বিদ্যুৎ কর্মীদের সমাবেশে গিয়ে সব্যসাচী বকেয়া ডিএ-র বিরুদ্ধে সরব হন সব্যসাচী। এর পরেই তাঁকে মেয়র পদ থেকে সরাতে অনাস্থা আনে তৃণমূল। সেই প্রসঙ্গ তুলে সব্যসাচী বলেন, গত ৫ জুলাই বিদ্যুৎকর্মীদের সমাবেশে গিয়ে বিদ্যুৎমন্ত্রীর গোসার মুখে পড়ে গেলাম। বিদ্যুৎমন্ত্রী নাকি কাঁদতে কাঁদতে মুখ্যমন্ত্রীকে গিয়ে বলেন, আমায় মেয়র পদে রাখা যাবে না থেকে সরাতে হবে। এর পরেই আমাকে সরানোর জন্য রোজ চেষ্টা হতে লাগল। এত তাড়াহুড়ো করে চিঠি দিল যে আদালত নির্দেশ দিল যে চিঠিতে ভুল রয়েছে।'
সব্যসাচী অবশ্য দাবি করেন, নৈতিক কারণেই তিনি দল ছেড়েছেন। তৃণমূলকে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, 'মানুষ আমাকে ওই পদ দিয়েছিল, মানুষের পাশে থাকলে সেই পদ আবার ফিরে পাব। পদের উপর লোভ থাকলে এখানে আসতাম না। ঠান্ডা ঘরে বসে আনন্দে কাটাতাম।'
সব্যসাচী আরও অভিযোগ করেন, শিক্ষকদের জল না দেওয়া হলেও তাঁদের বিক্ষোভ মঞ্চ থেকে কিছুটা দূরে তৃণমূলের একুশে জুলাই সমাবেশের শিবিরে দলীয় কর্মীদের ডিম- ভাত খাওয়ানো হবে। আন্দোলনরত শিক্ষকদের মেরে তুলে দেওয়া হতে পারে বলেও আশঙ্কাপ্রকাশ করেন বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়র। সেরকম ঘটলেও তিনি শিক্ষকদের সঙ্গে মার খেতে তৈরি বলেও পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সব্যসাচী দত্ত।