সংক্ষিপ্ত

মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর মহকুমার ঘুনাথগঞ্জের মির্জা পাড়ার বাসিন্দা সামিউল শেখের জীবন বদলে গিয়েছে। এক টিকিটে 'কোটিপতি' বনে গিয়েছেন দিন আনা দিন খাওয়া সামিউল।

ভাগ্য দেবতা প্রসন্ন হতেই রাতারাতি দোকানি হলো কোটিপতি! লক্ষ্য নিজের অতীত মনে রেখেই ভবিষ্যতে এগিয়ে যেতে চাওয়া। ভাগ্য দেবতা প্রসন্ন হতেই বদলে গেল দিন! বাসস্ট্যান্ডের সামান্য এক চিলতে পানের দোকানি হয়ে গেল রাতারাতি কোটিপতি।এমন কাণ্ড ঘটে যেতেই এলাকাজুড়ে পাড়ার চায়ের দোকানের মোড় থেকে শুরু করে সেলুন, আট থেকে আশি সকলের মুখেই এখন একটাই কথা 'এমনটাও সম্ভব'। 

আর সেই সম্ভাবনাই রীতিমতো বাস্তব হয়ে উঠেছে মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) জঙ্গিপুর (Jangipur) মহকুমার রঘুনাথগঞ্জের মির্জা পাড়ার বাসিন্দা সামিউল শেখ এর জীবনী। এক টিকিটে (Lottery Ticket)'কোটিপতি'(millionaire) বনে গিয়েছেন দিন আনা দিন খাওয়া সামিউল। তারপর থেকেই শুরু হয়েছে তার সোনালী স্বপ্ন পূরণের ইচ্ছে। তবে এরই মধ্যে খানিকটা আতঙ্ক দানা বেঁধেছে তার মনে। এতগুলো টাকা ঠিক কীভাবে তিনি ব্যবহার করবেন তা এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না দিন আনা দিন খাওয়া এই মানুষটি। একদিকে পরিবারের ৩ কন্যা সন্তান সহ স্ত্রী নিয়ে প্রতিনিয়ত ভবিষ্যতে কিভাবে সংসারের হাল ফেরাবেন এই নিয়ে এতকাল ভেবে এসেছেন সামিউল। আর তারই মধ্যে আচমকাই ভাগ্যদেবতা তাঁর ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেওয়াই মোড় বদলে গিয়েছে জীবনের। 

এত কিছুর পরেও রবিবার সোজা সাপটা উত্তর দিয়ে শামিউল জানিয়ে দেয় যতই কোটিপতি হয়ে যায় না কেন নিজের অস্তিত্বকে বিসর্জন দিতে চায় না সে। তাইতো দিব্যি বলে ওঠে," দেখুন এতকাল তো ওই বাসস্ট্যান্ডের মোড়ে ছোট্ট দুই ফুট বাই দুই ফুট এর দোকান এই কোনরকমে ব্যবসা করে পরিবারের মুখে দু'বেলা দু'মুঠো অন্ন তুলে দিয়েছি। উপরওয়ালা আজ যখন মুখ তুলে তাকিয়ে ছিলেন তখন রাতারাতি নিজের পুরাতন দিনগুলো ভুলে যেতে পারি না। তাই এই ছোট্ট পানের ব্যবসা বন্ধ করব না। দরকার পড়লে পাশে অন্য কোন ব্যবসা করব কিন্তু যার মাধ্যমে ভাত রুটি জোগাড় হয় তাকে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়"। 

ছিপ ছিপে চেহারার সামিউলকে এখন এক নামে সকলেই জেনে। দুদিন আগে পর্যন্ত যারা তাকে দেখলে খুব একটা কথা বলতো না, এই ভেবে পাচ্ছে অভাব অনটনের জন্য ধার চেয়ে বসে সে। আজ তারাই সামিউলের কাছে এসে দিব্যি আড্ডা দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ তো গেল সামিউলের নিত্য দিনের কথা। কিন্তু তার পরিবার পরিজন তারাও একই ভাবে সামিউল'এর এমন ভাগ্য বদল এর ঘটনা রীতিমতো হতবাক এখনো যেন বিশ্বাস করে উঠতে পারছেন না নিজের চোখ কে। কি করে এইভাবে কোটিপতি হলো সামিউল সেই কথা জানতে গিয়ে জানা যায়, যখন শত চেষ্টা করেও ব্যবসা দাঁড় করাতে পারেনি সামিউল তখন মাঝে মধ্যে বাধ্য হয়ে লটারি টিকিট কাটতে শুরু করে। 

মনে একটাই আশা। যদিও কোনদিন প্রথম পুরস্কার জিতে যায় সে। অবশেষে সেই আশা পূরণ হয়েছে তার। এক টিকিটে ১ কোটির শিকে ছিঁড়েছে কপালে। জঙ্গিপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটা লটারির দোকান থেকে টিকিট কাটেন ওই পানের দোকানদার। লটারির ফলপ্রকাশ হতেই জানতে পারেন ১ কোটি টাকার প্রথম পুরস্কার পেয়েছে সে। প্রথমে বিশ্বাস করে উঠতে না পারলেও, আনন্দে আত্মহারা মির্জাপাড়ার সামিউল গ্রামের অন্যান্যদের দিয়ে ভালো করে টিকিটের ফলাফল মিলিয়ে দেখে। তারপরেই কেল্লা ফতে।

আগামিদিনে পরিবারের হাল ফেরানোর পাশাপাশি বড় ব্যবসা করার কথাও ভাবছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। পুরস্কারের টাকা দিয়ে নতুন বাড়ি কেনা সহ ৩ মেয়েকে উপযুক্তভাবে পাত্রস্থ করতে চান তিনি। এদিকে সামিউলের কোটিপতি বনে যওয়ার ঘটনায় গ্রামবাসী মিন্টু শেখ, মুজিবুর রহমান বলেন," ও বরাবরই আমাদেরকে বলতো একদিন ঠিক আমি পুরস্কার জিতবো। আর তা শেষ পর্যন্ত ফলে গেল। ও জীবনে প্রতিষ্ঠিত হোক আমরা সকলেই ওর পাশে আছি"।