সংক্ষিপ্ত
- নাবালক তান্ত্রিকের হাতে খুন বালক
- পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরের ঘটনা
- অভিযুক্ত নাবালককে গ্রেফতরা করেছে পুলিশ
নাবালকের তন্ত্রসাধনার বলি হল আরও এক নাবালক। মৃত নাবালকের নাম রুদ্র নায়েক(৭)। শনিবার রাতেই মৃত নাবালকের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ রাতে এলাকায় গিয়ে অভিযুক্ত নাবালককে গ্রেফতার করতে গেলে উত্তেজনা ছড়ায়। ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর গ্রামীণ থানার অন্তর্গত নিরঞ্জনবাড় এলাকার।
রুদ্রের মাথায় ভারী কিছু জিনিস দিয়ে আঘাত করে খুন করা হয়েছিল।পুলিশ এলাকায় গেলে ঘাতক তন্ত্রসাধক অভিযুক্ত নাবালককে ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়।ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর গ্রামীণ থানার অন্তর্গত নিরঞ্জনবাড় এলাকার।
জানা গিয়েছে,,নিরঞ্জনবাড় গ্রামের বাসিন্দা এক নাবালক বেশ কিছুদিন ধরেই তন্ত্র সাধনার গল্প শুনিয়ে গ্রামবাসীদের নজরে এসেছিল। কখনও তার উপরে কালি ঠাকুর, কখনো শীতলা, আবার কখনও মনসা ঠাকুর নাকি তার উপর ভর করছিল। ১৪ বছরের ওই বালক নাকি অনেককেই ভবিষ্যদ্বাণী করে দিচ্ছিল। কার বাড়িতে কখন চুরি হবে,কখন কার বাড়িতে আক্রমণ হতে পারে, সেসবই নাকি সে আগাম বলে দিচ্ছিল ৷ তার করা বেশ কিছু ভবিষ্যদ্বাণী নাকি মিলেও যাচ্ছিল।এর ফলে গ্রামের বাসিন্দারাও ওই বালকের অলৌকিক ক্ষমতার উপরে ভরসা করতে শুরু করছিল। এরই মাঝখানে শনিবার বিকেলে ঘটে যায় নৃশংস ঘটনা।
অভিযোগ, সাত বছরের রুদ্র নায়েক নাম সাত বছরের এক বালক শনিবার বিকেলে খেলতে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। অনেক রাত পর্যন্ত না ফেরায় ওই নাবালকের বাবা- মা তাকে খোঁজাখুঁজি করেন। রুদ্রর বাবা-মা তখন ওই নাবালক তান্ত্রিকের দ্বারস্থ হয়। যেহেতু সে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে, তাই তার কাছ থেকে ছেলের সন্ধান জানার চেষ্টা করে ওই দম্পতি। এরপরই রতন কোনও এক দেবীর ভরের নাটক করে। ভরের ঘোরে সে জানায়, রুদ্রকে দু' জন লোক অনেক দূরে নিয়ে চলে গেছে। কিন্তু রুদ্রর পরিবারের লোকজনের বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ জাগে। কারণ কয়েকদিন আগে ওই নাবালক তান্ত্রিক নাকি বলেছিল, এলাকার কোনও এক বাচ্চা ছেলের খুব ক্ষতি হতে চলেছে।
রুদ্রর পরিবারের লোকজন ওই নাবালক তান্ত্রিককে তাঁদের সন্তানকে ফিরিয়ে আনার জন্য তন্ত্রসাধনা করতে অনুরোধ করে। তাতে রাজি হয়নি ওই নাবালক। এর পরই নিখোঁজ নাবালকের পরিবারের লোকজন বলেন, বিষয়টি পুলিশকে জানানো হবে। পুলিশের কথা শুনেই নাবালক তান্ত্রিকে ভরের ঘোর কেটে যায়। উল্টোপাল্টা কথা বলতে শুরু করে সে ।তখনই রুদ্রের বাবা-মা ও প্রতিবেশীরা চাপ দিতেই ওই নাবালক তান্ত্রিক জানায়, পাশের ঘরে রয়েছে রুদ্র। সেখান থেকেই নিখোঁজ নাবালকের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকরা জানান প্রায় তিন ঘন্টা আগে মৃত্যু হয়েছে রুদ্রের। রুদ্রের মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
এর পরে এলাকার লোকজন উত্তেজিত হয়ে আক্রমণ করে ওই তান্ত্রিক নাবালকের বাড়িতে। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে এসে গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়ে। গ্রামবাসীরা দাবি করেন, অভিযুক্ত নাবালককে তাঁদের হাতে তুলে দিতে হবে। অভিযুক্তকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন গ্রামবাসীরা। পুলিশ কোনওমতে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে পরিবারের আট সদস্য-সহ ওই নাবালক তান্ত্রিককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।
পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে, ছেলের ভবিষ্যদ্বাণীকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার লক্ষ্য নিয়েই প্রতিবেশীদের বাড়িতে চুরি,ইট বৃষ্টির মতো বিভিন্ন রকম ঘটনা ঘটাতো ওই নাবালক তান্ত্রিকের পরিবার। সেই মতো রুদ্র নায়েককে যে খুন করা হবে, সেটা মাথায় রেখেই ওই তান্ত্রিক নাবালক জানিয়ে দিয়েছিল যে এলাকার একটি শিশুর চরম ক্ষতি হতে চলেছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, শনিবার বিকেলে প্রসাদের লোভ দেখিয়ে ঘরের মধ্যে ডেকে নিয়ে গিয়ে রুদ্রকে ভারী কিছু দিয়ে মাথায় আঘাত করে খুন করা হয়েছে। রাতেই তার দেহ অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা আর সম্ভব হয়নি।