সংক্ষিপ্ত

মুবারক শুধু সাপ ধরে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া বা সাপ নিয়ে সচেতনই করেন না। বাড়ির বাচ্চাদের কুসংস্কারছন্ন না করে সঠিক শিক্ষা দিতে বলেন।

বাংলার (West Bengal) সাপ (Snake) ধরতে ঝাড়খণ্ড (Jharkhand) থেকে ছুটে এসে গোখরো চিতি কিম্বা অজগর ধরে ছেড়ে দেন জঙ্গলে(Forest)। সাপ না মেরে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়ার বার্তা দেন(message of not killing snakes)। মোটর মেকানিকের কাজ করে সাপ বাঁচাতে আজ দুই রাজ্যে"স্নেক সেভার"বলে পরিচিত মুবারক আনসারী। 

সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় শ্রেণী কক্ষের ভেতর ঢুকে পড়েছিল একটি চিতি সাপ। সেই সাপ দেখে তখন শিক্ষক ছাত্র ছাত্রীদের ত্রাহি ত্রাহি রব। ছোট্ট মুবারক তখন হাতে করে সেই সাপ ধরে ছেড়ে দিয়ে আসে পাশের জঙ্গলে। 

সেই থেকেই সাপ ধরে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়ার হাতে খড়ি শুরু হয় ঝাড়খণ্ডের পাঞ্চেতের বাসিন্দা পেশায় মোটর মেকানিক মুবারক আনসারীর। বাংলার নেতুড়িয়া থানার সীমানা এবং ঝাড়খণ্ড রাজ্যের পাঞ্চেত জল বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকার অদূরের একটি মোটর সাইকেল সারাইয়ের গ্যারেজ রয়েছে মুবারকের। বেশ নায়কচিত চেহারার মুবারককে দেখে মনেই হবে না মোটর সাইকেলের মিস্ত্রি। কিন্তু আদতে মোটর সাইকেল সারাই করাই তার মূল পেশা। 

সারাদিন কাজের ব্যস্ততার ফাঁকে হঠাত যদি ফোন আসে বাড়িতে সাপ ঢুকেছে বা কুয়োর পড়ে রয়েছে গোখরো, তৎক্ষণাৎ মুবারক তাঁর সহযোগিকে নিয়ে মোটর সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে সাপ উদ্ধারের জন্য। বেশির ভাগ ফোনই যায় পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকার পাঞ্চেত লাগোয়া সড়বড়ি, পুয়াপুর, পারবেলিয়া, নেতুড়িয়া সহ রঘুনাথপুর এলাকা থেকে। 

বিশেষ পদ্ধতিতে সাপ উদ্ধার করার পর সেই সাপকে ছেড়ে দেওয়া হয় গড় পঞ্চকোটের জঙ্গলে। সাপ উদ্ধার করার পর সাপ কামড়ালে কিভাবে বাঁচতে হবে, এবং সাপকে না মেরে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়ার সচেতনতার বার্তা দেন মুবারক। 

মুবারক এও জানিয়ে দেয় সাপে কামড়ালে ওঝা গুনিনের কাছে নয়, নিয়ে যেতে হবে নিকটবর্তী হাসপাতালে। মুবারক শুধু সাপ ধরে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া বা সাপ নিয়ে সচেতনই করেন না। বাড়ির বাচ্চাদের কুসংস্কারছন্ন না করে সঠিক শিক্ষা দিতে বলেন। আবার করোনা আবহে রাস্তায় নেমে মুবারককে দেখা গেছে পথ চলতি মানুষকে কোভিড নিয়ে সচেতন করতে। 
সাপ ধরতে ধরতেই মোবারক বলেন করোনা থেকে বাঁচতে অবশ্যই ভ্যাকসিন নিতেই হবে। সাপ ধরার এই কর্মযজ্ঞে মোবারক আনসারী নিজেকে সঁপে দিয়েছেন। ঝাড়খন্ড বাংলা দুই রাজ্যের মানুষের কাছে সে আজ আর মুবারক আনসারী নয়, আজ তার পরিচিতি "স্নেক সেভার মুবারক বলে"।

এবিষয়ে  মুবারক আনসারির সোজা সাপ্টা জবাব সাপ বাঁচানোর নেশায় সেই স্কুল জীবন থেকে সাপ ধরে জঙ্গলে ছাড়ার কাজ শুরু করেছি। আজও চলছে। কারণ সাপ বাঁচলেই পরিবেশ বাঁচবে। কমবে ইঁদুরের সংখ্যা। সাপের কামড়ে মৃত্যুর হাত থেকেও বাঁচবে মানুষ। যতদিন বাঁচবো এই কাজ চালিয়ে যাব।
 বর্ষার সময় থেকে বর্ষার শেষ সময় অবধি পুরুলিয়ার ঝাড়খন্ড লাগোয়া গড় পঞ্চকোট এলাকায় সাপের উপদ্রব বেশি। বিভিন্ন প্রজাতির সাপ দেখা যায় লোকালয়ে। আর এই সময় সাপ উদ্ধারের জন্য বেশি ডাক পান মুবারক।