সংক্ষিপ্ত
ফুল দিয়ে সুগন্ধি ভেষজ আবির ও রং তৈরি করছে উলুবেড়িয়ার আশা ভবনের বিশেষভাবে সক্ষম ছেলে-মেয়েরা। এই বছরে উলুবেড়িয়ার আশা ভবনে তাই এখন জোরকদমে চলছে প্রস্তুতি।
ফুল দিয়ে সুগন্ধি ভেষজ আবির ও রং ( Herbal Abir and Colours ) তৈরি করছে উলুবেড়িয়ার (Uluberia) আশা ভবনের বিশেষভাবে সক্ষম ছেলে-মেয়েরা। 'ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে' বা 'ও শ্যাম যখন তখন', এই গানগুলো শুনলেই নস্ট্রালজিয়া কাজ করে বাঙালির। বিশেষ করে বসন্ত এলে মনে রং চড়ে প্রকৃতি প্রেমী থেকে সাহিত্যিক অনেকেরই। আর সেই মনের রং দিয়ে শরীর রাঙাতে তাই সকলে অপেক্ষা করে থাকে দোল পূর্ণিমার দিনের জন্য। তবে দোলের কেমিক্যাল রঙে অনেকের এলার্জি হয়। কারণ এই সমস্ত রঙে নানা ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করার ফলে চামড়ায় নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তাই ফুলসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি ভেষজ আবিরের চাহিদা এখন তুঙ্গে।
'আজ আমাদের ন্যাড়াপোড়া কাল আমাদের দোল।' আজ্ঞে হ্যাঁ, ইতিমধ্যে মন রাঙিয়ে গিয়েছে সবারই। আর ঠিক দুই দিন। তারপরই রাজ্য জুড়ে চলবে বাঙালির রঙের উৎসব দোল। আর এই দোল উৎসবে আনন্দে মেতে উঠতে অনেকেই খোঁজেন রঙিন সুগন্ধ মাখা আবির। এই বছরে উলুবেড়িয়ার আশা ভবনে তাই এখন জোরকদমে চলছে প্রস্তুতি। এই উৎসবে সামিল হতে বিশেষ সক্ষম ছেলেমেয়েরা তৈরি করছে সুগন্ধি ভেষজ আবির। প্রতি বছর দোলের ঠিক আগে এর চাহিদা বেশ ভালোই হয়। এবছরেও আবিরের চাহিদা ভালোই বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে কৃত্রিম আবিরের উৎপাদনই হয় সবচেয়ে বেশি। এই আবির একদিকে যেমন ত্বকের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। পাশাপাশি এই ধরণের আবির তৈরি করা হয় রেড অক্সাইড, মেটানিল ইয়েলো, ম্যালাকাইট গ্রিন ছাড়াও সীসা, ক্যাডমিয়ামের মতো ক্ষতিকারক রাসায়নিক দিয়ে। যার ফলে দোলের পর অধিকাংশ মানুষই ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় ভোগে। তবে সেদিক দিয়ে প্রাকৃতিক আবির বা ভেষজ আবিরে এই সমস্যা থাকে অনেক কম।
আরও পড়ুন, দোলের আগেই বসন্ত উৎসব পালন বাংলায়, সামিল স্কুল পড়ুয়া থেকে মহিলারাও
এই ধরণের আবির তৈরি হয় প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদান যেমন, গাঁদা ফুল, কাঁচা হলুদ, জবা, বিট, অপরাজিতা, পালং, গোলাপের নির্যাস দিয়ে। এই আবিরে রাসায়নিক থাকে নামমাত্র। উলুবেড়িয়ার আশা ভবনে বিশেষভাবে সক্ষম ছেলেমেয়েরা এখন ভেষজ সুগন্ধি আবির তৈরির কাজই করছে। বিভিন্ন ধরনের ফুল ও ট্যালকম পাউডার দিয়ে মোট ছয় রকম আবির এখানে তৈরি করা হয়। টাটকা গাঁদা, পলাশ, গোলাপ, অপরাজিতা এবং রজনীগন্ধা ফুল, ট্যালকম পাউডার ও নিম পাতা গুড়ো মিশিয়ে হলুদ, কমলা, গোলাপি, সবুজ, সাদা এবং নীল রঙের আবির তৈরি হয় এখানে। এই সুগন্ধি আবির শরীরের পক্ষে একেবারেই ক্ষতিকারক নয়। যদিও এর দামও এখন সকলের নাগালের মধ্যে। এই আবির বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও খোলাবাজারে বিক্রি হয়। দোলের আগে এর চাহিদা ভালোই বলে এমনটাই জানিয়েছেন উলুবেড়িয়া আশা-ভবনের কো-অর্ডিনেটর।
আরও দেখুন, কোথাও লাঠমার তো কোথাও দোল, জেনে নিন দেশ জুড়ে হোলির নানা নাম ও রীতি
উল্লেখ্য প্রায় ২০ বছর আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক সিদ্ধার্থ দত্ত তাঁর দীর্ঘ গবেষণায় বিভিন্ন ধরনের ফুল থেকে রং নিষ্কাশন করে ভেষজ আবির উৎপাদন শুরু করেন। বাগনান থানার নবাসনে আনন্দ নিকেতন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে সিদ্ধার্থবাবুর হাত ধরেই ‘কুসুমিকা’ নামে সর্ব প্রথম ভেষজ আবির প্রকল্পের সূচনা হয়। এই আবিরে কোনওরকম রাসায়নিকের ব্যবহার থাকে না বলে এই আবির ত্বকের পক্ষে সম্পূর্ণ নিরাপদ, জানিয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষক-অধ্যাপক। কিন্তু দুঃখের কথা ফুলের জোগানের অভাবে ওই প্রকল্পটি অঙ্কুরেই বিনাশ হয়। সেই সময় অভিযোগ ওঠে বাগনান-১ ও ২ ব্লক ফুল চাষে রাজ্যের মধ্যে প্রথম স্থানে থাকা সত্ত্বেও সেখানকার ফুল চাষিরা এইরকম একটা অর্থকরী প্রকল্পের কথা ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেননি। তাই তাঁদের অবিক্রিত ফুল তাঁরা গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়ে এলেও সেই ফুল কুসুমিকা প্রকল্পের কাজে আসেনি। কুসুমিকা প্রকল্প বন্ধ হওয়ার পর আমতার সম্প্রীতি মহিলা সংঘ ভবনে একটি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী পুনরায় ‘পুষ্পা’ নামে ভেষজ আবির প্রকল্প শুরু করে। কিন্তু ফুলের জোগানের অভাবে সেই প্রকল্পটিও মুখ থুবড়ে পড়ে। যেহেতু এখন ভেষজ আবিরের চাহিদা তুঙ্গে তাই প্রয়োজন মতো ফুলের জোগান থাকলে আশা ভবন সেন্টারের এই প্রয়াস সাফল্য লাভ করতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়।