সংক্ষিপ্ত
বহরমপুর গার্লস কলেজের ছাত্রী সুতপা চৌধুরী হত্যায় আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিযুক্ত সুশান্ত চৌধুরীকে এদিন বহরমপুর আদালতে তোলা হয়। সেখানে পুলিশের দাবি মেনে বিচারক ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। আপাতত দৃষ্টিতে এটি ওপেন অ্যান্ড শার্ট কেস হলেও খুনের কিছু প্রমাণ যাচাই-এ তাদের হেফাজত সুশান্তের থাকাটা জরুরি বলে মনে করছে পুলিশ।
সুতপা চৌধুরী হত্যাকাণ্ডে কীভাবে ছক কষেছিল অভিযুক্ত সুশান্ত চৌধুরী? খুনের পর ঘটনাস্থল থেকে সে কীভাবে পালিয়েছিল? এমন সব প্রশ্নে যে উত্তর পাওয়া গিয়েছে তাতে বোঝাই যাচ্ছে রীতিমতো ছক কষেই এই খুনকে পরিণাম দিয়েছিল সুশান্ত। পুলিশি জেরায় সুশান্ত জানিয়েছে, খুনের ৩ দিন আগে সে বহরমপুরে পৌঁছেছিল। মানে তার বয়ান অনুযায়ী শুক্রবার সে বহরমপুরে পৌঁছেছিলো। এরপর থেকে সে ছায়ার মতো সুতপাকে অনুসরণ করেছিল। এমনকী, সুতপার কখন মেস থেকে বের হচ্ছে কখন ঢুকছে সে তথ্যও সংগ্রহ করেছিল সে।
সুতপাকে যদি মেসের সামনে খুন করতে হয় তাহলে পালানোর রাস্তা কোনটা হবে তা নিয়েও ভালো করে চর্চা করেছিল সুশান্ত। কারণ, সুতপা যে মেসে থাকত তার কাছেই ব্যস্ত গোরাবাজারের ভিড়। এরমধ্যে অক্ষয় তৃতীয়া এবং ইদ উপলক্ষে এই অঞ্চলে সারাক্ষণই বিক্রেতা ও খদ্দেরদের ভিড়। এমন এক জায়গায় কাউকে খুন করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাওয়াটা সহজ বিষয় নয়। বিশেষ করে ভিড়ের ফাঁদে ধরা পড়ে যাওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা ছিল। তাই সুশান্ত ভালো করেই পালানোর রাস্তা এবং অপেক্ষাকৃত ফাঁকা রাস্তা বেছে রেখেছিল। এমনকী, খুনের পর সে কতক্ষণ সময় ঘটনাস্থলে নষ্ট করবে, আর তারপরে কী করতে সমস্ত পরিকল্পনা সে ভালো করে ছক কষেছিল।
সোমবার সন্ধ্যায় সুশান্তর ফোন পেয়ে বাইরে বেরিয়ে এসেছিলেল সুতপা। সিসিটিভি ফুটেজে দেখাই যাচ্ছে হন্তদন্ত হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন সুতপা। আর এই সময় নিঃশব্দে পিছন থেকে এসে সুতপার উপরে ধারাল অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সুশান্ত। রাস্তায় পড়ে যখন সুতপা রক্তে ভেসে যাচ্ছে তখন সেখানে দাঁড়িয়ে স্থানীয়দের উদ্দেশে নিজের সাফাই দিচ্ছিল সুশান্ত। আর এর কয়েক মিনিট পরেই দৌঁড়ে গোরাবাজারের পিছনের একটা গলি দিয়ে সে পালিয়ে যায়। তদন্তে পুলিশের কাছে এই গলি চেনার বিষয়টি বেশ সন্দেহ তৈরি করেছে। কারণ, স্থানীয় বাসিন্দারা ছাড়া এই রাস্তার কথা কারওর জানার কথা নয়। তাহলে বহরমপুরে বসবাসকারী কেউ এই খুনে সুশান্তকে সাহায্য করেছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, সুশান্ত তাঁর মোটরবাইক নিয়েই বহরমপুরে এসেছিল। কিন্তু পালানোর সময় সেই মোটরবাইক আর নেয়নি। বহরমপুরে সে মোটরবাইক লুকিয়ে রেখেছিল। ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে সুশান্ত দুটি লাক্সারি ট্যাক্সি ভাড়া করেছিল। একটি ট্যাক্সি করে কিছুদূর যাওয়ার পর তা থেকে নেমে যায় সে। এরপর অন্য একটি লাক্সারি ট্যাক্সিতে সে মালদহের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। লাক্সারি ট্যাক্সির ভিতরেই রক্তমাখা জামা সুশান্ত বদলে ফেলেছিল। লাক্সারি ট্যাক্সি চালকের চোখে এই রক্তমাখা জামা নজরে এল না কেন তাও তদন্তে খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সামশেরগঞ্জে পুলিশের নাকা চেকিং-এ সুশান্তর ট্যাক্সি আটকে যায়। আতঙ্কে সুশান্ত ট্যাক্সি থেকে বেরিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ম্যাটাডোরের নিচে ঢুকে যায়। নাকা চেকিং-এর পুলিশের নজরে এই ঘটনা আসে। তারা সুশান্তকে টেনে বের করেন এবং তাঁদের কাছে থাকা তথ্য মিলিয়ে দেখেন। এতেই ধরা পড়ে যায় সুশান্ত। তারমধ্যে ধরা পড়ার সময় যথেষ্ট আতঙ্কে ছিল সুশান্ত।
মঙ্গলবার আদালতে তোলা হলে সুশান্ত বিচারকের সামনে দাবি করেন সুতপা-কে সে বিয়েও করেছিল। কিন্তু, এই বিয়ে সুতপার বাড়ির লোক মেনে নেয়নি। সুতপার বাড়ির লোক প্রায়ই তাকে অপমান করত। আর আস্তে আস্তে সুতপাও বাড়ির কারণে তার কাছ থেকে দূরে সরে যায় বলে দাবি করে সুশান্ত। সম্প্রতি এক পুরুষের সঙ্গেও সুতপার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এই ঘটনা জানতে পেরে সুশান্ত গিয়েছিল সুতপার সঙ্গে। কিন্তু কোনও মিমাংসাই করতে পারেনি বলে জানিয়েছে সুশান্ত। উল্টে সুতপা সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ায় মানসিকভাবে সে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে বলে জানিয়েছে খুনে অভিযুক্ত সুশান্ত।
আদালতে ঢোকার সময় সুশান্ত সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে বলেন কেন খুন করেছি তা ফেসবুক লাইভ করেই বলব। মানসিকভাবে সুশান্ত কতটা সুস্থ তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। জানা গিয়েছে, সোমবার খুন হওয়ার আগে সুতপা যে শপিং মলে গিয়েছিল সেখানেও হাজির ছিল সুশান্ত। পিছন থেকে সে সুতপাকে চোখে চোখে রেখেছিল। অনেকটা শিকার যেন ফসকে না যায়। অতি ঠাণ্ডা মাথায় যে খুনের পরিকল্পনা সুশান্ত করেছে তাতে সন্দেহ নেই বলে মনে করছে পুলিশ। সুশান্তের সাম্প্রতিক একটি ফেসবুক পোস্টও সামনে এসেছে। যেখানে সুতপার নাম থাকলেও এক ম্যাডমজির কথা রয়েছে। এই পোস্টে সুশান্ত লিখেছে তাকে সম্পর্কে ধোকা দেওয়া হয়েছে। আর যিনি ধোকা দিয়েছেন সেই ম্যাডামজিকে প্রাণ দিয়ে এর মূল্য চোকাতে হবে। সুতপা হত্যাকাণ্ডে এই জিনিসগুলিও পুলিশ তথ্য-প্রমাণের তালিকায় রাখছে বলেই খবর।
আরও পড়ুন- টাকার দরকার ছিল মেয়ের, সন্ধে ৬ টা ৫০- এ হোয়াটসঅ্যাপ বাবার, ততক্ষণে খুন হয়ে গিয়েছিল সুতপা
আরও পড়ুন- কেন খুন হতে হল মালদহ ইংরেজবাজারের বাসিন্দা কলেজ ছাত্রী সুতপাকে, পিছনে রয়েছে কোন কারণ
আরও পড়ুন- মহিলা সংক্রান্ত বিবাদ, তাই কি এক পরিবারের তিন সদস্যকে গলার নলি কেটে খুন