সংক্ষিপ্ত
তাপসী মালিকের মৃ্ত্যু নিয়ে ১৬ বছর পরেও সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, তাপসী মালিককে হত্যা করেছে সিপিএম। সিঙ্গুর আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তাপসী মালিকের নাম।
রাজ্যরাজনীতিতে আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছেন প্রয়াত তাপসী মালিক। বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি কালীপুজোর উদ্বোধনে বলেন, 'সিপিএম কৃষক বিরোধী। কৃষক খুন করেছে। তাপসী মালিকের মত মেয়েকে খুন করেছে।' সিঙ্গুর আন্দোনের সঙ্গে তাপসী মালিক আর স্থানীয় সিপিএম নেতা সুহৃদ দত্ত ও দেবু মালিকের নাম অতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে রয়েছে। সালটা ছিল ২০০৬। তখনও রাজ্যে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের রাজ। সিঙ্গুরে তৈরি হবে গাড়ি কারখনা। পক্ষ আর বিপক্ষ মতে উত্তাল রাজ্যরাজনীতি। ঠিক সেই সময়ই উদ্ধার হয়েছিল তাপসী মালিকের অগ্নিদদ্ধ নিথর দেহ। তারপরই রাজ্যজুড়ে তোলপাড়শুরু হয়ে যায় তাপসী মালিককে হত্যা করা হয়েছে- এই অভিযোগে। আর সেই হত্যাকাণ্ডে অভিযোগের তীর ছিল সিপিএমের দিকে। বিশেষত সুহৃদ দত্ত আর দেবু মালিকের বিরুদ্ধে। দুজনেই ছিলেন দাপুটে সিপিএম নেতা।
তাপসী মালিক বাজেমিলিয়ার বাসিব্দা ছিলেন। সিঙ্গুরে যেযে এলাকা টাটারা জমি কারখানার জন্য অধিগ্রহণ করেছিল তার মধ্যেই পড়ে বাজেমিলিয়া। সিঙ্গুরে টাটাদের কারখানার মধ্যে থেকেই উদ্ধার হয়েছিল তাপসী মালিকের আধপোড়া দেহ। মৃত্যুর পর তাপসী মালিক রাতারাতি সংবাদ শিরোনামে চলে আসেন। একপক্ষের যুক্তি ছিল তাপসী মালিককে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। অন্য পক্ষের যুক্তি তাপসী মালিক আত্মহত্যা করেছেন বাবার কাছে বকুনি খেয়ে। যাইহোক সেই সময় তাপসী মালিকের মৃত্যুতে সামনে রেখেই সিঙ্গুর আন্দোলনে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য। সিপিএম-এর আমলেই গ্রেফতার করা হয়েছিল এলাকায় সিপিএম-এর দাপুটে নেতা হিসেবে পরিচিত সুহৃদ দত্ত ও দেবু মালিককে। প্রথমে স্থানীয় পুলিশ তারপর সিআইডি তদন্তের ভার নিয়েছিল। কিন্তু তাতে ঘোরতর আপত্তি ছিল তৎকালীন বিরোধী নেত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। শেষপর্যন্ত তাঁর দাবি মেনে নিয়ে তাপসী মালিকের মৃত্যু রহস্যের কিনারা করতে মাঠে নামে সিবিআই।
তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। এই রাজ্যে পালা বদল হয়েছে। কিন্তু সিঙ্গুর কারখানা প্রসঙ্গে এখনও এই রাজ্যের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক। তেমনই প্রাসঙ্গিত তাপসী মালিক প্রসঙ্গ। বারবারই ফিরে আসে তাপসী মালিক আর সিপিএম প্রসঙ্গে। অর্থাৎ সিপিএম নেতা সুহৃদ দত্তের প্রসঙ্গে। তাপসী মালিককে খুনের অভিযোগে যাঁকে যেতে হয়েছিল জেলে। বর্তমানে তিনি মুক্ত। কিন্তু তিনি একটা সময় বলেছিলেন, 'সিবিআই যে চার্জশিট দিয়েছিল তাতে উল্লেখ ছিল তাপসী মালিকের গর্ভপাতের। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী সিত - দশ দিন আগে কাউকে ধর্ষণ করা হলে সে কখনই গর্ভাবতী হয় না। যেভাবে তাপসী মালিকের দেহ উদ্ধার হয়েছে তাতে স্পষ্ট মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। ' দীর্ঘ আট বছর জেলের ঘানি টানার পর মুক্ত সিপিএম নেতা। বয়সের ভারে জীর্ণ। যদিও সিপিএম-এর মিছিল মিটিং-এ তাঁকে আবার সামনের সারিতে দেখা যায়। সুপ্রিম কোর্ট কোনও শর্ত ছাড়াই জামিন দিয়েছে তাঁকে। আবার হাইকোর্টও একটি মামলায় প্রশ্ন করেছিল 'তাপসী মালিককে কেন হত্যা করবে সুহৃদ দত্ত।' যদিও সিপিএম নেতার এখনও পর্যন্ত পূর্ণ আস্থা রয়েছে দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর।
অন্যদিকে এখনও তাপসী মালিকের বাবা মেয়ের ন্যায় বিচারের প্রতীক্ষায় রয়েছেন। যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও তাপসী মালিকের মৃত্যু দিনের কথা স্মরণ করে ১৬ কিশোরীকে শ্রদ্ধা জানান। কিন্তু সব মিলিয়ে সিঙ্গুরের মতই তাপসী মালিক আর সুহৃদ দত্ত অনেক উত্তরের প্রতীয় রয়েছে।
সিঙ্গুর নিয়ে মমতাকেই দুষলেন সূর্যকান্ত, বললেন '৯০ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছিল'
সিঙ্গুর নিয়ে আবারও বিস্ফোরক মমতা বললেন- 'সিপিএম কৃষক মেরেছে, তাপসী মালিকের মত মেয়েকেও মেরেছে '