সংক্ষিপ্ত
কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষ্যে তারাপীঠে ভিড় করেন ভক্তরা। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ভিড় এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন এবং মন্দির কমিটি।
৬ সেপ্টেম্বর কৌশিকী অমাবস্যা। তবে করোনা আবহে প্রতিবছরের মতো এবছরও বন্ধ থাকবে তারাপীঠ মন্দির। শুক্রবার থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে মন্দিরের দরজা। টানা ছ’দিন মন্দিরে পুণ্যার্থীদের প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা হচ্ছে। বন্ধ থাকছে সব হোটেলও। কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষ্যে তারাপীঠে ভিড় করেন ভক্তরা। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ভিড় এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন এবং মন্দির কমিটি। তবে অন-লাইনে ভক্তরা বাড়িতে বসেই মায়ের দর্শন করতে পারবেন সেবাইতদের মাধ্যমে।
কথিত আছে মহিষাসুর বধের পর শুম্ভ-নিশুম্ভের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন স্বর্গের দেবতারা। শেষে দেবতারা মহামায়ার তপস্যা শুরু করেন। সেই তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে দেবী উজ্জ্বল জ্যোতি বিচ্ছুরিত করে এক পরমাসুন্দরী দেবী মূর্তিতে আবির্ভূত হন। নিজ কোষ শরীর থেকে বের হওয়ার জন্য তিনি হলেন কৌশিকী। কৌশিকীদেবী আবার তারা ও কালীতে রূপান্তরিত হন। আবার শোনা যায় কৌশিকী অমাবস্যার দিন তারাপীঠ মহাশ্মশানের শ্বেতশীমূল বৃক্ষের তলায় সাধক বামাক্ষ্যাপা সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। ফলে ওই দিন মা তারার পুজো দিলে এবং দ্বারকা নদীতে স্নান করলে পুণ্যলাভ হয়।
আরও পড়ুন- শুধু গবেষক ছাত্রীই নয়, যাদবপুরের অধ্যাপকের ফাঁদে আরও অনেকে
এই বিশ্বাসের উপর ভর করে আজও ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা ওই তিথিতে তারাপীঠে আসেন। ৭ সেপ্টেম্বর এবার কৌশিকী অমাবস্যা। এই বিশেষ দিনে প্রতিবছর পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের জমায়েত হয় তারাপীঠে। পুণ্যার্থীদের আটকাতে তাই ৩ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মন্দিরের দরজা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক বৈঠকে। তবে নিত্যপুজো কিংবা অমাবস্যার পুজো হবে রীতি মেনেই।
আরও পড়ুন, Post Poll Violence:রাজ্য পুলিশের তদন্তকারী অফিসারদের এবার তলব করল CBI
এদিকে অমাবস্যার সময় মন্দির বন্ধের খবর পেয়ে বৃহস্পতিবারই মন্দিরে পুজো দিতে ভিড় জমিয়েছেন বহু মানুষ। এদিন মা তারার পুজো দেন হুগলির বাঁশবেড়িয়া পুরসভার চেয়ারম্যান আদিত্য নিয়োগী, কলকাতার বাসিন্দা কল্যাণী ঘোষরা। তাঁরা বলেন, “ইচ্ছে ছিল কৌশিকী অমাবস্যায় মায়ের পুজো দেব। কিন্তু, ওই সময় মায়ের মন্দির বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমরা আগেই পুজো দিয়ে গেলাম। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে মন্দির কমিটি এবং প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা খুবই ভালো।"
আরও পড়ুন, 'দেওয়ার ইচ্ছা নেই, শুধু লোককে বোকা বানানোর চেষ্টা', মমতাকে তোপ দিলীপের
মন্দির বন্ধ রাখা প্রশঙ্গে মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় ও সম্পাদক ধ্রুব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কৌশিকী অমাবস্যায় লক্ষ লক্ষ মানুষের জমায়েত হয়। ফলে এই অতিমারির সময় কৌশিকী অমাবস্যায় মন্দির খোলা থাকলে গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। সেই কারণে মন্দির বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে রীতি মেনে মায়ের পুজো হবে। পুণ্যার্থীরা যাতে বাড়িতে বসেই মায়ের দর্শন ও পুজো দেখতে পারেন তার জন্য মন্দিরের গর্ভগৃহের বাইরে দুটি জায়েন্ট স্ক্রিন বসানো থাকবে। সেখান থেকে মায়ের পুজো সরাসরি দেখতে পারবেন পুণ্যার্থীরা।”
হোটেল ব্যবসায়ী সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রশাসনের নির্দেশে সব হোটেল ছ’দিন বন্ধ থাকবে। তবে পুজোর আগে এই সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়বেন হোটেল কর্মচারী, টোটো চালক থেকে ছোটখাটো ব্যবসায়ীরা। কারণ এই সময় দুটো বাড়তি আয়ের জন্য মানুষ অপেক্ষায় থাকেন। সেই সব ভক্তরা না আসলে ব্যবসার অনেকটা ক্ষতি হবে।"