সংক্ষিপ্ত
হাজারদুয়ারি প্রাসাদের কিছু দূরে অশ্বখুরাকৃতি মতিঝিলে ১৭৫০ সালে নওয়াজেস মহম্মদ খান একটি প্রাসাদ নির্মাণ করেন, যা সাঙ্ঘি দালান নামে পরিচিত। পরবর্তীতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ওই প্রাসাদ থেকে কোম্পানি পরিচালনা করতেন বলে কেউ কেউ ওই এলাকাকে কোম্পানি বাগ বলে থাকেন।
একদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(CM Mamata Banerjee) মুর্শিদাবাদ সফর (Murshidabad Visit) পাশাপাশি সরকারি ভাবে মতিঝিল (MatiJhil) অধিগ্রহনের সপ্তাহ দুয়েক বাদেই দুষ্কৃতিরা ভেঙে ফেলল নবাব নগরী লালবাগ শহরের(Lalbag) ঐতিহাসিক মতিঝিল প্রাসাদের মূল প্রবেশ দ্বার। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার ইতিহাস গবেষক, পর্যটনপ্রেমী মানুষ ব্যাপক ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। এলাকায় রয়েছে চাপা উত্তেজনাও। অবশ্য এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রশাসনিক তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি বলে অভিযোগ শহরের বুদ্ধিজীবি মহলের।
এই ব্যাপারে লালবাগ মহকুমা শাসক সুদীপ ঘোষ বলেন, “দুষ্কৃতি হামলায় ওই তোরন ভাঙা হয়েছে এমন খবর আমাদের কাছে নেই । তবে পুলিশকে বলা হয়েছে, পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে।” হাজারদুয়ারি প্রাসাদের কিছু দূরে অশ্বখুরাকৃতি মতিঝিলে ১৭৫০ সালে নওয়াজেস মহম্মদ খান একটি প্রাসাদ নির্মাণ করেন, যা সাঙ্ঘি দালান নামে পরিচিত। পরবর্তীতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ওই প্রাসাদ থেকে কোম্পানি পরিচালনা করতেন বলে কেউ কেউ ওই এলাকাকে কোম্পানি বাগ বলে থাকেন। বহু ইতিহাসের সাক্ষী ওই মতিঝিল কালের নিয়মে ধ্বংসের পথে বিলীন হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষা করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৭ সালে মতিঝি্লের সংস্কার ও সংরক্ষণ করে তার হারান গৌরব ফিরিয়ে দেন।
সম্প্রতি রাজ্য পর্যটন দপ্তর মতিঝিল অধিগ্রহন করে। এর মাঝেই মতিঝিলের ঐতিহ্যবাহী তোরণের এক অংশ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এভাবে ইতিহাসের সাক্ষী ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ায় বড়সড় চক্রান্ত দেখছেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ মনে করেন ব্যক্তিগত স্বার্থে রাতের অন্ধকারে জেসিবি মেশিন ব্যবহার করে ওই তোরনের একটি বাহু একেবারে ধূলিসাৎ করে দেওয়া হয়েছে । কিন্তু জন বহুল এলাকায় কি ভাবে মতিঝিলের বিশালাকার মুল ফটকের এক অংশ গুড়িয়ে দেওয়া হল তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
এই ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বলেন, “সবাই জানেন কে বা কারা ওই কাজ করেছে। কিন্তু কারও প্রতিবাদ করার ক্ষমতা নেই ,তাই চুপ করে আছেন ।” কিন্তু প্রশাসন কেন নির্বিকার তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই ।জেলার ইতিহাস গবেষক বিপ্লব বিশ্বাস উল্লেখ করেন,“মতিঝিলের ওই তোরন সঙ্গে হুবহু একই সরল রেখায় অবস্থান করছে ভাগীরথী নদীর পশ্চিম পাড়ের খোসবাগ সমাধিক্ষেত্রের মুল ফটক। বিষয়টি গবেষণাযোগ্য। ওই দুই তোরনের একটি দুষ্কৃতি দাপটে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া মানে দেশের ঐতিহাসিক সম্পদের উপর হামলাবাজি । ”
এদিকে মুর্শিদাবাদ হেরিটেজ অ্যন্ড কালচারাল ডেভলপমেন্ট সোসাইটির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, রাজ্য সরকারের উদ্যোগে মতিঝিলকে ঘিরে জেলার পর্যটন শিল্প ঘুরে দাঁড়ানোর পথে এগোচ্ছে , তার আগে এই ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।