সংক্ষিপ্ত

  • দেবীর কৃপায় নাকি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছিলেন বর্গী সেনাপতি
  • সোনামুখী শহরের এই কালীপুজো পাঁচশো বছরের বেশি পুরনো
  • দীপাবলীর সময়ে পাঁচদিন ধরে চলে দেবীর আরাধনা
  • উৎসবে মেতে ওঠেন স্থানীয় বাসিন্দারা
     

'মা তু কালি হ্যায়'। দীপাবলীর রাতে বাঁকুড়ার সোনামুখী শহরে যে দেবী পুজিতা হন, তাঁর নাম মাই-তো কালি মা। জেলার প্রাচীনতম এই পুজোর বয়স পাঁচশো বছরেরও বেশি। তবে এই পুজোর ইতিহাস এখনও অজানা। শোনা যায়, বাংলার বর্গি আক্রমণের সঙ্গে নাকি দেবীর এই নাম যোগসূত্র আছে।  করোনা আবহে অবশ্য এবার অনাড়ম্বরভাবে কালিপুজো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উদ্যোক্তারা।

আরও পড়ুন: দীপাবলীর রাতে পূজিতা হন দেবী মহা সরস্বতী, তিনদিন ধরে উৎসব চলে বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রামে

বাঁকুড়া জেলার অন্যতম প্রাচীন জনপদ বা শহর সোনামুখী। কথিত আছে, শহরের যে এলাকায় পুজো হয়, সেই এলাকা একসময়ে ছিল ঝোপে-ঝাড়ে ভরা। ঝোপের আড়ালে এক পর্ন কুঠিরে ছিল কালীমন্দির। ভাস্কর পণ্ডিতের নেতৃত্বে অশ্বারোহী বর্গীরা বিষ্ণুপুর থেকে এসে হাজির সোনামুখী শহরে। তখন সবে সন্ধে হচ্ছে। মন্দিরে সামনে এসে বর্গী দেখে, হাঁড়ি কাঠে সামনে প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রণাম করছেন এক ব্রাহ্মণ। তাঁর ঔদ্ধত্য দেখে অবাক হন ভাস্কর পণ্ডিত। এতটাই রেগে যান যে, হাতের তরবারি দিয়ে ওই ব্রাহ্মণ বলি দিতে যান। কিন্তু তরবারি তুলতে দৃষ্টিশক্তি হারান তিনি! শেষপর্যন্ত ঘটের জল ছিটিয়ে ভাস্কর পণ্ডিতের দৃষ্টিশক্তি ফেরান ওই ব্রাহ্মণই।  দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার পর বর্গীদের সেনাপতি জানতে চান, 'মন্দিরে কোন দেবতা রয়েছেন?' জবাবে পুরোহিত বলেন, 'মা আছেন'। এরপর কৃষ্ণবর্ণ বিগ্রহের দেখে ভাস্কর পণ্ডিত বলে ওঠেন, 'মা তো কালী হ্যায়'। যাঁকে বলি দিতে গিয়েছিলেন, তাঁর হাতেই তরবারি তুলে দিয়ে বর্গীদের নিয়ে ফিরে যান ভাস্কর পণ্ডিত। মারাঠা দস্যুতের হাত থেকে রক্ষা পায় সোনামুখী শহর। 

আরও পড়ুন: চিনা সামগ্রী বয়কটের জের, কদর বেড়েছে মাটির প্রদীপের, আশায় বুক বাঁধছেন মৃৎশিল্পীরা

সোনামুখী শহরের এই কালি মন্দিরে পুজোপাঠ চলে বছরভর। কালিপুজোর সময়ে পাঁচদিন ধরে দেবীর আরাধনায় মেতে ওঠেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পুজোর শেষে কাঁধে চাপিয়ে গোটা শহর পরিক্রমার পর প্রতিমা বিসর্জন হয়। তবে এবার পরিস্থিতি অন্যরকম। করোনার জন্য কারণে কোনওরকম আড়ম্বর ছাড়াই পুজো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উদ্যোক্তারা। স্রেফ মাই-তো কালি মা-ই নন, সোনামুখী শহরের প্রাচীন কালীপুজো সংখ্যা কম নয়। অতিমারির দাপটেই ফিকে হয়ে গিয়েছে উৎসবের রং।