সংক্ষিপ্ত
- পুরুলিয়া বিশ্বকর্মা পুজোর আয়োজন
- পুজোর আয়োজনে সূত্রধর সমাজের সদস্যরা
- জাঁকজমক করেই পুজোর আয়োজন
সরস্বতী পুজো নয়, বসন্ত পঞ্চমীতে দেবকারিগর বিশ্বকর্মার পুজো হচ্ছে পুরুলিয়ায়। পুরুলিয়া শহরের নামোপাড়ার সূত্রধর সমিতির উদ্যোগে পূজিত হচ্ছেন দেবকারিগর। অসময়ের এই পুজো একটা আলাদা মাত্রা এনে দিয়েছে পুরুলিয়া শহরে। সূত্রধর সমিতির স্থায়ী মন্দিরে প্রতিমা দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
সূত্রধর সমাজের পুজো হলেও এতে সামিল হন গোটা এলাকার মানুষ। সূত্রধর সমিতির সদস্যদের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠেন নামোপাড়ার বাসিন্দারা। মন্দির প্রাঙ্গণে দু' দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন সবাই।
কিন্তু ভাদ্র মাসের বদলে মাঘ মাসের বসন্ত পঞ্চমী তিথিতে কেন বিশ্বকর্মা পুজো হয়? অসময়ের পুজোর নেপথ্য কাহিনি জানালেন সূত্রধর সমিতির প্রবীণরা। ভাদ্র মাসের সংক্রান্তির দিন সারা দেশের সঙ্গে পুরুলিয়া জেলাতেও বিশ্বকর্মা পুজো হয়। কিন্তু সূত্রধর সমাজের রীতি অনুযায়ী সেই সময় মূর্তি পুজো না করে পুরুলিয়া শহর এবং ঝালদায় প্রায় কয়েক হাজার সূত্রধর পরিবার ঘট পুজো করে মাথায় তুলে রাখেন। ঘটা করে মূর্তি পুজোর আয়োজন করতে পারেন না তাঁরা। তা ছাড়া ভাদ্র মাসে কৃষিজীবী মানুষ চাষের কাজে ব্যস্ত থাকেন। আর সূত্রধর পরিবারগুলির মধ্যে অনেকেই প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকেন। কৃষি কাজ বা মূর্তি গড়ার কাজে বছরের এই সময়টা অনেক টাকা ঢালতে হয় সূত্রধর সমাজের সদস্যদের। ফলে জাঁকজমক করে বিশ্বকর্মা পুজো করা সম্ভব হয় না।
আরও পড়ুন- প্রসাদের পরিবর্তে দেওয়া হল গাছ, সরস্বতী পুজোয় অভিনব বার্তা পুরুলিয়ায়
সবমিলিয়ে তাই সূত্রধর সমাজ এবং কৃষিজীবী মানুষ ওই সময় বিশ্বকর্মা পুজোর আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত নেন। সূত্রধর পরিবারগুলির মিলে ঠিক করে ভাদ্র মাসে নয়, শীতকালে যে সময় শস্য–শ্যামলা থাকে, সবজি-ফলমূল থাকে সস্তা, ঠিক সময়েই বড় করে বিশ্বকর্মা পুজো করা হবে।
এ দিন সূত্রধরদের মন্দিরে দেখা গেল পরম্পরা মেনে বিশ্বকর্মার চরণে তাঁর নিজেদের কাজ করার লোহার সরঞ্জাম রেখে দেওয়া হয়েছে। পুজোর দিন গুলিতে কোনও অবস্থাতেই নিজেদের ব্যবহৃত হাতিয়ারগুলিতে হাত দেন না সূত্রধর পরিবারগুলির সদস্যরা। এই প্রথার আজও ব্যাতিক্রম ঘটেনি। রীতি মেনে মূর্তি এবারেও গড়া হয়েছে। দেবকারিগরের সঙ্গে অস্ত্র হাতে দুই দিকে রয়েছে তাঁর দেহরক্ষীরা। এক চালার ওই প্রতিমার একেবারে দুই পাশে রয়েছে দুই পরী। একেবারে বাঙালি বেশে সাজানো হয়েছে বিশ্বকর্মাকে।