সংক্ষিপ্ত

 বালুরঘাট পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে একে অপরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মা ও মেয়ে। তবে 'এই লড়াই শুধুমাত্র রাজনৈতিক, পারিবারিক সম্পর্কের লড়াই না', বলে জানিয়েছেন মা ও মেয়ে। 

 

পুরভোটের ( WB Municipal Elections 2022) আগে বালুরঘাট পৌরসভায় রাজনৈতিক লড়াই জমে উঠেছে।  বালুরঘাট পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (Balurghat Municipality Ward 13) একে অপরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মা ও মেয়ে। বাবা সুবোধ মহন্ত আরএসপির প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য। পেশায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। এলাকায় জনপ্রিয়তাও প্রবল। তার স্ত্রী এবার পুরসভার নতুন সংযোজিত এলাকা ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের আরএসপি প্রার্থী। অন্যদিকে তারই বিবাহিত মেয়েকে ওই ওয়ার্ড থেকেই প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। যার ফলে একদিকে মা ও অপরদিকে মেয়ে- এই দু'য়ের বিরল রাজনৈতিক লড়াই দেখতে উৎসুক বালুরঘাট শহরের সাধারণ মানুষ। এদিকে, আরএসপি নেতার নিজের মেয়ে তৃণমূলের টিকিটে লড়ছেন। যা নিয়ে মেয়ের প্রতি অভিমান  বাবার। তবে 'এই লড়াই শুধুমাত্র রাজনৈতিক, পারিবারিক সম্পর্কের লড়াই না', বলে জানিয়েছেন মা ও মেয়ে। 

জানা গিয়েছে, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের চকভৃগুর ডাকরা মহন্ত পাড়ার বাসিন্দা তথা চিকিৎসক সুবোধ মহন্ত। যিনি ছাত্রজীবন থেকেই আরএসপি করে আসছেন। পরবর্তীতে পঞ্চায়েতের সদস্য, স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি থেকে  শুরু করে নানা পদে ছিলেন। এলাকায় নানা সুনামও রয়েছে। সুবোধবাবুর মেয়ে অনুশ্রী মহন্তের পাশের পাড়াতেই বিয়ে হয়েছে। সেই মেয়েকেই তৃণমূলের প্রার্থী করেছে দল। একইভাবে সুবোধবাবুর স্ত্রী অপর্না মহন্তকে আরএসপি থেকেই ওই ওয়ার্ডে লড়ছেন। এদিকে প্রার্থী হওয়ার পরে রোজই মা ও মেয়ে জোরকদমে প্রচার সারছেন। নিজের এলাকায় সকাল থেকে রাত অবদি দাপিতে বেড়াচ্ছে মা। অন্যদিকে, মেয়েও নিজের এলাকায় জোরকদমে প্রচার সারছেন। এদিকে মা ও মেয়ের এই লড়াই দেখতে যেমন উৎসাহী সাধারণ মানুষ। তেমনি এক অংশ সাধারণ মানুষ এই লড়াইকে ভালো চোখে দেখছেন না। 

প্রসঙ্গত, নতুন সংযোজিত ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আগে চকভৃগু গ্রামপঞ্চায়েতের অধীনে ছিল। ওই ওয়ার্ডের ডাকরা মহন্ত পাড়া এলাকার পামির দাসের সঙ্গে অনুশ্রীর বিয়ে হয়। দুই বাড়ি ঢিল ছোঁড়া দূরত্বেই রয়েছে। এলাকায় এখনও  রাস্তাঘাট, পানীয় জল, নিকাশী নালার উন্নয়ন হয়নি। যা নিয়ে দুই প্রার্থীরাই জোরকদমে প্রচার চলছে। এদিকে ওই ওয়ার্ডে বিজেপির প্রার্থী বর্নালী দত্ত। তিনিও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি বলেন, উন্নয়ন হয়নি এলাকায়। একই পরিবারে মা ও মেয়েকে স্থানীয়রা প্রার্থী হিসেবে চাইছেন না। তাই এখানকার মানুষ আমার পক্ষেই রায় দেবেন৷

এদিকে প্রচার করতে গিয়ে অনেক সময়  রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে কথা বলতে হচ্ছে। যা নিয়ে অনেক সময় মা ও মেয়ে দু'জনকেই দ্বিধায় পড়তে হচ্ছে।  এব্যাপারে আরএসপি প্রার্থী তথা মা অপর্না মহন্ত বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘদিনের আরএসপির কর্মী। তাই আমিও ওই দলের মতাদর্শে বিশ্বাসী। আমার মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সে অন্য বাড়িতে থাকে। তাই সে প্রার্থী হয়েছে, সেটা ওর ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাই প্রচারে বেরিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কথা বলছি। আমার মেয়ের বিরুদ্ধে কথা বলছি না। এদিকে সুবোধবাবু একরাশ অভিমান নিয়ে বলেন, আমার মেয়ে রাজনীতির কিছু জানেনা। তৃণমূল ওকে বোকা বানিয়ে প্রার্থী করেছে। ওকে বার বার বুঝিয়েছি। কিন্তু শোনেনি। তাই লড়াইটা মেয়ের বিরুদ্ধে না। লড়াইটা রাজনৈতিক। আর সেটা আমরা নিশ্চিত জিতব। 

অন্যদিকে, তৃণমূল প্রার্থী অনুশ্রী মহন্ত বলেন, আমি রাজনীতি না করলেও আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়াও সারা রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা উন্নয়ন করেছে। তাতে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। দল আমাকে প্রার্থী করেছে। তাই দলের হয়ে লড়াই করছি। আমার বাবা বা মায়ের বিরুদ্ধে আমার লড়াই না। আমাদের সম্পর্ক যেমন ছিল, সারাজীবন তেমনই থাকবে। এখানে কোন পারিবারিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে না রাজনৈতিক লড়াই চলছে বলেই তিনি জানিয়েছেন।