সংক্ষিপ্ত
মনোনয়নের শেষ দিনে তিনটি ওয়ার্ডে ৩০ লক্ষ টাকা করে বিক্রি হয়েছে টিকিট। ব্যবসায়ীর বাড়িতে বসে হয়েছে ডিল। টাকা নিয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী এবং বর্তমান জেলা সভাপতি।গুরুতর অভিযোগ তুললেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তথা বর্তমান সাধারণ সম্পাদক বিমান সরকার।
পুরভোটের (WB Municipals Elections 2022) মনোনয়নের শেষ দিনে তিনটি ওয়ার্ডে ৩০ লক্ষ টাকা করে বিক্রি হয়েছে টিকিট। ব্যবসায়ীর বাড়িতে বসে হয়েছে ডিল। টাকা নিয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী এবং বর্তমান জেলা সভাপতি ( Fformer minister and District president) ।গুরুতর অভিযোগ তুললেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তথা বর্তমান সাধারণ সম্পাদক বিমান সরকার (TMC Leader Biman Sarkar)। পৌরসভা নির্বাচনের মুখে অস্বস্তিতে পুরুলিয়ার ঘাসফুল শিবির।
'টাকা নিয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী এবং বর্তমান জেলা সভাপতি'
পার্থী তালিকা ঘোষণা থেকে মনোনয়ন হওয়ার পরেও পুরুলিয়া তৃণমূল কংগ্রেস এখনও শেষ হয়নি অন্তর্দ্বন্দ্ব। এবার লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে শেষ মুহূর্তে পুরুলিয়া পৌরসভায় প্রার্থী রদবদল হয়েছে বলে অভিযোগ তুললেন জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক থেকে যুব তৃণমূল সভাপতি এবং মহিলা নেত্রী। তৃণমূল কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ এই শীর্ষ নেতৃত্বের অভিযোগ পুরুলিয়া পৌরসভার ৪ নাম্বার ১৮ নাম্বার এবং ২২নাম্বার ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ৩০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রার্থী পদে রদবদল করা হয়েছে। ১৮ নাম্বার ওয়ার্ডে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রথম প্রার্থী তালিকায় নাম ছিল দুবারের প্রাক্তন কাউন্সিলার ছায়া দাসের। ছায়া দাস নিয়ম মেনে যথারীতি মনোনয়ন প্রক্রিয়ার কাজ সম্পন্ন হওয়ার শেষে হঠাৎ জানতে পারেন তার জায়গায় পার্থী করা হয়েছে আরতি পান্ডেকে। ৪ নাম্বার ওয়ার্ডের প্রার্থী তালিকায় নাম থাকা সোমাশ্রী মারিনা কিসপট্টার নাম থাকলেও মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার পর তার জায়গায় পার্থী করা হয়েছে আসা গরাইকে। আবার ২২ নাম্বার ওয়ার্ডের প্রথম পার্থী তালিকায় হাসিনা খাতুনের নাম থাকলেও সেখানেও রাতারাতি পার্থী পদে রদবদল করা হয়। পৌরসভা নির্বাচনের মনোনয়নের শেষ মুহূর্তে প্রার্থী রদবদল হতেই শুরু হয়ে যায় বিক্ষোভ। বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কর্মীরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করে দেন।
' এভাবে অপমান করে কে কী পেল জানি না'
৪ নাম্বার ওয়ার্ডের প্রার্থী পদে নাম থাকা মাড়িনা কিসপট্টার নাম বাদ দিয়ে অন্যজনকে ঘাসফুলের টিকিট দেওয়ায় সাংবাদিকদের সামনে কেঁদে ভাসালেন মারিনা কিসপট্টা।তিনি জানান,' আমার মতো একজন অসহায় মহিলাকে এভাবে অপমান করে কে কি পেল জানি না।আমার বলার আর করার কিছুই নেই ।' ১৮ নাম্বার ওয়ার্ডের পার্থী তালিকায় ছায়া দাসের নাম বাদ হয়ে যাওয়ায় তিনিও ক্ষোভ উগরে দেন। তিনি জানান, দলের পুরনো দিনের কর্মী। যা শুরু হয়েছে তাতে লোকসভা বিধান সভা নির্বাচনের মতো পৌরসভা নির্বাচনে দল হারবে।একই ভাবে পুরুলিয়া শহর যুব তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি গৌরব সিং দলের এই আচরণ নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বকে তুলধোনা করেন। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে জানান, ' যারা দাদার অনুগামী করল, বিজেপি করল তারাই আজ পৌরসভায় টিকিট পাচ্ছে।'
আরও পড়ুন, মনোনয়ন জমা দেওয়ায় বীরভূমে বিজেপি প্রার্থীর বাড়িতে হামলা, 'খুনের হুমকি'-র অভিযোগ
'প্রতিটি টিকিটে ৩০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে পার্থী পদে রদবদল'
তবে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তথা বর্তমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সাধারন সম্পাদক বিমান সরকার। তিনি একান্ত সাক্ষাৎকারে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি তথা প্রাক্তন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো এবং বর্তমান জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিযার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, 'প্রতিটি টিকিটে ৩০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে পার্থী পদে রদবদল করা হয়েছে। পুরুলিয়া শহরের এক ব্যাবসায়ীর বাড়িতে বসে এই ডিল হয়েছে', বলে অভিযোগ করেন বিমান সরকার। বিষয়টি তিনি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জী সহ শীর্ষ নেতৃত্বকে জানাবেন বলে জানান। টাকার বিনিময়ে পার্থী রদবদলের এই অভিযোগ সম্পূর্ন অস্বীকার করেন পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া।
আরও পড়ুন, 'পশ্চিমবঙ্গ গণতন্ত্রের গ্যাস চেম্বার-আক্রান্ত বিজেপি বিধায়ক মিহির', বিস্ফোরক শুভেন্দু
'কে কী বলছেন এই বিষয়ে আমি যাবো না'
তিনি জানান, 'কে কী বলছেন এই বিষয়ে আমি যাবো না।যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা সব দলেরই প্রার্থী। বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করে প্রার্থী করা হয়। কে কী বলছেন, বলতেই পারেন তাঁদের নিজস্ব মতামত। যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের জয় লাভ করার জন্য মাঠে নেমে কাজ করতে হবে। ৪ নাম্বার এবং ১৮ নাম্বার ওয়ার্ডে রাজ্য নেতৃত্বর অনুমোদন ক্রমে পার্থী পদে বদল করা হয়েছে।যারা শেষ মুহূর্তে বাদ পড়েছে তাদের ক্ষোভ দুঃখ থাকতেই পারে।কিন্তু জানি তারাও মাঠে নেমে কাজ করবেন। এতে দলের কোনো প্রভাব পড়বে না।' পুরুলিয়া জেলার তিনটি পৌরসভার মধ্যে পুরুলিয়া পৌরসভায় প্রার্থী পদ নিয়ে দলের মধ্যে যেভাবে অসন্তোষ শুরু রয়েছে তার ফলে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটের ফলাফল কি হবে, প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে জেলার রাজনৈতিক মহলে।