সংক্ষিপ্ত
ঘটনার জেরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘অযোগ্য’ প্রশাসনিক প্রধান বলে আক্রমণ করেছেন জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের প্রধান প্রিয়াঙ্ক কানুনগো।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জে এক দলিত নাবালিকাকে ধর্ষণ করে নির্মমভাবে খুন। এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবিতে সায় দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। ওই কিশোরীর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি তাঁদের ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের জন্যেও আবেদন করা হয়েছে আদালতের কাছে। ওই ছাত্রীর মৃতদেহ রাস্তা দিয়ে হিঁচড়াতে হিঁচড়াতে টেনে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল সহকারী পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর (এএসআই) পদমর্যাদার চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ওই ৪ পুলিশ কর্তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হল। মঙ্গলবার এই ঘোষণা করেছেন পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা।
.রায়গঞ্জের এসপি সানা আখতার বলেন, "কালিয়াগঞ্জের সাহেবঘাটা এলাকায় মেয়েটির লাশ টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য চারজন এএসআই পদস্থ অফিসারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একটি বিভাগীয় তদন্ত করা হয়েছে এবং তদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।"
২০ এপ্রিল কালিয়াগঞ্জের একটি খালে নির্যাতিতা কিশোরীর লাশ ভেসে ওঠে। তাকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ তুলে স্থানীয় মানুষরা টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন এবং উত্তেজিত জনতা বেশ কয়েকটি দোকানে আগুন লাগিয়ে দেয়। ওই ঘটনার পর সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ভিডিও ভাইরাল হয়, যাতে দেখা যায়, ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় ৪ জন পুলিশকর্মী নির্যাতিতার মৃতদেহটির হাত পা ধরে ঝুলিয়ে রাস্তা দিয়ে হিঁচড়াতে হিঁচড়াতে কোনও রকমে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
ঘটনাটিকে গণধর্ষণ বলে দাবি করে ও খুনের বিচার চেয়ে রাজ্য জুড়ে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটস (এসসিপিসিআর) এর চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায় রবিবার বলেছেন যে, নিহতের পরিবারের সদস্যরা এই ঘটনার চারপাশের সমস্ত স্পটলাইটে "বিরক্ত" হয়ে গেছেন। তাঁরা শান্তিতে তাঁদের পরিবারের কন্যার মৃত্যুর জন্য শোক প্রকাশ করতে চান। রবিবার কলকাতায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসসিপিসিআর চেয়ারপার্সন বলেন, "একটি নাবালিকা মেয়েকে কেন্দ্র করে এই দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটেছে। আমরা ঘটনার বিশদ বিবরণ নিয়েছি, কিন্তু, তা জনগণের সামনে না আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।" তিনি বলেন যে, শিশু অধিকার প্যানেল নিহতের পরিবারের সাথে কথা বলেছে এবং তাঁদের সম্ভাব্য সব ধরনের সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছে। সুদেষ্ণা রায় আশ্বস্ত করেন, "আমরা পরিবারের সাথে কথা বলেছি এবং কলকাতায় যাওয়ার আগে আমরা ওই পরিবারকে আশ্বস্ত করেছিলাম যে, দোষী প্রমাণিত হলে যে কোনও ব্যক্তিই আমরা কঠোরতম শাস্তির জন্য চাপ দেব। আমরা নির্যাতিতার পরিবারকে বলেছি যে, আমরা এই কঠিন সময়ে তাঁদের সাথে আছি।"
তিনি যোগ করেছেন যে, তিনি নিজের ফোন নম্বরও নির্যাতিতার আত্মীয়দের কাছে দিয়ে এসেছেন এবং সাহায্যের প্রয়োজন হলে তাঁদের সরাসরি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছেন। "পরিবারের সদস্যরা আমাদের জানিয়েছেন যে, গত কয়েকদিন ধরে এত লোকজন দেখতে আসায় তাঁরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন, তাঁরা এও জানিয়েছেন যে, বিষয়টি নিয়ে বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করায় তাঁরা বিরক্ত হয়ে গেছেন।”
ঘটনার প্রতিক্রিয়ায়, জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের প্রধান প্রিয়াঙ্ক কানুনগো রবিবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের "অদক্ষ (পুলিশ) কর্মকর্তাদের" রক্ষা করার অভিযোগ করেছেন তিনি। সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলার সময় এনসিপিসিআর প্রধান বলেছেন, "মুখ্যমন্ত্রী সর্বদা এখানে অযোগ্য অফিসারদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন। রাজ্যে শিশুদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘অযোগ্য’ বলে মনে করি। তাঁর অবহেলার কারণে ঘটনা ঘটছে এবং শিশুরা মারা যাচ্ছে।" এর সঙ্গে তিনি এও বলেন, "পরে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের ভিত্তিতে, এই ঘটনাগুলিকে ধামাচাপা দেওয়া হয়।”
আরও পড়ুন-
এপ্রিলের শেষদিকে কোন শহরে ঊর্ধ্বমুখী জ্বালানির দাম? দেখে নিন মঙ্গলবারের পেট্রোল-দর
পর পর ৩ দিন ধরে নিম্নমুখী সোনা-রুপোর দাম, দেখে নিন মঙ্গলবারের লেটেস্ট আপডেট