সংক্ষিপ্ত
চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল যেন আরও একবার প্রমাণ করল যে, মানুষই শেষ কথা বলেন। আর মানুষের রায়ের ফলেই, টানা পাঁচবারের সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীকেও পরাজয় স্বীকার করতে হল।
চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল যেন আরও একবার প্রমাণ করল যে, মানুষই শেষ কথা বলেন। আর মানুষের রায়ের ফলেই, টানা পাঁচবারের সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীকেও পরাজয় স্বীকার করতে হল।
হারলেন তিনি। বহরমপুর থেকে টানা পাঁচবারের সাংসদ ছিলেন অধীর রঞ্জন চৌধুরী। কিন্তু এবার আর হল না। বহরমপুরকে কার্যত হাতের তালুর মতো যিনি চিনতেন, হারতে হল তাঁকেও। কথিত ছিল, বহরমপুর মানে অধীরের গড়। কোথাও কোনও আসন না পেলেও, বহরমপুর কংগ্রেসকে কোনওদিন খালি হাতে ফেরায়নি। রাজ্যের একাধিক জায়গায় কংগ্রেসের সংগঠন ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়লেও, যেন একা ক্যাপ্টেনের মতোই বহরমপুরকে আগলে রেখেছিলেন এই অধীর রঞ্জন চৌধুরী।
কিন্তু সব সমীকরণকে নস্যাৎ করে দিয়ে বহরমপুরের মানুষ রায় দিল অন্যদিকে। টানা পাঁচবারের জয়ী সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী পরাজিত হলেন। তাও কার কাছে? রাজনীতিতে নবাগত তৃণমূল প্রার্থী তথা প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানের কাছে।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে বাম-কংগ্রেস জোট হওয়ার ফলে, এই কেন্দ্রে বামেরা অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু ঘাসফুল শিবির এবার এই কেন্দ্রটি ছিনিয়ে আনার জন্য প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ইউসুফ পাঠানকে প্রার্থী করে। তাহলে কি তৃণমূল পুরোপুরি সংখ্যালঘু ভোটকেই টার্গেট করেছিল? জল্পনা চলছে রাজনৈতিক মহলে। অপরদিকে বিজেপি থেকে প্রার্থী হন সেখানকার জনপ্রিয় চিকিৎসক নির্মলচন্দ্র সাহা। ফলে, এবার বহরমপুরের রাজনৈতিক সমীকরণ বেশ জটিল ছিল।
আর এই জায়গাতেই ভোট কাটাকাটির সুফল নিল তৃণমূল। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, মোট ৫ লক্ষ ২৪ হাজার ৫১৬ ভোট পেয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী ইউসুফ পাঠান। আর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের ‘হাত’ শিবিরের প্রার্থী অধীর রঞ্জন চৌধুরীর ঝুলিতে ৪ লক্ষ ৩৯ হাজার ৪৯৪ ভোট। বিজেপির মোট ভোট ৩ লক্ষ ৭১ হাজার ৮৮৫। মানে ইউসুফ পাঠানের কাছে অধীরবাবু পরাজিত হয়েছেন ৮৫ হাজার ২২ ভোটে।
উল্লেখ্য, গত ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেই একলাফে অনেকটা ভোট কমে গিয়েছিল তাঁর। যে কেন্দ্র থেকে তিনি ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে সাড়ে তিন লক্ষেরও বেশি ভোটে জিতেছিলেন, সেই কেন্দ্র থেকেই ২০১৯ সালের নির্বাচনে জেতেন ৮৭ হাজার ভোটে। অর্থাৎ, একলাফে এতটা ভোট নেমে যাওয়া নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ তো বটেই এবং ইঙ্গিতবহও ছিল। আর এবার একেবারে হার। এর কারণ অনেক কিছুই হতে পারে। তবে রাজ্যে তৃণমূল সরকারের জনকল্যাণমূলক প্রকল্প এবং বঙ্গে বিজেপির উত্থান, এক্ষেত্রে অন্যতম উল্লেখযোগ্য দুটি বিষয় বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
মঙ্গলবার ভোটের ফলপ্রকাশের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী। সেখানে তিনি বলেন, “আমার কোনও অভিযোগ নেই। কোনও অজুহাত দিতে চাই না। হেরেছি মানে হেরেছি। তৃণমূল প্রার্থী ইউসুফ পাঠানকে শুভেচ্ছা, তাঁর চলার পথ সুগম হোক।”
তাঁর মতে, “তবে একটা কথাই বলব। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন ক্রমশ একটা সাম্প্রদায়িক বিভাজনের পথে এগিয়ে চলেছে। উদার এবং ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির জন্য পশ্চিমবঙ্গ ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। এটা আমার পর্যবেক্ষণ। যদি আমার ওপর রাগ থাকে তাহলে আমার ওপরে বদলা নিন। কিন্তু কোনও কংগ্রেস সমর্থকের গায়ে হাত দেবেন না।”
অধীর আরও দাবি করেন, “তৃণমূলের সঙ্গে আমাদের কোনও জোট নেই এই রাজ্যে। বিজেপির কোনও সাংগঠনিক ভিত্তি নেই। শুধু মোদী হাওয়া আছে। রাজ্যকে বাঁচাতে গেলে, বাম এবং কংগ্রেস জোট দরকারি। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সেই জোট এবার সফল হয়নি। আর আমরা আগেই বলেছিলাম, এইসব এক্সিট পোল গদি মিডিয়ার বানানো। আমরা জানতাম যে, ২৯৫টা আসন পাবো।”
তাঁর কথায়, “রাহুল গান্ধী আমার নেতা। তিনি প্রমাণ করেছেন, পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই। তাঁর জন্যই আজ মোদী বিরোধী এই হাওয়া তৈরি হয়েছে গোটা দেশে। ঘৃণাকে দূরে সরিয়ে ভালোবাসা ছড়িয়েছেন রাহুল গান্ধী।”
সবমিলিয়ে, বহরমপুর এবার আর অধীরগড় রইল না। বলা যেতে পারে, এক অভিজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বের পদস্খলন। আদৌ এই পরাজয় বহরমপুরবাসীর জন্য ভালো না খারাপ হল, উত্তর দেবে সময়।
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।