সংক্ষিপ্ত

৩ ডিসেম্বর ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ের নরোত্তমপুর গ্রাম থেকে লালনকে গ্রেফতার করে সিবিআই। পরদিন তাকে রামপুরহাট মহকুমা আদালতে তুলে ছয়দিনের হেফাজতে নেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। পরে আরও তিনদিনের হেফাজতে নেওয়া হয় লালনকে।

লালনের মৃত্যু রহস্যের তদন্ত করতে এবার জাহাঙ্গীর শেখকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাইকোর্টের নির্দেশের কপি বুধবার রামপুরহাট আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য দায়রা বিচারক সৌভিক দে-র হাতে জমা দেয় সিআইডি। বিচারকের অনুমতি নিয়ে জেলের মধ্যে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি। তবে এখনও লালন শেখের বাড়িতে থাকা সিসিটিভির হার্ডডিস্ক পাওয়া যায়নি। ওই হার্ডডিস্কেই গণহত্যার প্রমান লুকিয়ে রয়েছে বলে মনে করছে সিবিআই।

প্রসঙ্গত ২১ মার্চ রাত্রি সাড়ে আটটা নাগাদ ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে রামপুরহাট বগটুই মোড়ে বোমা মেরে খুন করা হয় বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের ভাদু শেখকে। ওই খুনের সময় ভাদুর কাছাকাছি ছিলেন তার ছায়া সঙ্গী লালন শেখ ওরফে বড় লালন। ঘটনার পরেই খুনের বদলা নিয়ে বগটুই গ্রামে একাধিক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরদিন সকালে আটটি পোড়া মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দুজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তারাও মারা যান।

ঘটনার পরদিন সকাল থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় লালন। হাইকোর্টের নির্দেশে দুটি ঘটনার তদন্তভার হাতে নিয়ে সিবিআই লালনের বাড়ি সিল করে দেয়। কিন্তু লালনের বাড়িতে থাকা হার্ডডিস্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি। ৩ ডিসেম্বর ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ের নরোত্তমপুর গ্রাম থেকে লালনকে গ্রেফতার করে সিবিআই। পরদিন তাকে রামপুরহাট মহকুমা আদালতে তুলে ছয়দিনের হেফাজতে নেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। পরে আরও তিনদিনের হেফাজতে নেওয়া হয় লালনকে।

এদিকে ৬ ডিসেম্বর গ্রেফতার করা হয় মৃত ভাদু শেখের ভাই জাহাঙ্গীর শেখকে। তাকেও পরদিন আদালতে তুলে ছয়দিনের হেফাজতে নেয় সিবিআই। দুজনকে ১২ ডিসেম্বর ফের আদালতে তোলার কথা ছিল। কিন্তু তার আগের দিন লালনের রহস্য মৃত্যু তদন্ত অনেকটা ব্যহত হবে বলে করছে সিবিআই। ঘটনার দিন সিবিআই ক্যাম্পে লালনের সঙ্গে ছিলেন জাহাঙ্গীরও। ফলে হাইকোর্টের নির্দেশে লালনের মৃত্যুর ঘটনার দায়িত্ব নেওয়া সিআইডি এদিন জেলে গিয়ে জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সরকারি আইনজীবী সুরজিৎ সিনহা বলেন, “ভিডিও গ্রাফির মাধ্যমে জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেই ভিডিও সিডি হাইকোর্টে পাঠানো হবে”।

এদিকে এদিন দুপুরের দিকে রামপুরহাটে সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পে যান সিআইডির ফরেনসিক দল। তাঁরা বাথরুমের দরজা লাগানো ছিল কিনা সেটা পরীক্ষা করেন। যে পাইপে লালন গলায় গামছা জড়িয়ে ঝুলছিল তার ওজন ক্ষমতা দেখেন বালির বস্তা ঝুলিয়ে। ওই পাইপে আত্মহত্যা করা যায় কিনা তার তদন্ত করছেন ফরেনসিক দলের সদস্যরা।

এদিকে লালনের মৃতদেহ পুনরায় কলকাতায় নিয়ে গিয়ে ময়না তদন্তের সিবিআইয়ের আবেদন খারিজ করলেন লালনে স্ত্রী রেশমা বিবি। হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতায় নিয়ে গিয়ে লালনের মৃতদেহ ময়না তদন্ত করা যাবে। তবে সেক্ষেত্রে লালনের স্ত্রীর অনুমতি লাগবে। কিন্তু খবর লেখা পর্যন্ত রেশমা বিবি মৃতদেহ কবর থেকে তোলার কোন অনুমতি দেয়নি। তিনি বলেছেন, “আমরা আর কবর থেকে স্বামীর মৃতদেহ তুলতে দেব না। ইসলামে আমাদের সে রকম কোন কথা বলা নেই”। তিনি আরও বলেন, “আইনজীবী রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে দিয়ে অভিযোগ লেখান হয়”। রণজিৎবাবু সিউড়ি জেলা আদালতের সরকারি আইনজীবী ছিলেন দীর্ঘদিন।