সংক্ষিপ্ত

কেউ লিখেছে মাকে হারানোর কথা। কেউ বাবার আর্থিক সামর্থের কথা, কেউ বা মনের ইচ্ছে পূরণ না হওয়ার কথা। মুখ ফুটে বলতে না পারা চাপা কষ্টই যেন বেরিইয়ে এল স্কুলের ড্রপবক্সের চিরকুটে।

কচিকাঁচাদের মনের কথা জানতে স্কুলে ব্যবস্থা করা হয়েছিল ড্রপবক্সের। সেই বাক্স খুলতেই স্তম্ভিত শিক্ষক-শিক্ষিকারা। ড্রপবক্স জুড়ে কেবলই বিষাদের ছায়া। আঁকাবাঁকা হাতের লেখায় তাঁদের মনের কষ্টের কথাই উজার করে দিয়েছে খুদে পড়ুয়ারা। যে কথা কেউ শোনে না, কেউ জানতে চায় না। সেই কথাই যেন ড্রপবক্সের মাধ্যমে চিৎকার করে বলতে পেরেছে তারা। কেউ লিখেছে মাকে হারানোর কথা। কেউ বাবার আর্থিক সামর্থের কথা, কেউ বা মনের ইচ্ছে পূরণ না হওয়ার কথা। মুখ ফুটে বলতে না পারা চাপা কষ্টই যেন বেরিইয়ে এল স্কুলের ড্রপবক্সের চিরকুটে।

সম্প্রতি মিড ডে মিলের তদন্তে স্কুলে স্কুলে অভিযান চালাচ্ছে কেন্দ্রের প্রতিনিধি দল। সেন্ট্রাল টিম আসার আগে রাজ্যর স্কুলগুলিকে বেশ কিছু নির্দেশিকা দিয়েছিল কেন্দ্রের প্রতিনিধি দল। সেই তালিকায় ছিল পড়ুয়াদের জন্য ড্রপবক্সের ব্যবস্থা করার কথাও। সেই মতো ড্রপবক্সের ব্যবস্থা করা হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘির একটি স্কুলে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য। সেইমতো দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘির একটি স্কুলে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছিল ড্রপ বক্সের। পড়ুয়াদের বলা হয় চিরকুটে নিজের মনের কথা লিখে এই বাক্সে ফেলার কথা। কিন্তু সেই ড্রপবক্স খুলতেই যা উঠে এল তা দেখে রীতিমত চিন্তায় শিক্ষক শিক্ষিকারা। সেই ড্রপবক্সে পড়ুয়াদের মনের চাপা কষ্ট উঠে এসেছে।

কী লিখেছে পড়ুয়ারা?

ড্রপবক্স খুলতেই উঠে এল খুদেদের মনের কথা। তাদের না বলতে পারা চাপা কষ্টের কথা। কেউ লিখেছে 'আমরা খুব গরিব'। কেউ বা লিখেছে,'আমার মা নেই, আমার বন্ধুর মায়েরা কত ভালোবাসে।' কেউ আবার লিখেছে,'বাবাকে পেন্সিল বক্স কিন দিতে বলেছিলাম কিন্তু বাবার কাছে টাকা নেই।' কেউ আবার আফশোশ করে লিখেছে,'আমি নাচ শিখতে চাই, কিনতি বাড়িতে কেউ ইচ্ছের আমল দেয়নি।' কেউ আবার লিখেছে,'আমি বাড়িতে থাকি, কিন্তু আমাকে কেউ ভালোবাসে না, আমি কাউকে বলতে পারি না, খুব খারাপ লাগে'। কেউ আবার লিখেছে,'আমি আমার মাকে খুব মিস করি, আমার মার এত কাজ সেই জন্য় আমি আমার মাকে কাছে পাই না।'

পড়ুয়াদের এই সকল চিরকুট চিন্তা বাড়িয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে অভিভাবকদের। এই কাঁচা বয়সে এত কষ্টের কথা কীভাবে চেপে রাখছেন পড়ুয়ারা? এর কী প্রভাবই বা পড়ছে তাঁদের মনের উপর। এই ধরণের প্রায় ডজন খানেক চিরকুট জমা পড়েছে।

কী বলছেন মনোবিদরা?

মনোবিদদের মতে বাচ্চাদের মনের কথা শুদু জানলেই হবে না। তাঁদের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন। নিয়মিত তাঁদের সঙ্গে কথা বলাকে রুটিনের মধ্যে রাখতে হবে। প্রয়োজনে স্কুলেই কথা শোনার ক্লাসের ব্যবস্থা করতে হবে। বাচ্চাদের মনের কথা শুধু জানলেই হবে না তাঁদের সমস্যার সমাধানও করতে হবে।