সংক্ষিপ্ত

‘পশ্চিমবঙ্গের জন্য আলাদা, অথচ ত্রিপুরার জন্য আলাদা চিন্তাধারা কেন?’ শুভেন্দু অধিকারী, জন বার্লা, দিলীপ ঘোষ সহ বিজেপির একাধিক নেতার কাছে ‘বিভাজন সংক্রান্ত’ সিদ্ধান্তের বিষয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্পষ্ট জবাব চাইল তৃণমূল।

সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসে নেতৃত্ব বুধবার বিজেপির ‘ভণ্ডামি’-কে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে পৃথক রাজ্যের দাবি করে বিজেপি, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের অনুভূতিতে চাগাড় দিয়ে আগুন নিয়ে খেলা করছে। আরেকদিকে অসম এবং ত্রিপুরার বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে পৃথক রাজ্যের দাবি খারিজ করে দিয়ে তারা বলছে যে, ওখানে পৃথক রাজ্য হলে অন্য রাজ্যের কাছে সেটি "প্যান্ডোরার বাক্স" খুলে দেওয়ার মত ব্যাপার হয়ে যাবে।’ তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই বিষয়টিতে বিজেপির অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময়সীমা দেওয়া হয়েছে।

বুধবার শিলিগুড়িতে সাংবাদিক সম্মেলনে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব বলেছেন, “ত্রিপুরা ও অসমের মুখ্যমন্ত্রী, উভয়েই বৃহত্তর তিপরাল্যান্ড তৈরির বিষয়ে তিপরা মোথার দাবিগুলি প্রত্যাখ্যান করেছেন। আমরা বিজেপির ভণ্ডামিকে তুলে ধরতে চাই। একদিকে তারা বাংলা ভাগ করতে চায় এবং উত্তরবঙ্গের জন্য আলাদা রাজ্য দাবি করে, অন্যদিকে সেই বিজেপি নেতারাই আবার দাবি করেন যে বৃহত্তর তিপরাল্যান্ডের দাবি অন্য রাজ্যের কাছে একটি প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দেবে" (অর্থাৎ খারাপ বিষয়গুলি রাজ্যের অন্দরে ছড়িয়ে পড়বে)।

বিজেপিকে 'দ্বিচারিতায় বিশ্বাসী' দল বলে দাবি করে, দলের বরিষ্ঠ নেতা উদয়ন গুহ বলেছেন, "পশ্চিমবঙ্গের জন্য আলাদা এবং ত্রিপুরার জন্য অন্য চিন্তাধারা কেন? বাংলা বিজেপির প্রধান সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপির জাতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক এবং জন বার্গাকে ৪৮ ঘণটার মধ্যে এই বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে"।

তৃণমূল নেতারা নিজেদের সুবিধার জন্য, জনসাধারণের অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে, বাংলায় বিচ্ছিন্নতাবাদী অনুভূতি উস্কে দেওয়ার জন্য বিজেপি নেতৃত্বের নিন্দা করেছেন। নেতা উদয়ন গুহ আরও বলেছেন, "২০২২ সালের মে মাসে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যখন জনসভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন তখন নকশালবাড়ির বিজেপি বিধায়ক আনন্দময় বর্মন একই মঞ্চ থেকে উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য হিসাবে বিভক্ত করতে চেয়েছিলেন"। তিনি আরও বলেছেন,কার্শিয়াংয়ের বিধায়ক বিষ্ণু প্রসাদ শর্মাও কয়েকদিন আগে একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন।

সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসে নেতৃত্বও জোর দিয়ে বলেছেন যে দলের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বদা এই বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান বজায় রেখেছেন যে তিনি বাংলাকে ভাগ করতে দেবেন না। নেতা উদয়ন গুহ প্রশ্ন তুলেছেন, "যদি আনন্দময় বর্মণ, বিষ্ণু শর্মা, জন বার্গা, এবং নিশীথ প্রামাণিক তাদের দলের সমর্থন ছাড়াই পৃথক রাজ্যের বিষয়ে বিবৃতি দিচ্ছেন, তাহলে বিজেপি কেন এই দোষী নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না?"।

২০২১ সালের অগাস্টে, জন বার্লা দাবি করেছিলেন যে 'উত্তরবঙ্গ'-কে পৃথক রাজ্যের দাবি আসলে জনগণের দাবি। বিভিন্ন জায়গা থেকে সমালোচনা আসা সত্ত্বেও, তিনি অন্যান্য বিজেপি নেতাদের সঙ্গে নিয়ে এই ধরনের বিবৃতি দিয়ে চলেছেন।

বুধবারের সাংবাদিক সম্মেলনে কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক, দার্জিলিং (সমতল) জেলা সভাপতি পাপিয়া ঘোষ, দার্জিলিং (পার্বত্য) জেলা সভাপতি শান্তা ছেত্রী, উত্তরবঙ্গের প্রবীণ ও রাজ্য মন্ত্রী উদয়ন গুহ, উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি কানাইলাল আগরওয়াল, জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি মহুয়া গোপ, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সভাপতি মৃণাল সরকার এবং আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি প্রকাশ চিক বারিক-সহ বরিষ্ঠ সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসে নেতৃত্ব সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

দার্জিলিং (পার্বত্য) জেলা সভাপতি শান্তা ছেত্রী বলেছেন, “অসমের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রমাণ করে যে বিজেপিতে কোনও শৃঙ্খলা নেই কারণ উত্তরবঙ্গে তাদের দলের নেতারা অসম এবং ত্রিপুরার বিজেপি নেতাদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা পথ নিচ্ছেন। বাংলার বিজেপি নেতাদের সাধারণ মানুষের জন্য কোনো উন্নয়ন না করে তাঁদের শুধু মিথ্যা কথা বলা এবং ভোট পাওয়ার উদ্দেশ্যে তাঁদের অনভূতি নিয়ে খেলা করার জন্য মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।

কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক, ইতিমধ্যে, বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার কাছে স্পষ্ট জানতে চেয়েছিলেন যে তারা বিভাজনের কোন পক্ষে আছে না বিপক্ষে আছে? জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক জানতে চেয়েছেন, "বিজেপি নেতারা কি নিশীথ প্রামাণিকের পক্ষে আছেন যিনি গ্রেটার কোচবিহার তৈরিকে সমর্থন করেন নাকি তারা হিমন্ত বিশ্ব শর্মার পক্ষে, যিনি বৃহত্তর তিপরাল্যান্ডের প্রয়োজনকে উড়িয়ে দিয়েছেন?"

কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক আরও বলেছেন যে কীভাবে বিজেপি সর্বদা নির্দোষ রাজবংশীদের অনুভূতি নিয়ে খেলেছে, তাদের সুবিধার জন্য কাজ করার পরিবর্তে তাদের শুধুমাত্র ভোট-ব্যাঙ্কের সম্প্রদায় হিসাবে ব্যবহার করেছে।

দার্জিলিং (সমভূমি) জেলা সভাপতি পাপিয়া ঘোষ উল্লেখ করেছেন যে কীভাবে বিজেপি সর্বদা সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈষম্য করে। তিনি আরও বলেছেন, "জাতি, সংস্কৃতি এবং ধর্মের ভিত্তিতেই বিজেপি সর্বদা মানুষের মধ্যে বৈষম্য করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাকে শক্তিশালী করেছেন, যেখানে বিজেপি সর্বদা "ভাগ-ও-শাসন" নীতি অবলম্বন করেছে। আমরা বৈষম্যে বিশ্বাস করিনা এবং এই ধরনের ভণ্ডদের সহ্যও করবো না"।

এদিকে উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি কানাইলাল আগরওয়াল নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রসঙ্গ তুলেছেন। তিনি বলেছেন, “বিজেপি কখনই অসমে সিএএ নিয়ে কথা বলে না, তবে যখনই তারা বাংলায় থাকে তখনই এর উপর জোর দেয়। কেন তাদের এই দ্বিচারিতা?”

কীভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস কখনই মানুষের প্রতি বৈষম্য করেন না তা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, “দিদি প্রমাণ করেছেন কীভাবে বিভিন্ন সম্প্রদারের মানুষদের একত্রে, শান্তি ও সম্প্রীতির সঙ্গে আবদ্ধ রাখা যায়। রাজ্য সরকার বিরসা মুণ্ডার জন্মবার্ষিকীতে ছুটি ঘোষণা করেছে, এমনকি রাজবংশী নেতা ঠাকুর পঞ্চানন বর্মাকেও শ্রদ্ধা জানিয়েছে। আমাদের মা, মাটি, মানুষের সরকার সর্বদা ঐক্যে বিশ্বাস করে এবং সেটাই করবে”

বুধবারে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সভাপতি মৃণাল সরকার বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খানের নাম অভিযোগ এনেছেন, যিনি বারবার জঙ্গলমহল এলাকার জন্য আলাদা রাজ্যের দাবি করেছেন। জেলা সভাপতি মৃণাল সরকার বলেছেন, “বিজেপি খালি ভাবে কীভাবে আমাদের জনগণকে ভাগ করা যায়, কীভাবে আমাদের জমি ভাগ করা যায়। ব্রিটিশদের মতো, বিজেপি নেতারা তাদের 'বিভক্ত করুন এবং শাসন করুন' নীতি অনুসরণ করছে”

আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি প্রকাশ চিক বারাইকও বিজেপি নেতাদের ভথামি তুলে ধরেন। জেলা সভাপতি প্রকাশ চিক বারাইক বলেছেন, “আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির উন্নয়নের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, কিন্তু বিজেপি নেতারা তাদের ভণ্ডামি চালিয়ে যাচ্ছেন এবং বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করার সময় পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করে চলেছেন। আমরা চাই আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তারা এই বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করুক

আরও পড়ুন-
ধ্বংসের নীচে ভাইকে আগলে শুয়ে রয়েছে ছোট্ট দিদি, সিরিয়ার ভিডিয়ো দেখে চোখে জল সারা বিশ্বের
গ্রেফতার হওয়ার পর ফের সম্পর্ক জুড়ে নেওয়ার অনুরোধ করছেন স্বামী আদিল, সংবাদমাধ্যমের কাছে বিস্ফোরক রাখি সাওয়ান্ত
বাংলার ইতিহাসে এটা চূড়ান্ত নোংরামি: বিধানসভায় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বিজেপির পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনায় ফিরহাদ, মদন, চিরঞ্জিত