হিমন্ত বিশ্ব শর্মা-- অমস তথা উত্তর পূর্ব ভারতের রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। একজন কংগ্রেসের ম্যান থেকে বিজেপির জনপ্রতিনিধি তথা মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ওঠার গল্পের প্রধান নায়ক হলেন হেমন্ত বিশ্ব শর্মা । ৫২ বছরের হেমন্ত বিশ্ব শর্মার রাজনৈতিক জীবনও কম নাটকীয় নয়। সর্বানন্দ সোনোয়ালকে সরিয়ে দিয়ে আগামী দিনে তিনি অসমের মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসতে চলেছেন। বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল তাঁর নাম প্রস্তাব করেন। সর্বোসম্মতভাবে তাঁকেই বেছে নেওয়া হয়েছে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে। সোমবার অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন হেমন্ত বিশ্ব শর্মা।
কংগ্রেস ম্যান হেমন্ত বিশ্ব শর্মা
কংগ্রেসের হাত ধরেই রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন হেমন্ত বিশ্ব শর্মা। ১৯৯০ সালে কংগ্রেসে নাম লেখান তিনি। ২০০১ সালে জালুকবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে অসমের বিধানসভায় প্রবেশ করেন। তারপর থেকে এপর্যন্ত জালুকবাড় বিধানসভা কেন্দ্রের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক অটুট। তবে ২০০১,০৬ ও ১১ সাল- পর্যন্তই এই কেন্দ্রে তিনি কংগ্রেসের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কংগ্রেসের থাকাকালীন কৃষি অর্থসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। তবে ২০১৪ সালে তৎকালীন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিধানসভা ত্যাগ করেন হেমন্ত বিশ্ব শর্মা। পরের বছরই কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিন্ন হয়।
রাহুল গান্ধী ফ্যাক্টর
বিধানসভা ত্যাগের পর সনিয়া গান্ধী ও আহমেদ প্যাটেল হেমন্ত বিশ্ব শর্মাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন অসমের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হবেন তিনি। কারণ সেই সময় তাঁর পিছনেই ছিল অসমের অধিকাংশ বিধায়কের সমর্থন। কিন্তু হেমন্ত বিশ্বশর্মার উচ্চাভিলাসের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ান রাহুল গান্ধী। রাজনৈতিক মহলের জল্পনা বিশ্ব শর্মাকে মুখ্যমন্ত্রী হতে দেননি রাহুল।
বিজেপিতে গিয়েও সফল হেমন্ত
২০১৫, শিবির বদলে ফেলেন হেমন্ত বিশ্ব শর্মা। ২০১৬ সালে অসমে বিজেপিকে জেতানোই ছিল হেমন্ত বিশ্ব শর্মার কাছে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও সেই সময় বিজেপির মুখ ছিলে সর্বানন্দ সোনোয়াল।কিন্তু ধীরে ধীরে পদ্ম বনে নিজের জায়গা তৈরি করে নিচ্ছিলেন হেমন্ত বিশ্ব শর্মা। কংগ্রেসের ভোট কৌশল কাজে লাগিয়েই হেমন্ত বিজেপিকে জয় এনে দিয়েছিলেন। বিজেপির কংগ্রেস মুক্ত ভারত মিশনে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা অন্যতম নাম। কারণ ২০১৯ র লোকসভা নির্বাচনেও বিজেপির হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। শুধু অসম নয় গোটা উত্তর পূর্ব ভারতে বিজেপির উত্থানের অন্যতম কারিগর হেমন্ত বিশ্ব শর্মা। আর ২০২১ এ অসম বিধানসভা নির্বাচন বিজেপির কাছে যেমন ছিল মর্যাদার লড়াই তেমনই বিশ্ব শর্মার কাছে ছিল চ্যালেঞ্জ। কারণ বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম থেকে বিজেপি ঘোষণা না করলেও তিনি ছিলেন মুখ। আর নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন লাঘু হওয়ায় অসমে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয়েছিল। কঠিন মাটিতে দাঁড়িয়ে সাফল্য এনে দিয়েছিলেন হেমন্ত। আর তারই স্বীকৃতি দিল বিজেপি। কংগ্রেসে বঞ্চিত হয়েও বিজেপির ঘরে রীতিমত সম্মানিত হেমন্ত বিশ্ব শর্মা।