১৯৭১ সালের ১২ এবং ১৩ অগাস্ট দুই দিন তিনরাত মিলিয়ে শতাধিক তরুণকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। শনিবার মৃণাল সেনের জন্মদিনে ফিরে দেখা যাক, কেমন ছিল একাত্তরের কলকাতার ফ্রেমটা, কিছু কি বদলাল বাইশে এসে।
শনিবার বাংলার কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক মৃণাল সেনের জন্মদিন। জীবনকালে একের পর এক মছনমুগ্ধকর ছবি বানিয়েছেন। তার মধ্য়ে অবশ্যই অন্যতম 'কলকাতা ৭১'। মাঝে কেটে গিয়েছে ৫১ টা বছর। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তৈরি মৃণাল সেনের এই ছবি আলাদা আঙিনা তৈরি করে গিয়েছে। মোট ৫ টি ছোট গল্পের কোলাজ এই ছবিটা। যেখানে ১৯৩৩ থেকে ১৯৭১ সময়সীমা ফ্রেমে ধরা পড়েছে। গোটা জীবনকালে একের পর ছবি তৈরি পর, শেষ জীবনে রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন তিনি। এদিন তার জন্মদিনে ফিরে দেখা যাক, কেমন ছিল একাত্তরের কলকাতার ফ্রেমটা, কিছু কি বদলাল বাইশে এসে।
এই ছবির শুরুতেই আগের ছবির ইন্টারভিউ- কন্টিনিউয়েশন, যার নাম 'বিচারালয়।' দ্বিতীয় গল্প মানিক বন্দ্য়োপাধ্যায়ের 'আত্মহত্যার অধিকার'। প্রবোধ কুমার স্যানালের লেখা তৃতীয় গল্প 'অঙ্গার।' চতুর্থ গল্প সমরেশ বসু লেখা অবলম্বনে 'এসমাগলার। 'পঞ্চম গল্প অজিতেশ বন্দ্য়োপাধ্যায়ের 'অভিজাতদের পার্টি।' এই সব কটি গল্প ধরে রাখছে এক তরুণ, যে ১৯৭১ সালে পুলিশের তাড়া খেয়ে নকশালপন্থী যুবকদের মতো ময়দানে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে। যুগযুগ ধরে শোষিত মানুষের প্রতিনিধি সে। মৃণাল সেনের মতে,' এই ছবিটা হল ক্রোধের ধারাবাহিক ইতিহাস।' শোষণের ইতিহাস, বঞ্চনার ইতিহাস, দারিদ্রতার ইতিহাস নিয়ে কলকাতা ৭১ হল মৃণাল সেনের প্রথম সরাসরি রাজনৈতিক ছবি।
আরও পড়ুন, মৃত্যুর আগে শেষ কার সঙ্গে কথা বলেছিলেন অর্জুন ? মোবাইলের পাসওয়ার্ড খুঁজছে লালবাজার
কলকাতা ৭১, সেই অর্থে সিনেমা নয়, বাস্তবের কলকাতা। ১৯৭১ সালের কলকাতা, যখন কলকাতার ঝকঝকে উজ্জ্বল তরুণ প্রজন্ম ঘোষণা করেছিল, 'সত্তর দশক মুক্তির দশক।' আর সেই 'মুক্তি' আসতে পারে একমাত্র 'সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্য়মে।' সেই সময়টাই কলকাতা ৭১ ছবিতে ধরা পড়েছে। সেসময়, পুলিশি হত্যার খতিয়ান নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক রয়েছে রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে বই পাতা হয়ে সেলুলয়েডে। ১৯৭০ সালের ১৯ নভেম্বর কুখ্যাত বারাসাত কিলিং-এ পুলিশের গুলিতে ১১ জন তরুণের মৃত্যু হয়। ১৯৭১ সালের ১২ এবং ১৩ অগাস্ট বরাহনগর এবং কাশীপুরে দুই দিন তিনরাত মিলিয়ে শতাধিক তরুণকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
আরও পড়ুন, দক্ষিণ দিনাজপুরে আদিবাসী মহিলাকে 'ধর্ষণ করে খুন', আজই ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন সুকান্তরা
প্রায়শই দেখা যায় তখন, ময়দানে পিঠে গুলি বিদ্ধা তরুণের দেহ। এমন উদাহরণ অজস্রই রয়েছে। নকশাল উচ্ছেদের নামে পুলিশি অত্যাচার এতটাই সেসময় বেড়ে গিয়েছিল যে, শহরটাকে পরিণত করেছিল 'দুঃস্বপ্নের নগরীতে।' তবে এবার প্রায় ৫১ বছরের মাথায় দাড়িয়ে কলকাতায় সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি না চললেও রাজনৈতিক হিংসা অনেকাংশেই বৃদ্ধি পেয়েছে। শাসকদল এবং বিরোধীদের মাঝে কাঁদা ছোড়াছোড়ি থামেনি। কলকাতায় না হলেও বগটুই, হাঁসখালির মতো ঘটনা গুলি বাইশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও শাসকদলের দাবি, শুধু পশ্চিমবঙ্গ কেন, উত্তরপ্রদেশের দিকে আলোকপাত করা হোক। যদিও এতসবের মাঝে, 'উলুখাগড়ারা'-ই ব্রাত্য হয়ে উঠছে নাতো, প্রশ্ন উঠেছে।